মাহমুদুল হাসান শাওন, দেবহাটা : সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালী নামীয় প্রায় ৩শ মালিকের রেকর্ডীয় ৪৩৯.২০ একর (১৩২০ বিঘা) জমি বিগত ৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে জবরদখলে রেখেছে ভূমিদস্যুরা।
গেল বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ভোররাতে খলিশাখালীর ইছাদ আলীর ছেলে আনারুল ও শাহজাহান গাজীর ছেলে রবিউলের নের্তৃত্বে মুহুর্মুহু গুলি ও বোমা বর্ষনের মধ্যদিয়ে আতংক সৃষ্টি করে বিস্তৃর্ণ ওই জমি ও মৎস্য ঘেরগুলো জবরদখল ও লুট করে নেয় কয়েক’শ ভূমিদস্যু ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা।
এরপর থেকে জমির মালিকপক্ষ এবং প্রশাসনকে ঠেকাতে সন্ত্রাসী আকরাম বাহিনী, স্থানীয় ইউপি সদস্যের বাহিনী, গফুর মাস্তানের বাহিনী, মুর্শিদ-শাহিনুর বাহিনী এবং অহিদুল-মনি বাহিনীসহ কমপক্ষে হাফ ডজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনীর অভয়ারণ্য হয়ে ওঠে খলিশাখালী। গেল ৪ মাসে খলিশাখালীর জবরদখলকৃত বিস্তৃর্ন ওই জমি এবং সেখানকার শতশত বিঘার মৎস্য ঘের থেকে লুন্ঠিত মাছসহ অন্যান্য সম্পদ বেঁচাকেনা এবং হাতবদল করে সেখানকার ভূমিদস্যু ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনীসহ তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদাতারা কোটিপতি বনে গেছেন।
এপর্যন্ত এসকল ভূমিদস্যুদের গডফাদাররা প্রায় ১৫ কোটি টাকা টাকা খলিশাখালী থেকে পকেটস্থ করেছে বলে দাবী সেখানে অবস্থানরত ভূমিদস্যুদের একাংশের। বিপুল এ অবৈধ টাকার যাবতীয় হিসাব রয়েছে ভূমিদস্যু বাহিনী প্রধান আনারুলের কাছে।
এনিয়ে প্রায়ই অন্তঃ কোন্দলে লিপ্ত হচ্ছে আনারুল ও রবিউলসহ সেখানকার অন্যান্য ভূমিদস্যু বাহিনীর সদস্যরা। জবরদখলের ও লুটপাটের প্রায় ৪ মাস পর এসব ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের উচ্ছেদে নড়েচড়ে বসেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। সম্প্রতি জেলা ভূ-সম্পত্তি জবরদখল ও পুনরূদ্ধার সংক্রান্ত নভেম্বর-২১ মাসের সভার সিদ্ধান্তক্রমে ভূমিদস্যুদের খলিশাখালীর জমি ছেড়ে দিতে ৭ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার ও মাইকিং করে উপজেলা প্রশাসন।
এরপর থেকে খলিশাখালীর জবরদখল বজায় রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সেখানকার ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসী বাহিনীগুলো। ভূমিদস্যুদের একটি সূত্র জানায়, রাতের আঁধারে প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে ইছামতি নদী পার করে অবৈধ অস্ত্র ও ইয়াবা ঢোকানো হচ্ছে খলিশাখালীতে। রাতভর জেগে পাহারা দিতে ইয়াবা এবং প্রশাসনের উচ্ছেদাভিযান ঠেকাতে অবৈধ অস্ত্র তুলে দেয়া হচ্ছে সন্ত্রাসী বাহিনী গুলোর সদস্য ও ভূমিদস্যুদের হাতে। কয়েকদিন আগে এরকম একটি অস্ত্র ও ইয়াবার চালান ধরা পড়ে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের হাতে।
প্রশাসনকে ব্যারিকেড দিতে একদিকে অবৈধ অস্ত্র মজুদ এবং অন্যদিকে কোটি টাকার মিশন নিয়ে এক কোর্ট থেকে অন্য কোর্ট, আর ক্ষমতাসীন দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতা ও প্রশাসনের বড়বড় অফিসারদের কাছে ধরণা দিচ্ছে ভূমিদস্যুরা।
অর্থের বিনিময়ে আড়ালে থেকে এসব ভূমিদস্যুদের বিভিন্ন দপ্তর ও উচ্চ পর্যায়ের মানুষদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছে শুরু করে খলিশাখালীর ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদাতারা। এরইমধ্যে শেষ হয়েছে ভূমিদস্যুদের জমি ছেড়ে দিতে উপজেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া ৭ দিনের সময়সীমা।
নির্ধারিত এ সময়ের মধ্যে অবৈধ দখলদাররা খলিশাখালীর জমি ছেড়ে না দেয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে উচ্ছেদাভিযান পরিচালনার জন্য পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের অনুমতি চেয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী। জেলা প্রশাসকের অনুমতি এবং পুলিশ মোতায়েন হলে খলিশাখালীতে উচ্ছেদাভিযান পরিচালনা করে ভূমিদস্যুদের উৎখাত করা হবে বলে জানান নির্বাহী অফিসার খালিদ হোসেন সিদ্দিকী।
নির্বাহী অফিসারের চিঠির প্রেক্ষিতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির বলেন, উচ্ছেদাভিযানের জন্য পুলিশ মোতায়েনের ব্যাপারে শীঘ্রই সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।