চট্টগ্রাম, ২৬ অগ্রহায়ণ (১১ ডিসেম্বর) : সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামে আজ থেকে শুরু হয়েছে চারদিনব্যাপী জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন। চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশন এবং ১৫টি উপজেলা মিলে মোট ১৩ লাখ ২৭ হাজার ৭২ জন শিশুকে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। রাতকানা রোগের প্রকোপ হ্রাস করা এবং শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অপুষ্টিজনিত মৃত্যু প্রতিরোধ করাই জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনের মূল উদ্দেশ্য।
সকালে নগরীর মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে কয়েকটি শিশুকে টিকা খাওয়ানোর মাধ্যমে নগরীতে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় মেয়র বলেন, নগরীতে উদ্দীষ্ট সকল শিশুকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। কোন শিশু যেন বাদ না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ এ বিষয়ে কাজ করছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ নিজ নিজ এলাকায় বিষয়টি তদারকি করছে। আশা করা যায়, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নগরীতে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো যাবে।
চারদিনব্যাপী এ ক্যাম্পেইনে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের স্থায়ী ও অস্থায়ী ১ হাজার ২৮৮ কেন্দ্রে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী ৮০ হাজার শিশুকে একটি করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নীল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল (১ লক্ষ ইউনিট) এবং ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী ৪ লক্ষ ৫২ হাজার শিশুকে লাল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল (২ লক্ষ ইউনিট) খাওয়ানো হবে। একই সাথে ৬ মাস বয়সী শিশুদের শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো বিষয়ে পুষ্টিবার্তা প্রচার করা হবে।
কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলর শৈবাল দাস সুমন, চসিক স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী।
এর আগে সাংবাদিকদের ডেঙ্গু বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, এসময় স্বাভাবিকভাবে মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। চসিক মশা নিধনে নগরীর খাল নালা পরিস্কার করার পাশাপাশি নালা থেকে মাটি উত্তোলন করছে। পানি যাতে আবদ্ধ না থাকে সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। মশার প্রজনন স্থানে চসিকের পক্ষ থেকে ওষধ ছিটানো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ পরামর্শক দলের সুপারিশের ভিত্তিতে আনীত ওষুধ নগরীতে ছিটানো হচ্ছে। এ ওষধ অন্যান্য সংস্থাও ব্যবহার করছে। ফুটপাত বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে ফুটপাত উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে। সম্প্রতি লালখান বাজারে ফুটপাত দখলমুক্ত করে জন চলাচলের পথ সুগম করা হয়েছে।
তবে দুঃখের বিষয় – অনেকে আবার ফুটপাত পুনরায় দখল করেন। বিষয়টি ইতোমধ্যে পুলিশ কমিশনারকে জানানো হয়েছে। পুলিশ এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ^াস দিয়েছে। যানজট বিষয়ে মেয়র বলেন, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট বর্তমানে ডিজিটালাইজড হয়েছে। এ পদ্ধতি নগরীতে চালুর চিন্তা-ভাবনা চলছে। ট্রাফিক বিভাগের সাথে চসিকের এ বিষয়ে কথা হয়েছে। বিষয়টি পুরোপুরি চালু করতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের উদ্যোগে কর্ণফুলি উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সকালে জেলা পর্যায়ে জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করা হয়। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর এ ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করেন।
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কর্ণফুলী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা সুলতানা, পটিয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ বক্তৃতা করেন।
চট্টগ্রাম জেলার ১৫টি উপজেলায় মোট ৭ লক্ষ ৯৫ হাজার ৭২ জন শিশুকে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। জেলার ৪ হাজার ৮০০ কেন্দ্রে ৬-১১ মাস বয়সী ৯০ হাজার ১৯০ জন শিশুকে একটি করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নীল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল (১ লক্ষ ইউনিট), ১২-৫৯ মাস বয়সী ৭ লক্ষ ৪ হাজার ৮৮২ জন শিশুকে লাল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল (২ লক্ষ ইউনিট) খাওয়ানো হবে।