স্পোর্টস ডেস্ক : বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে প্রথম গোল পেলেন মেসি, দলকে দেখালেন জয়ের পথ। ঢিমেতালে শুরু ম্যাচে ছন্দ খুঁজে ফেরা দলকে দারুণ এক গোলে পথ দেখালেন লিওনেল মেসি। প্রতিপক্ষের ভুলে পরে মিলল আরেক গোল। আর্জেন্টিনার অনায়াস জয়ের দিকে এগিয়ে চলা ম্যাচে হঠাৎ নাটকীয়তা, ব্যবধান কমিয়ে আক্রমণে ধার বাড়ায় অস্ট্রেলিয়া।
একেবারে শেষ সময়ে তো গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল তারা। বিশ্বস্ত এমিলিয়ানো মার্তিনেস আর কোনো বিপদ হতে দিলেন না। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে জায়গা করে নিল লিওনেল স্কালোনির দল।আল রাইয়ানের আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে শনিবার রাতে শেষ ষোলোর দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে আর্জেন্টিনা।
দারুণ এই জয়ের ম্যাচে অসাধারণ এক মাইলফলকও স্পর্শ করলেন মেসি; গড়লেন ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ক্যারিয়ারে এক হাজারতম ম্যাচ খেলার কীর্তি। তার গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর প্রতিপক্ষের ভুলের সুযোগে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন হুলিয়ান আলভারেস। শেষ দিকে এনসো ফের্নান্দেসের আত্মঘাতী গোলে আশা জাগে অস্ট্রেলিয়ার। তবে অঘটনের বিশ্বকাপে নতুন কোনো অঘটনের জন্ম দিতে পারেনি তারা।
প্রত্যাশিতভাবে ম্যাচের শুরু থেকে বল দখলে আধিপত্য করে চোটের কারণে আনহেল দি মারিয়াকে ছাড়া খেলতে নামা আর্জেন্টিনা। প্রথম ৩০ মিনিটের দুই-তৃতীয়াংশ সময় পজেশন রেখে আক্রমণ শাণানোর চেষ্টা করে যায় তারা। অবশ্য অধিকাংশ সময়ই খেলা হয় মাঝমাঠ কেন্দ্রিক।
মেসিরা যা কয়েকবার আক্রমণে উঠতে পারলেন, তার সবই কিছুটা বোঝাপড়ার ঘাটতি, কিছু এলোমেলো শট আর বাকিটা প্রতিপক্ষের জমাট রক্ষণে ভেস্তে গেল। ঘর সামলে প্রতি-আক্রমণের কৌশল নেওয়া অস্ট্রেলিয়া সেই চেষ্টাতে দুটি কর্নারও আদায় করে নেয়।গোলের প্রথম সুযোগ বলতে ২৯তম মিনিটে একটি হাফ-চান্স পায় অস্ট্রেলিয়া। তবে সবার উপরে হ্যারি সৌটার লাফিয়ে উঠেও ঠিকঠাক হেড করতে পারেননি।
৩৪তম মিনিটে ডান দিক দিয়ে ওঠা আক্রমণে আলেহান্দ্রো গোমেস ফাউলের শিকার হলে ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। মেসির শট রক্ষণে প্রতিহত হলেও বল আবারও যায় তাদের পায়ে। এরপর সতীর্থের পা ঘুরে বক্সে বল পেয়ে নিখুঁত শটে সামনে দুই খেলোয়াড়ের মধ্যে দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন পিএসজি তারকা।বিশ্বকাপে গোলের হিসাবে কিংবদন্তি দিয়েগো মারাদোনাকে ছাড়িয়ে গেলেন মেসি; তার গোল হলো ৯টি, নকআউট পর্বে প্রথম।
জাতীয় দলের হয়ে এই নিয়ে সবশেষ আট ম্যাচে ১৩ গোল করলেন মেসি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে মোট ১৬৯ ম্যাচে ৯৪টি।
দ্বিতীয়ার্ধের পঞ্চম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারত। তবে ডি-বক্সের মুখে সতীর্থের পাস পেয়ে শট নিতে গিয়ে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন মেসি। তিন মিনিট পর নিজেদের ভুলে বিপদে পড়তে বসেছিল আর্জেন্টিনা। নিজেদের সীমানায় নিকোলাস ওতামেন্দির পায়ে বল, কোনো হুমকি ছিল না। কিন্তু কী বুঝে প্রতিপক্ষের একজনকে অলস পায়ে এগিয়ে আসতে দেখে আলতো করে ব্যাকপাস দেন বেনফিকা ডিফেন্ডার। গোলরক্ষক মার্তিনেস দ্রুত এগিয়ে এসে বিপদমুক্ত করেন।
এর পরপরই হাস্যকর ভুল করে বসেন অস্ট্রেলিয়া গোলরক্ষক এবং সেই ভুলে খেসারতও দেন তিনি। বক্সে নিজের পায়ে বল, কিন্তু সামনে রদ্রিগো দে পলের ছুটে আসা দেখে মুহূর্তের জন্য যেন দিশেহারা হয়ে গেলেন ম্যাট রায়ান। সেই সুযোগে চোখের পলকে তার পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে জালে পাঠান আলভারেস।
আর্জেন্টিনার ষষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে শুরুর একাদশে খেলা প্রথম দুই ম্যাচেই জালের দেখা পেলেন ম্যানচেস্টার সিটির এই ফরোয়ার্ড, ২০০৬ সালে এরনান ক্রেসপোর পর প্রথম।ম্যাচের ঘড়ির কাঁটা তখন ৭৫ মিনিট পেরিয়ে গেছে, মাঠে আধিপত্য ধরে রেখে সহজ জয়ের পথেই হাঁটছে আর্জেন্টিনা, তখনই নাটকীয়তা। এই পর্যন্ত গোলের উদ্দেশ্যে একটি প্রচেষ্টাই নিতে পেরেছিল অস্ট্রেলিয়া, সেটিও লক্ষ্যভ্রষ্ট।
৭৭তম মিনিটে সৌভাগ্যের ছোঁয়ায় ব্যবধান কমিয়ে লড়াই জমিয়ে তোলে তারা। ক্রেইগ গুডউইনের জোরাল শট এনসো ফের্নান্দেসের মুখে লেগে দিক পাল্টে দূরের পোস্ট দিয়ে জালে জড়ায়। চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষকের।
গোল পেয়ে যেন উজ্জীবিত হয়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। চার মিনিট পর দারুণ নৈপুণ্যে একজনকে কাটিয়ে আরও দুজনের মধ্যে দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন মিডফিল্ডার অ্যাজডিন রুস্টিক। দারুণ এক ট্যাকলে তাকে আটকে দেন ডিফেন্ডার লিসান্দ্রো মার্তিনেস। ৮৯তম মিনিটে অনিশ্চয়তার ইতি টানার সুবর্ণ সুযোগ পান লাউতারো মার্তিনেস।
তবে মেসির পাস বক্সে ফাঁকায় পেয়ে উড়িয়ে মারেন ইন্টার মিলান ফরোয়ার্ড। যোগ করা সময়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনটি নিশ্চিত সুযোগ পেয়েও নষ্ট করে আর্জেন্টিনা। ডান দিক থেকে মেসির দূরের পোস্টে নেওয়া শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরের মিনিটে মার্তিনেসের শট গোলররক্ষক রায়ান কোনোমতে ঠেকানোর পর বল পেয়ে যান মেসি; কিন্তু তিনিও পারেননি কাজে লাগাতে।
সাত মিনিট যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে সবশেষ ওই নাটকীয়তা; ছয় গজ বক্সে ফাঁকায় বল পেয়ে যান অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড গ্যারাং কৌল। জোরাল শটও নেন তিনি, তবে মার্তিনেস দু-হাত প্রসারিত করে রুখে দেন বল। কয়েক সেকেন্ড পরই বাজে শেষের বাঁশি।
বিশ্বকাপে ৩৬ বছরের শিরোপা খরা কাটানোর অভিযানে আরেকটি ধাপ পার করার আনন্দে মাতে আর্জেন্টিনা দল ও সমর্থকরা। এবার সেমি-ফাইনালে ওঠার পরীক্ষা, সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। দিনের প্রথম ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শেষ আটে উঠেছে ডাচরা।
আগামী শুক্রবার কোয়ার্টার-ফাইনালে মুখোমুখি হবে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও তিনবারের ফাইনালিস্ট নেদারল্যান্ডস।