স্টাফ রিপোর্টার: সহিংসতাকালীন জামায়ত-শিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নির্মম ও নারকীয় হত্যাযজ্ঞের শিকার দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ আবু রায়হানের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল মঙ্গলবার।
২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় ঘোষনার পর সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে সারা দেশের ন্যায় সাতক্ষীরার দেবহাটাতেও নারকীয় তান্ডব চালায় বিএনপি ও জামায়ত-শিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। সেসময়ে ধর্মান্ধ জামায়ত-শিবির ক্যাডাররা একের পর এক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা, দলীয় কার্যালয় ও নেতাকর্মীদের বাড়ীঘর ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, মিছিল-পিকেটিংয়ের নামে গাছ কেটে সড়ক অবরোধ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করে দেয়া, গণপরিবহন ভাংচুর এমনকি রাস্তার ওপর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতিকী কবরও রচনা করেছিলেন।
তৎকালীন সময়ে বিএনপি ও জামায়ত-শিবিরের কাছে মুর্তিমান আতংক ছিলেন দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু রায়হান। সেসময় সরকারের উচ্চ পদস্থ মন্ত্রী-এমপি এবং প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথেও আবু রায়হানের ছিল ব্যাপক সখ্যতা। ফলে দেবহাটাতে আবু রায়হানের কারনে একের পর এক ভন্ডুল হতে থাকে বিএনপি এবং জামায়ত-শিবিরের নাশকতার পরিকল্পনা।
এককথায় তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে ঢাল হয়ে বিএনপি ও জামায়ত-শিবিরের নাশকতা কর্মকান্ডে অন্যতম বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আবু রায়হান। একপর্যায়ে পথের কাঁটা আবু রায়হানকে সরাতে কিলিং মিশনের পরিকল্পনা করেছিলেন বিএনপি ও জামায়ত-শিবির।
২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর সন্ধ্যায় পারুলিয়া বাস স্ট্যান্ডে (বর্তমান শহীদ আবু রায়হান চত্বর) উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে অবস্থানকালে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সেসময়ের প্রভাবশালী নেতা আবু রায়হানকে প্রকাশ্যে নির্মম ও নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাযজ্ঞের ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও অদ্যবধি আঁধারেই রয়ে গেছে হত্যাকান্ডের মুল মোটিভ, আর ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে সেদিনের কিলিং মিশনে অংশ নেয়া খুনীরা। এপর্যন্ত এ মামলায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার ও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল হলেও, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আজও নৃশংস এ হত্যাকান্ডের মুল মোটিভ, পরিকল্পনাকারী ও সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নেয়া সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে সুনির্দ্দিষ্ট কোন ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি বলে দাবি নিহত শহীদ আবু রায়হানের পরিবারের।
শহীদ আবু রায়হানের স্বজনরা জানান, হত্যাকান্ডের একদিন পর আবু রায়হানের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে দেবহাটা থানায় পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারায় একটি হত্যা মামলা (নং-০৫) দায়ের করেন।
আবু রায়হানকে হত্যার পর অন্তত একমাস দেবহাটাতে চিরুনী অভিযান চালিয়ে বহু জামায়ত-শিবিরের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাছাড়া মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত নাশকতায় সংশ্লিষ্ট ও কিলিং মিশনের সন্ধিগ্ধ বহু আসামীকে রায়হান হত্যা মামলার আসামী দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
ফলে দিনদিন লম্বা হতে থাকা আসামীর তালিকার কারনে লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের প্রকৃত মোটিভ, পরিকল্পনাকারী ও কিলিং মিশনে অংশ নেয়া হত্যাকারীদের চিহ্নিতের বিষয়টি দিনদিন ঝাপসা হয়ে ওঠে।
এমনকি আবু রায়হান হত্যার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কয়েক ডজন মামলার আসামী, উগ্রপন্থী ও আফগান ফেরত জঙ্গী জিয়াউর রহমান ওরফে আফগান জিয়া’র নাম বারবার সামনে আসলেও, চাঞ্চল্যকর এ মামলার অভিযোগপত্রে সেই আফগান জিয়াসহ সেসময়ের উশৃঙ্খল জামায়ত-শিবির ক্যাডারদের নাম দায়সারাভাবে শেষেরদিকে রেখে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ শহীদ আবু রায়হানের পরিবারের। চাঞ্চল্যকর এ মামলার অধিকাংশ আসামীরাই বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। আর দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া আফগান জিয়া রয়েছেন কারাগারে।
গেল কয়েক বছরে এক অফিসারের হাত থেকে অন্য অফিসারের হাতে বারবার হাতবদল হয়েছে আবু রায়হান হত্যা মামলার তদন্তের ফাইল। সর্বশেষ ২০১৭ সালের শেষের দিকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলাটির তদন্ত শেষ হয়েছে দাবী করে প্রায় ১শ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। তারপর থেকে আদালতে চলছে এ মামলার বিচার কার্যক্রম।
দ্রæত সময়ের মধ্যে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের রহস্যভেদ করে প্রকৃত অপরাধিদের দৃষ্টান্তমুলোক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন শহীদ আবু রায়হানের পুত্র ছাত্রলীগ নেতা তন্ময়সহ পরিবারের সদস্যরা।
অন্যদিকে যে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আবু রায়হানকে দলের জন্য জীবন দিতে হলো, সেই আত্মত্যাগী নেতার কথা এখন হয়তো মনেও করেননা ক্ষমতাসীন দলের অনেক শীর্ষ নেতারা। এমনকি উপজেলা আ’লীগের পক্ষ থেকে শহীদ আবু রায়হানের মৃত্যুবার্ষিকী পালনে তেমন কোন উদ্যোগও চোখে পড়েনা। তবে সহিংসতায় নিহত শহীদ আবু রায়হান, আব্দুল আজিজ ও আলমগীর হোসেন বাকুমের আত্মার মাগফেরাত কামনায় প্রতিবছর এ দিনটিতে নিজ বাড়িতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি।