চট্টগ্রাম, ৮ মাঘ (২২ জানুয়ারি) : তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, জিয়া-এরশাদ দেশে সামরিক আইন জারি করে সামরিক শাসন চালিয়ে শত শত দেশপ্রেমিক সৈনিক, কর্মকর্তা ও জওয়ানদের ফাঁসি দিয়েছে। কাউকে কথা বলা বা আইনের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ দেয়নি। তারা ক্যাঙারু কোর্ট ও সামারি ট্রায়ালের মাধ্যমে নিজেদের খেয়াল খুশিমত বা ফরমায়েশি রায় দিয়েছে বা বাস্তবায়ন করেছে। কোন আইনের তোয়াক্কা করেনি।
তিনি বলেন, জিয়া-এরশাদের নেতৃত্বেই দেশে আইনের শাসনে ব্যত্যয় ঘটেছে। তথ্যমন্ত্রী আজ চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি আয়োজিত সমিতি মিলনায়তনে নবীন আইনজীবীদের নবীন বরণ ও পেশাগত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ এনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন বক্তৃতা করেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জ্ঞান ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করেছে। ফলে মানুষের মধ্যে বহুমাত্রিক চিন্তা-চেতনা গড়ে ওঠেছে। অথচ বিএনপির শাসনামলে গণতন্ত্রকে বাক্সবন্দি করে রাখা হয়েছিল। অস্ত্রের ঝনঝনানিতে মানুষ তখন সবসময় তটস্থ থাকতো। তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক কোন মূল্যবোধ ছিলনা। গণতন্ত্রকে তারা অস্ত্রের কাছে ঝিম্মি করে রেখেছিল।
বর্তমান সরকার সে অবস্থা থেকে সমাজে আইনের শাসন ফিরিয়ে এনেছে। তিনি বলেন, আইনজীবীগণ সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সমাজের মানুষের আস্থার ঠিকানা হয়ে ওঠতে পারে। এজন্য নবীন আইনজীবীদের তাড়াহুড়ো করলে চলবেনা। ধৈর্র্য্য ধরে আইন পেশার মতো জটিল বিষয় আয়ত্ব করতে হবে। পেশাগত মর্যাদা অক্ষুণœ রাখতে হবে। পেশাগত কর্মশালায় এসব বিষয় নবীনদের জানানো হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠায় ইতোমধ্যে আইনমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। দ্রুত তা কার্যকর করা হবে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, দেশে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও মাদক দমনে র্যাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। র্যাবের কার্যক্রমের কারনে জঙ্গিবাদ মাথাচড়া দিয়ে ওঠতে পারেনি। শুরুতে নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। সন্ত্রাসীদের দমন করা সম্ভব হয়েছে। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নে র্যাবকে তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যাপ্ত সাহায্য সহযোগিতা করেছে। প্রশিক্ষণ দিয়েছে। অথচ বর্তমানে একটি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী মহল র্যারেব বিরুদ্ধে দেশে বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, যারা দেশে স্থিতিশীলতা চায়না, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম বেড়ে যাক যারা চায়-তারাই র্যাবকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। আন্তর্জাতিক কয়েকটি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে চক্রান্ত করছে। মন্ত্রী বলেন, কুখ্যাত গুয়ান্তানামো বে কারাগারসহ যুক্তরাষ্ট্র ও ঈসরাইলে অনেক মানবাধিকার বিরোধী কার্যক্রম হয়। মানুষের অধিকার হরণ হয়। অথচ এসব প্রতিষ্ঠান তা দেখতে পায়না। সেসব ক্ষেত্রে তাদের কোন বিবৃতি দেখা যায়না। তাদের কার্যক্রমে বোঝা যায়-তারা উদ্দেশ্যমুলকভাবে এসব করছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, পরীর পাহাড় বা কোর্ট হিল নিয়ে সাম্প্রতিক যে টানাপোড়েন চলছে তা কাম্য নয়। সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করলে এ টানাপোড়েন থাকবেনা। পূর্বে এ পাহাড়ের নান্দনিকতা ছিল উল্লেখ করে এ পাহাড়ে যেকোন স্থাপনা নির্মাণে নান্দনিকতা বজায় থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পরে তিনি কয়েকজন নবীন আইনজীবীর মধ্যে সমিতির সদস্য সনদ হস্তান্তর করেন।
সকালে তিনি জেলা প্রশাসন আয়োজিত জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সম্মুখস্থ শেখ রাসেল চত্বরে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও মাস্ক বিতরণে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ১৮ কোটি টিকা প্রদান করা হয়েছে। দেশে প্রায় ৯ কোটির কাছাকাছি টিকা মজুদ রয়েছে। মানুষের চাহিদার দ্বিগুণ টিকা মজুদ আছে। ‘আমার সুরক্ষা আমার হাতে’ উল্লেখ করে মন্ত্রী সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানান।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ উপস্থিত ছিলেন।