:নাজমুল হক:

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান মানবিক চেতনায় উদ্ভাসিত এক ক্ষণাজন্মা ব্যক্তিত্ব। শুধু বাংলাদেশে নয়, শুধু এই উপমহাদেশে নয়, সমগ্র বিশ্বে বঙ্গবন্ধুর সত বিশাল হৃদয়ের অধিকারি, চেতনাদীপ্ত, বজ্রকঠিণ, অগ্নিপুরুষ বার বার জন্ম গ্রহণ করে না। এমন একজন মানুষের জন্য, এমন একজন আন্তর্জাতিকতাবাদী বিশ্ব মানবতার জন্য একটি জাতিকে, বিশ্ব বাসীকে দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী অপেক্ষায় থাকতে হয়।
মানুষ বন্ধন থেকে, অন্ধ সংস্কার থেকে, দাসত্ব থেকে মুক্তি চাই। সে মাথা উঁচু করে মানুষের অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই। এই মুক্তি ও বাঁচার জন্য সে প্রতিনিয়তই সংগ্রাম করে। একটি স্বাধীন ভূ-খন্ডের স্বপ্ন বাংলাদেশে বসবাসকারী অনেকে দেখেছেন। কিন্তু কেই বাস্তবে রূপ দিতে পারে নি। সেই স্বপ্ন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাস্তবে রূপ পেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে।
তিনি বাঙালিদের জন্য নির্মাণ করে দিয়েছেন একটি ভৌগোলিক রাষ্ট্রের সীমানা। জন্ম নিয়েছে বাঙালি জাতির নিজস্ব জাতিরাষ্ট্র, গর্বিত আত্মপরিচয় লাল সবুজের বাংলাদেশ। অসহযোগ আন্দোলনের সময় যে ৩৫টি নির্দেশ শেখ মুজিবুর রহমান জারি করেন তা দিয়ে বাঙালির অধিকার ও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সরাসরি নেতৃত্ব দেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের ’৫৮ এর সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬ এর ৬ দফা’ ৬৯ এর গণঅভ্যুথান এবং ৭০ এর নির্বাচনসহ এ দেশের সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্খা পূরণে প্রতিটা আন্দোলনে, সংগ্রামে তিনি জাতিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি। বার বার কারাবরণ সত্ত্বেও তিনি পিছু পা হননি। সকল প্রকার শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তার রাজনৈতিক
দূরদুর্শিতা, সাহস, বাগ্মিতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এ দেশের সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করে।
বিবিসি’র বাংলা বিভাগের জরিপে শ্রেষ্ঠ এই বাঙালি ছিলেন ইসলামী চেতনায় উজ্জীবিত একজন মহান পুরুষ। ধর্মান্ধদের ইসলাম নয়-রসুলুল্লাহ (স) এর ইসলামই ছিল তাঁর আদর্শ। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তিনি ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ব্যপক ভূমিকা পালন করেছেন। মুসলিম-অধ্যুসিত বাংলাদেশে এক শ্রেণীর ধর্ম-ব্যবসায়ী বিশেষ করে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিলো তারাও পরবর্তীতে স্বীকার করেছেন। ‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ’ এ কথাটি তিনি অন্তরে ধারণ করেছিলেন। ধর্ম বিক্রি করে যারা আখের গোছানো কাজে নেমেছিলেন তারা হালে পানি পাননি। স্বাধীনতা বিরোধীরা বঙ্গবন্ধুকে ইসলাম বিরোধী বলে
আখ্যা দিয়েছিলো। তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে নভেম্বরে বেতার-টেলিভিশনের ভাষণে বলেছেন ‘আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নয়। এ কথার জবাবে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য লেবেল সর্বস্ব ইসলামে আমরা বিশ্বাসী নয়। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে। আমাদের ইসলাম হযরত রাসুলে করীম (স) এর ইসলাম, যে ইসলাম জগতবাসীকে শিক্ষা দিয়েছেন ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র।’ ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দেন তাতে তিনি বলেন, আমরা ইসলামের অবমাননা চাই না। আমাদের দেশ হবে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ। ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান সুমলমানের ধর্ম পালন করবে, হিন্দু হিন্দুদের ধর্ম পালন করবে, খ্রীস্টান তার, বৌদ্ধ তার ধর্ম পালন করবে। এই মাটিতে ধর্মহীনতা নেই, ধর্মনিরপেক্ষতা আছে। এখানে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা; সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চলবে না। তিনি দেশ পরিচালনায় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পূর্নগঠন করেন, বাংলাদেশ তবলীগ জামাতের কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদ সম্প্রসারণ করেন, টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার স্থান করে দেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে। তিনি বাংলা ও বাঙালি জাতিকে বিশ্ব মুসলিম উম্মার সাথে পরিচয় করার লক্ষে ১৯৭৪ সালে ইসলামী সম্মেলন সংস্থায় বাংলাদেশকে সদস্য করেন। সম্মেলনে যোগদান করার জন্য তিনি পাকিস্থানে যেতেও দ্বিধাবোধ করেন নি। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একে অপারের পরিপূরক। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি কল্পনা করা যায় না। ইসলামী চেতনায় বঙ্গবন্ধুর অবদান অপরিসীম। ইসলামের একজন খাঁটি সেবক হিসেবে বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে আরো যে সব উল্লেখযোগ্য কর্ম সম্পাদিত হয়, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- মাদরাসা বোর্ড পুনর্গঠন ও সংস্কার, যাকাত বোর্ড গঠন, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন, মসজিদভিত্তিক ইসলামী পাঠাগার স্থাপন, কুরআন তেলাওয়াত ও ইসলামিক ওয়াজ, তাফসির ইত্যাদি ক্যাসেটের মাধ্যমে সম্প্রচার করা, কুরআন ও হাদিসের অনুবাদ, তাফসির ও গবেষণা কাজ চালানোর ব্যবস্থা করা, বেতার ও টেলিভিশনে কুরআন তেলাওয়াত ও প্রচারের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশে মদ, জুয়া, হাউজি, ঘোড়দৌড়
আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। আপাদমস্তক একজন খাঁটি মুসলমান ও ইললামের খাদেম ছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে জন্য তার অনবদ্য অবদান
বাঙালি জাতি আজীবন কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ রাখবে।

লেখক: আহবায়ক, স্বপ্নসিঁড়ি, সাতক্ষীরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *