দেবহাটা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালিতে সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিহীনদের ব্যানারে দখলে নেয়া সহস্রাধিক বিঘা বিলান জমি ও মৎস্য ঘেরের মালিকানা দাবি করে তা পুনরুদ্ধার পরবর্তী মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে আবারো সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার বেলা ১১টায় দেবহাটা প্রেসক্লাব হলরুমে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শিমুলিয়া গ্রামের কাজী গোলাম ওয়ারেশ’র ছেলে কাজী সুরুজ ওয়ারেশ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সুরুজ ওয়ারেশ বলেন, ১৮১২ নং সিএস খতিয়ানে ১১১৭৫ নং দাগসহ ২৭টি দাগে উল্লেখিত ৪৩৯.২০ একর (১৩’শ ২০ বিঘা) জমির মালিক ছিলেন চন্ডীচরণ ঘোষ।
সেখান থেকে বিভিন্ন কোবলা দলিল, পাট্টা দলিল ও কোর্টের রায় মোতাবেক এসএ ২৯৬২ থেকে ২৯৮০ খতিয়ানে রেকর্ড প্রকাশের পূর্বে কলিকাতা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে ০৮/০৩/৫৩ তারিখে ৬৯৪ নং বিনিময় দলিল মূলে দেবহাটার তেজেন্দ্রনাথ চৌধুরীর পুত্র সুরেন্দ্রনাথ চৌধুরীরর সাথে বিনিময় করেন।
এসএ রেকর্ড পরবর্তী উক্ত বিনিময় দলিলের গ্রহীতা ছিলেন আমার দাদা কাজী আব্দুল মালেক। সে মোতাবেক আমিসহ আমার দাদার অন্যান্য ওয়ারেশগণ এবং ক্রমিক হস্তান্তর সূত্রে অপরাপর মালিকগণ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বিএস রেকর্ড প্রাপ্ত হলে পরবর্তীতে প্রিন্ট পর্চাসহ আনুমানিক ৩০০ জন মালিকের নামে প্রায় ২০০টি পর্চায় উক্ত সমুদয় সম্পত্তির গেজেট প্রকাশিত হয়।
যারমধ্যে আমাদের অনেক মালিকগণের হালসন পর্যন্ত সরকারি খাজনা পরিশোধ রেখে ওই সম্পত্তি ভোগদখল ও সেখানে মৎস্য ঘের করে আসছিলাম।
শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে স্থানীয় কিছু ভূমিহীন নামধারী এবং জেলা ও জেলার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ৭ শতাধিক সন্ত্রাসী অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে লীজগ্রহীতা ও মৎস্য ঘেরের কর্মচারীদের মারধর করে জোরপূর্বক সমূদয় সম্পত্তি দখল করে নেয়। দখলপরবর্তী ওইসব সন্ত্রাসীরা আমাদের মৎস্য ঘের থেকে মাছ লুট এবং ঘেরের বাসাবাড়ি গুলো ভাংচুর করে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করে।
এব্যাপারে আমারা স্থানীয় প্রশাসনের শরণাপন্ন হলে খলিশাখালির জমির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের এক নির্দেশনার বরাত দিয়ে আমাদেরকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিলে ঘটনার পরদিন আমরা মালিকপক্ষ এসংক্রান্তে সাতক্ষীরার আদালতে মামলা দায়ের করি এবং মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে আমাদের মালিকানাধীন ওই বিস্তৃর্ন জমি জবরদখল পরবর্তী এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অদ্যবধি কোন আইনী পদক্ষেপ গ্রহন না করায় প্রত্যেক জমির মালিক ও লীজ ভিত্তিক মৎস্য ঘের মালিকেরা কোটি টাকার সম্পদ হারানোর দুঃচিন্তা ও হতাশা নিয়ে দূর্বিষহ দিন কাটাচ্ছি।
সুরুজ ওয়ারেশ আরো বলেন, সরকার যদি ওই জমি খাস সম্পত্তি ঘোষনা করতে চায়, তাহলে সরকারের সাথে আইনী লড়াই হতে পারে কেবলমাত্র জমির বর্তমান রেকর্ডপ্রাপ্ত মালিকগণের। তাছাড়া সেখানে তৃতীয় পক্ষের দখলে নেয়ার কোন সুযোগ নেই।
অথচ ইতোপূর্বে ওই সম্পত্তি অসৎ পন্থায় ভোগদখলে নিতে জনৈক জোনাব আলী নামের এক ব্যাক্তি সাতক্ষীরা যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি মামলা (১৮/২০১০) করে আদালতে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে নিজস্ব ব্যাক্তিবর্গের নামে রিসিভার গ্রহন করে। সেক্ষেত্রে আমরা বিবাদী পক্ষ রিভিশন মামলা দায়ের করলে মহামান্য হাইকোর্ট রিসিভার বিষয়ক
বিচার কার্যে তৃতীয় পক্ষের দায়েরকৃত মূল মামলা খারিজ এবং রিসিভার বাতিল করতে নিন্ম আদলতকে নির্দেশ দেন।
হাইকোর্টের দেয়া আদেশের প্রেক্ষিতে জেলা যুগ্ম জজ আদালত তৃতীয় পক্ষের দায়েরকৃত মুল মামলা খারিজসহ রিসিভার বাতিল করে দেন।
পরবর্তীতে তারা সুপ্রিম কোর্টে আপীল করলে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক উক্ত সম্পত্তির স্বত্ব প্রচারের জন্য নিন্ম আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে মামলা চলাকালীন সময়ে আইনানুযায়ী গোটা সম্পত্তি জেলা প্রশাসক নিয়ন্ত্রনে রাখবেন বলে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশনা দেন।
সেখানে বাদী অর্থাৎ তৃতীয় পক্ষের স্বত্বের ব্যাপারে আদালত কোন সিদ্ধান্ত দেননি। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা গেজেটভুক্ত মালিকপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ মামলা (নং-১৬৮/২১) দায়ের করি, যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
১৯৫৩ সাল থেকে ৭০ বছর যাবৎ ওই সম্পত্তি ভোগদখল করছেন উল্লেখ করে সুরুজ ওয়ারেশ বলেন, বৈধ কাগজপত্র থাকা স্বত্ত্বেও গত এক সপ্তাহ যাবৎ আমাদের জমি জবরদখল করে প্রতিরাতে সেখান থেকে লাখ লাখ টাকার মাছ লুট করছে ভূমিহীন ছদ্মবেশি দখলদাররা।
অবিলম্বে উক্ত সম্পত্তি দখলমুক্ত করে তা প্রকৃত মালিকদের কাছে পুনরায় ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক সহ প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি