চট্টগ্রাম, ২১ কার্তিক (৬ নভেম্বর) : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, ইতিহাস সৃষ্টিতে চট্টগ্রামের ভূমিকা উপমহাদেশে অন্যতম।
চট্টগ্রাম ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল ১৯০৫ সালে স্বদেশী আন্দোলন এবং ১৯২১ সালে প্রথম অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। যে কারণে মহাত্মা গান্ধি নাগপুরের কংগ্রেস সম্মেলনে চট্টগ্রামের প্রসংশা করে বলেছিলেন চট্টগ্রাম সবারে আগে। মরহুম মৌলভী নূর আহমদ চেয়ারম্যানও ছিলেন সেই প্রশংসার দাবীদার।
তিনি বলেন, আমরা এই মহান ব্যক্তিদের স্মরণ করি কিন্তু তাদের পথ অনুসরণ করি না। মহান ও কৃতিমানদের পথ অনুসরন করতে পারলেই আগামী দিনে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব গড়ে তোলা সম্ভব হবে। চট্টগ্রামের এসব কৃতিমান ও তাদের কর্মের গৌরবের অংশ নিয়ে চসিকের নতুন ভবনে একটি মিউজিয়াম করা হবে বলে তিনি ঘোষণা দেন।
মেয়র  শনিবার সকালে আন্দরকিল্লাস্থ চসিকের পুরাতন ভবনের কে.বি আবদুস সাত্তার মিলনায়তনে চট্টগ্রাম পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যন মৌলভী নূর আহমদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহারের সভাপতিত্বে ও কংকন দাশের সঞ্চালনায় অলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মরহুমের দৌহিত্র অধ্যাপক সেলিম জাহাঙ্গীর, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, আবদুস সালাম মাসুম, জহর লাল হাজারী, অধ্যাপক মাসুম চৌধুরী, বাগমনিরাম স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সাবিনা বেগম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক আবু তালেব বেলাল।
মেয়র বলেন, অগ্নিযুগের মহান বিপ্লবী মাস্টার দা সূর্য সেনের নেতৃত্বে বৃটিশ উপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির জন্য অস্ত্রাগার লুন্ঠন ও জালালাবাদ যুদ্ধ এবং চট্টগ্রামকে কয়েকদিন স্বাধীন রেখে ইন্ডিয়ান রেভুলেশনারি আর্মির পতাকা তোলার সাহস দেখিয়েছেন বীর চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা।
বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকাকে বাদ দিয়ে চট্টগ্রামকে গুরুত্ব দিয়ে এবং চট্টগ্রামের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে ৬ দফা ঘোষণা করেছিলেন চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দান থেকে। শুধু তাই নয়, মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ সূচিত হয় চট্টগ্রাম থেকেই। তাই বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্যে চট্টগ্রামের ভূমিকা উজ্জ্বল হয়ে আছে এবং থাকবে।
মেয়র বলেন, মরহুম নূর আহমদ চেয়ারম্যান ১৯২৭ সালে চট্টগ্রামের পৌর এলাকায় বাধ্যতামুলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তণের মাধ্যমে দুঃসাহসী ও যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন।
এ কার্যক্রম সমগ্র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় পথিকৃত হয়ে আছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে তার ধারাবাহিকতায় চসিক আজও অব্যাহত রেখেছে। দেশের অন্য কোন সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা এ ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে না।
শুধুমাত্র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনই আলাদা একটি শিক্ষা বিভাগের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করে আসছে। সে কারণে চসিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপুল পরিমান অর্থ ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। মেয়র রাজনৈতিক সামাজিক ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের যে ব্যক্তিগণ কৃতিত্ব রেখে মহান হয়েছেন, তাদের অবদানের ইতিহাস স্থাপনা বা সড়কের নাম ফলকে লিপিবদ্ধ করার উদ্যেগ গ্রহন করা হবে বলে জানান – যেন আগামী প্রজন্ম তাঁদের অবদানের কথা জানতে পারে।
এছাড়া চসিক যে নতুন ভবন নির্মান করতে যাচ্ছে সেখানকার একটি ফ্লোরে চট্টগ্রামের কৃতিমানদের ও ইতিহাসের গৌরবগাঁথা অংশগুলো নিয়ে একটি পুর্ণাঙ্গ মিউজিয়াম করার পরিকল্পনা আছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *