নিজস্ব প্রতিনিধি : উপকূলের জীবন-জীবিকা ও পরিবেশ সুরক্ষায় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীসহ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে নদ-নদী ও জলাশয় দখল-দূষণ এবং পাহাড় ও বনাঞ্চল ধ্বংসসহ প্রাণ-প্রকৃতি বিপর্যয়ের চিত্র সঠিক ভাবে গণমাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। এরমাধ্যমে জনস্বার্থে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারে নীতি-নির্ধারক মহল। একইসঙ্গে তা জনগণের সচেতনতা সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আজ সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য ‘পরিবেশ ও উপকূল’ বিষয়ক দু’দিনের অনলাইন প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তারা। ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এবং সুন্দরবন ও পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলন আয়োজিত কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র।
আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)’র সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, ওয়াটারকিপার্স-বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মো. নূর আলম শেখ, বাপা কক্সবাজার জেলা কমিটির সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী, কোষ্টাল ভয়েসের সাধারণ সম্পাদক কৌশিক দে, ডিইউজে’র সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাকিলা পারভীন প্রমূখ।
কর্মশালায় বিশ্বব্যাপী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার গুরুত্ব তুলে ধরেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মনজুরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হচ্ছে সাংবাদিকতার প্রাণ। এই সাংবাদিকতাই একজন সাংবাদিকদের অনন্তকালের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে পারে। তাই নতুন তথ্যের জন্য ঘটনার গভীরে যেতে হবে। নতুন নতুন তথ্য উদঘাটন ও তা জনসম্মূখে তুলে ধরতে হবে।
তিনি আরো বলেন, উপকূলের জীবন-জীবিকা সব সময়ই ঝুঁকির মুখে। তাই উপকূলে দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিকদের দায়িত্বও বেশী। সেখানে অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সংকট ও ঝুঁকির বিষয়গুলো তুলে ধরার সরকারি বেসরকারি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে। এক্ষেত্রে দেশ ও জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হয়। উপকূলের পরিবেশসহ প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষার সাংবাদিকদের আরো বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
পরিবেশ বিপর্যয় দেশকে মানবিক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে আশংকা প্রকাশ করেন পরিবেশ আন্দোলনের নেতা শরীফ জামিল বলেন, প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা যায় না। নদ-নদী-জলাশয় দখল ও দুষণের মাধ্যমে আমরা প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করেছি। দখল ও দুষণের পশাপাশি অপরিকল্পিত শিল্পায়নের কারণে কক্সবাজারসহ সমগ্র উপকূলের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে।
ধবংস হচ্ছে পাহাড় ও বনভূমি। তাই সাংবাদিকদের চিন্তা-চেতনা ও লেখনিতে উপকূল, সুমুদ্র সৈকত, পাহাড় ও সুন্দরবনসহ প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি উন্নয়ন পরিকল্পনায় নদ-নদীসহ পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাপা নেতা নূর আলম শেখ বলেন, সরকারি অর্থ, ক্ষমতা ও সম্পদের ব্যবহার করে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস করা হচ্ছে। নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে জনগণের অর্থ লুটপাট চলছে। কক্সবাজারসহ উপকূলীয় অঞ্চলে এই প্রবণতা বেশি। এটা বন্ধের দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিক ও বাপা নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, পরিবেশকে ধ্বংস করে কক্সবাজারের ইনানীতে সমুদ্র সৈকত দ্বিখণ্ডিত করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। বাঁকখালী ও কোহেলিয়া নদী দখলমুক্ত করতে হাইকোর্টের নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, উপকূলের সকল জেলা ও উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এই প্রশিক্ষণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ৩২ জন সাংবাদিক অংশ গ্রহণ করেন। এরআগে খুলনা অঞ্চলের ৩১জন ও দ্বিতীয় দফায় বরিশাল অঞ্চলের ২৭ জন সাংবাদিক অংশ নেন।