দীপক শেঠ, কলারোয়া : কলারোয়ায় লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়নের তৈলকুপায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মিত ৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ঘরের নির্মান সামগ্রী অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার ৪নং লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়নের তৈলকুপা গ্রামে আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের উপহার হিসাবে সরকারি খাস জমিতে ১৩ টি ঘর নির্মাণ করা হয়।
কিন্তু গত কয়েকদিন আগে নির্মাণধীন ৭ টি ঘরের ব্যবহৃত সামগ্রী খুলে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করতে দেখা যায়।
বিষয়টি ওই প্রকল্পের কর্মকর্তা স্থানীয় ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে, তিনি নির্মিত ঘরের জানালা, দরজা খুলে অন্যত্র রাখার কথা জানিয়ে বলেন, আমিও বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) জুবায়ের হোসেন চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্মিত ৭ টি ঘর বসবাসের উপযুক্ত স্থান বা মাটির উপর তৈরী না হওয়ায় উপকারভোগীদের বসবাসে ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।
এ জন্য ঘরগুলির নির্মাণ সামগ্রী ওখান থেকে অন্যত্র সরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
লাঙ্গলঝাড়ার ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার নূরুল ইসলাম জানান, তৈলকুপি গ্রামের সরকারি (খাস) জমিতে পূর্বের বদলিকৃত ইউএনও মৌসুমী জেরিন কান্তার দায়িত্বকালে দুই সারিতে মোট ১৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়। এক পাশে ৭টি, অপর পাশে ৬টি।
কিন্তু ৭ টি নির্মিত ঘরের পাশে অবস্থিত পুকুর থেকে বালি উত্তোলনের কারনে পাড়ের মাটি ভেঙ্গে ওই ঘরগুলি বসবাসে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। যেটি কোন এক সময় পুকুরের মাটির ভাঙ্গন ও ধসের কারনে ঘরগুলোতে বসবাসের জন্য বিপদের আশাংখা থেকে যায়।
এজন্য সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগে থেকে ঘরগুলোর ব্যবহৃত সামগ্রী অন্যত্র সরানো
হচ্ছে।
বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী ঝুঁকিপূর্ন স্থানে নির্মিত ঘরের সামগ্রী অপর আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্থানে স্থানান্তরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ওই আশ্রায়ণ প্রকল্পের নির্মিত ১৩ টি ঘর আমার পূর্বসুরি বদলিকৃত ইউএনও মৌসুমী জেরিন কান্তা দায়িত্বে থাকাকালিন নির্মাণ করা হয়।
কিন্তু ইদানিং দেখা যাচ্ছে নির্মিত ৭ টি ঘরের পাশে একটি গভীর খননকৃত চওড়া পুকুর থাকায় সেখান থেকে বালি উত্তোলন ও পুকুর পাড়ের মাটি ভাঙ্গনের ফলে ঘরগুলি রক্ষার্থে ঝুঁকিপূর্ন হয়ে যাচ্ছে। এমনকি পুকুরে প্যালাসাইডিং দিয়ে ঘরগুলো রক্ষার চেষ্টা করা হলেও ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জ্ঞাতর্থে উপজেলা পরিষদের সাথে আলোচনার স্বাপক্ষে উপকারভোগীদের জীবনের ঝুঁকি এড়াতে ওই ৭ টি ঘরের নির্মিত সামগ্রী অন্যত্র স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পার্শ্ববর্তী সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণধীন ঘরে ওই স্থানান্তরিত ঘরের সামগ্রীগুলি ব্যবহার করা হবে।
অতীতের সিদ্ধান্তে অপরিকল্পিত স্থানে ঘর নির্মাণে যে অর্থ অপচয় করা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপকারভোগীদের (বসবাসকারী) জীবনের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে এ কথা চিন্তা করেই ঘরগুলোতে বসবাস না করে ব্যবহৃত সামগ্রীগুলো অন্যত্র সরানো হয়।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু সাংবাদিকদের জানান, সদ্য বদলিকৃত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি জেরিন কান্তার অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তে তৈলকুপি গ্রামের একটি বড় পুকুর পাড়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওই ৭ টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
পুকুর পাড়ে হওয়ায় অল্প দিনের মধ্যেই ঘরগুলো ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এই আশঙ্কায় উপকারভোগীদের জীবনের ঝুঁকির কথা চিন্তা করে সংশ্লিষ্ট মহলের মতামতকে প্রাধন্য দেয়া হয়েছে।
অপরিকল্পিত ভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে সরকারের যে আর্থিক অপচয় হয়েছে সেটির কথা চিন্তা করে, সচেতন মহলসহ এলাকাবাসি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জনগণের এই টাকার ক্ষতির দায়ভার কে বহন করবে।
উল্লেখ্য, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপের প্রতিটি
ঘর নির্মাণে সরকারিভাবে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিলো বলে জানা যায়।