অনলাইন ডেস্ক : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) নিরাপদ এবং নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার-লোহাটি-সাটুরিয়া-কাওয়ালিয়া-কালামপুর সড়কটিকে আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নীত করতে ১ হাজার ৪৩৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
একনেক চেয়ারপার্সন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ অনুষ্ঠিত চলতি অর্থ বছরের ৫ম একনেক সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি সভায় যোগ দেন। নগরীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিবর্গ, প্রতিমন্ত্রীগণ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবর্গ ও সচিবগণ সভায় যোগ দেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, আজকের সভায় ৬ হাজার ৫৫১ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট নয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৩ হাজার ৭৪২ কোটি ২৯ লাখ টাকা সরকারের পক্ষ থেকে, ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে এবং বাকি ২ হাজার ৭৮২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসাবে পাওয়া যাবে।
অনুমোদিত ৯টি প্রকল্পের মধ্যে চারটি প্রকল্প নতুন এবং ৫টি প্রকল্প সংশোধিত।
পরিকল্পনা মন্ত্রী আরও বলেন, সড়ক পরিবহন এবং মহাসড়ক বিভাগের অধীন সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্প কাজ সম্পন্ন হলে টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার-লোহাটি-সাটুরিয়া-কাওয়ালিয়া-কালামপুর সড়কে যান চলাচল নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন হবে এবং এতে সময়ও কম লাগবে।
বাকি প্রকল্পগুলো হচ্ছে: ৭৩.৪৪ একর ভূমি অধিগ্রহন, ৫টি পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, পেভমেন্ট প্রসস্থকরণ ও জোরদারকরণ, এক গ্রেড পৃথক ইন্টারসেকশন এবং একটি ইউলুপ অথবা আন্ডারপাস নির্মাণ, ৩১টি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, ১৩.২৬ লাখ কিউবিক মিটার সড়ক প্রশস্তকরণ ও ড্রেন নির্মাণ।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একনেক বৈঠকে জানানো হয়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের নির্ধারিত সময়সীমার অনেক আগেই কর্ণফুলি নদীর নিচে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, টানেলের দু’টি চ্যানেলের মধ্যে একটির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে এবং অন্যটি শিগগিরই, খুব সম্ভবত শুক্রবার সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।
তিনি আরও বলেন, আশা করি, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের অনেক আগেই টানেল শেষ হয়ে যাবে… এটা সরকারের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। টানেলের প্রধান ভৌত কাঠামোর কাজ প্রায় শেষের দিকে, যদিও প্রকল্পটি কোনও সংশোধন দেয়নি, বরং কিছু সরকারি তহবিল সাশ্রয় হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কিছু নির্দেশনার উল্লেখ করে মান্নান বলেন, নদীতে শিল্প বর্জ্য ফেলা এড়াতে মিল ও কারখানায় বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র (ইটিপি) এবং সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর প্রধানমন্ত্রী আবারও জোর দেন।
উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থেকে আরও ঋণ নেওয়ার সুযোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, যদি উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে বৈদেশিক তহবিল না পাওয়া যায়, তাহলে সরকার তার মজুদ বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার করতে পারে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে উল্লেখ করেন, সরকারের উচিত দেশের প্রতিটি এলাকার প্রতি ন্যায়সঙ্গত আচরণ করা যাতে উন্নয়নের কাজ বিবেচনা করে কোনো এলাকার প্রতি অবিচার না হয়। মান্নান আরও বলেন, আমরাও বিষয়টি সম্পর্কে খুব সচেতন।
প্রধানমন্ত্রী নাব্যতা বজায় রাখার জন্য নদী এবং খালগুলো খনন করার জন্য আবারও জোর দিয়েছেন। ৭১.৩৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় সম্বলিত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বহুল আলোচিত ২য় সংশোধনের অনুমোদনের কথা উল্লেখ করে মান্নান বলেন, মেডিকেল কলেজের কাজে অনিয়মের অভিযোগের পর আইএমইডি তদন্ত শুরু করে এবং অবশেষে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদনের ফলাফলের ভিত্তিতে মান্নান বলেন, নিয়ম-কানুন অনুযায়ী অনিয়ম ও বিচ্যুতির অভিযোগে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য নাসিমা বেগম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী যারা এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, যদিও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন অভিযুক্ত কর্মকর্তা ইতোমধ্যে অবসরে চলে গেছেন, কিন্তু সেই কর্মকর্তাদের ছাড় দেওয়া হবে না এবং একইভাবে পাবলিক ডিমান্ডস রিকভারি (পিডিআর) আইনের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে।
তিনি সংশ্লিষ্ট কার্যকরী সংস্থাগুলোকে নতুন সময়সীমা অনুযায়ী কাজ শেষ করতে বলেছিলেন।
এছাড়া মান্নান বলেন, একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ৭৫তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা এবং জাতিসংঘের তত্তাবধানে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) কর্তৃক প্রদত্ত এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানানো হয়।
সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে-সায়দাবাদ পানি সরবরাহ প্রকল্প, তৃতীয় পর্যায়ের ২,৯২০.৬৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ের সংশোধনী, কৃষি আবহাওয়া তথ্য ব্যবস্থা উন্নয়নে ৯৩.১৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রথম সংশোধনী, জগন্নাথপুর ও মোহনগঞ্জ উপজেলাতে ৩৫৬.০৮ কোটি টাকায় দুটি এগ্রিকালচার ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট প্রতিষ্ঠান, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায়
জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৬৫.৫৯ কোটি টাকায় নদীর পাড় সুরক্ষা, ছোট নদী, খাল-বিল পুনরায় খনন, শরীয়তপুরের কীর্তিনাশা নদীর উভয় পাশে নদী তীর সুরক্ষায় ৩১৯.৩৩ কোটি টাকা, বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন, প্রথম অতিরিক্ত ৭২৯.৮৯ কোটি টাকা ব্যয় সংশোধনী এবং খুলনা থেকে মংলা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনে দ্বিতীয় অতিরিক্ত ব্যয় সংশোধনী ৪৫৯.২৭ কোটি টাকা।