ডেস্ক রিপোর্ট: বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগে নতুন প্রার্থীরা পিছিয়ে রয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) তৃতীয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পুরোনো চাকরিরত শিক্ষকরাই প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ বেশি পেয়েছেন। ফলে গ্রাম ও মফস্বল অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্তত ১৫ হাজার পদ ফাঁকা থাকার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৪ হাজার শূন্যপদে নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তির বিপরীতে ৩৮ হাজার পদে প্রাথমিকভাবে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। গত ১৫ জুলাই রাতে ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করে এনটিআরসিএ।
৫১ হাজার ৭৬১টি পদে সুপারিশ করার কথা থাকলেও সুপারিশ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ২৮৬ জন প্রার্থীকে। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৩৪ হাজার ৬১০ জনকে এবং ননএমপিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার ৬৭৬ জনকে সুপারিশ করা হয়েছে।
এনটিআরসিএর ভাষ্য, ৮ হাজার ৪৪৮টি পদে কোনো আবেদন না পাওয়ায় এবং নারী কোটার ৬ হাজার ৭৭৭টি পদে প্রার্থী না পাওয়ায় মোট ১৫ হাজার ৩২৫টি পদে ফলাফল দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে অসংগতির অভিযোগ তুলেছেন অনেক প্রার্থী। তারা বলেছেন, ১৫ হাজারের বেশি পদ শূন্য থাকা অসম্ভব। তারা বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে, এতগুলো পদে আবেদন জমা পড়েনি বা অন্য কোনো জটিলতায় এত পদ শূন্য থাকতে পারে।
প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পদ ইনডেক্সধারীদের দখলে : এনটিআরসিএ প্রকাশিত তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির সুপারিশের ফল বিশ্নেষণ করলে দেখা যায়, সুপারিশকৃত ৩৮ হাজার পদে ২০ হাজারেরও বেশি পদ ইনডেক্সধারীদের দখলে চলে গেছে। অর্থাৎ, আগের চাকরিপ্রাপ্তরা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করেছেন। নতুন প্রার্থীরা কম সুযোগ পেয়েছেন। সাম্প্র্রতিক নিবন্ধিত ব্যাচের প্রার্থীরা ভালো নম্বর থাকা সত্ত্বেও নিয়োগের সুপারিশ পাননি।
কোনো কোনো নিয়োগ প্রার্থীরা মন্তব্য করছেন, ‘ফল দেখে মনে হচ্ছে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নয়, বদলি বিজ্ঞপ্তি হয়েছে।’ কয়েকজন নতুন প্রার্থী বলেন, ফল দেখে তারা হতাশ। তাদের দাবি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএকে এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
সমাধান হিসেবে তারা বলেন, ইনডেক্সধারীদের আগে আবেদন সম্পন্ন করে তারপর নতুন প্রার্থীদের আবেদন নেওয়া উচিত। তাহলে, ইনডেক্সধারী ও নতুন প্রার্থীরা সমানভাবে উপকৃত হবেন। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদও শূন্য থাকবে না। বিশ্নেষণে আরও দেখা যায়, যাদের বয়স ৩৫ বছর বা তারও বেশি সেই প্রার্থীরা নতুন প্রার্থীদের তুলনায় বেশি সুপারিশ পেয়েছেন।
মাসুম বিল্লাহ, অয়ন ইসলাম, রাফি তৌফিক ও সীমা ভৌমিক নামের চার প্রার্থী সমকালকে বলেন, আবেদন সংখ্যা ও ফির বিষয়ে এনটিআরসিএর নতুন করে ভাবা উচিত। একই সঙ্গে এনটিআরসিএর পরবর্তী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি হতে উচিত ইনডেক্সধারী মুক্ত, রিট মুক্ত, সংরক্ষিত পদ মুক্ত। একই সঙ্গে আবেদনকারীদের বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩৫ রাখার দাবি তাদের।
এসব বিষয়ে কথা বলতে এনটিআরসিএর সচিবের ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ হয়নি।
ভেরিফিকেশনের তালিকা মন্ত্রণালয়ে : সুপারিশপ্রাপ্তদের তালিকা গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে এনটিআরসিএ। এ তালিকা পুলিশ ভেরিফিকেশনে পাঠানো হবে।
এনটিআরসিএ থেকে জানা যায়, পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য প্রাথমিকভাবে সুপারিশকৃত প্রার্থীদের সব তথ্য নেওয়া হয়েছে টেলিটক থেকে। যেখানে ৩৮ হাজার ২৮৬ জন প্রার্থীর সব তথ্য মিলিয়ে মোট ১৪ হাজার পৃষ্ঠা হয়েছে।
পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ হওয়ার পরই চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।