চট্টগ্রাম, ২৩ অগ্রহায়ণ (৮ ডিসেম্বর) : বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃক ‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ‘টেলিযোগাযোগ সেবা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রম’ বিষয়ে নগরীর হোটেল রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ হোটেলে এবং অনলাইন প্লাটফর্ম ‘জুম’ এ ব্যাপক গ্রাহক উপস্থিতিতে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত শুনানিতে গ্রাহকরা টেলিযোগাযোগ সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যেসব সমস্যার সুম্মধীন হয়েছেন তা তুলে ধরেন এবং কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাগণ ক্রমান্বয়ে সকল প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। উল্লেখ্য, গণশুনানিতে অংশে নিতে অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন ৮৪৮ জন, এর মধ্যে সশরীরে ১৮২ জন, অনলাইনে ৯৪ জন এবং অন্যান্য ১৭ জন অংশ নেয়।
উপস্থিত সকল অংশগ্রহণকারী ও সুধীজনকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, গণশুনানিতে যেসব অভিযোগ পাওয়া যায়, সেগুলো আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণে সহায়ক হয়। গণশুনানিতে অনেক অজানা প্রশ্ন উঠে আসে যা গ্রাহক জানতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়িত হয়ে গেছে। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষমাত্রা নিয়ে বিটিআরসি কাজ করে যাচ্ছে। বিটিআরসিতে আগামীতে জন্য বিভাগে গণশুনানি আয়োজন করবে বলেও জানান তিনি।
গণশুনানি কমিটির সভাপতি ও বিটিআরসি চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শ্যাম সুন্দর শিকদার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌঃ মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, প্রতিটি গণশুনানি থেকোনা প্রতিষ্ঠানের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ায় এবং গ্রাহকদের অভিযোগ আমলে নিয়ে টেলিযোগাযোগ খাতে আরো কতটুকু উন্নয়ন করা যায় সে বিষয়ে কাজ করবে বিটিআরসি।
তিনি আরো জানান, অক্টোবর ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ১২ কোটি ৬২ লাখ, মোবাইল সিম গ্রাহক সংখ্যা ১৮ কোটি ১৬ লাখ এবং ইন্টারনেট ডেনসিটি ১০৪.১৭ ভাগ এবং নভেম্বর ২০২২ সাল ব্যান্ডউইথ তথা ডাটার ব্যবহার হয়েছে ৮,৮৫৯ জিবিবিএস।
গণশুনানি সংক্রান্ত উপস্থাপনা করেন সিস্টেম এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহপরিচালক ব্রিঃ জেঃ মোঃ নাসিম পারভেজ সকলের অবগতির জন্য বিগত ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত গণশুনানির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে করেন।
তিনি জানান, গ্রাহকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারনেট গতি বাড়ানোর জন্য গত ১ বছরে বিটিআরসি বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে এবং ইন্টারনেট গতি যাচাই করতে ডিভাইস ক্রয় করা হয়েছে। কল ড্রপ নিরসনে কলড্রপ ফেরতের জন্য এ বছর নতুন নির্দেশনা চালু এবং প্রতিটা কলড্রপে যা খরচ হয় তার তিনগুণ ফেরত দেওয়ার বিধান চালু করা হয়েছে। গ্রাহক নিজেই *১২১*১২# ডায়াল করে কলড্রপ যাচাই করতে পাবে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া গ্রাহকদের জন্য আনলিমিটেড ডাটা প্যাক চালু এবং ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ড তথা অব্যবহৃত ডাটা পরবর্তী একই প্যাকেজে ব্যবহারের জন্য ডাটা প্যাকেজ নির্দেশিকা চালু করা হয়েছে।
মোবাইল অপারেটরদের দুর্বল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট স্পিড নিয়ে অপর এক গ্রাহকের অভিযোগের জবাবে ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক বিচা: জেলা: মো: এহসানুল কবীর বলেন, ইতোমধ্যে সকল অপারেটরদের বেশকিছু টাওয়ারের নেটওয়ার্ক দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং অপারেটরদেরকে সেসব টাওয়ারে নেটওয়ার্ক পতি বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মোহাম্মদ সায়েম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রিচার্জ করলে অটোমেটিক ডাটা ‘বান্ডেল ক্রয় হয়ে যায়। জবাবে সিস্টেম এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক রিঃ জেঃ মোঃ নাসিম পারভেজ এ বিষের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
আশিক চৌধুরী নামে এক শিক্ষাটা টলিযোগাযোগ খাতে নতুন নতুন সেবা চালুর মাধ্যমে চাকরির ক্ষেত্রে বাড়ানোর উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চান। জবাবে লিখা এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেইন বলেন, বিশ্বে প্রতিনিয়েই নতুন নতুন প্রযুক্তি ও সেবা চালু হচ্ছে এবং বিটিআরসি লাইসে প্রতিষ্ঠান ও টেলিযোগাযোগ খাতের স্টেকহোল্ডার বাড়ার ফলে এ খাতে চাকরির সুযোগও বাড়ছে।
আইটি বিশেষজ্ঞ তোহিদুল আলম চৌধুরী অ্যামেচার রেডিও লাইসেন্স চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে জবাবে স্পেকট্রাম বিভাগের পরিচালক লেঃ কর্নেল আউয়াল উদ্দীন আহমেদ নতুন করে অ্যামেচার রেডিও চালু কথা জানান।
গণশুনানির শেষভাগে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শাম সুন্দর পিকসার সার্বিক বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। সিস্টেম এর সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক কর্নেল এস এম রেজাউর রহমান এর সঞ্চলনায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিনিয়োগ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধি, সশরীরে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনলাইনেমুক্ত টেলিযোগাযোগ সেবা গ্রহীতার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান যথা রুপে ও বিভিন্ন প্যাকেজ ভয়েস, ডাটা বাকল) এর মূল্য এবং ইন্টারনেট সেবা সংক্রান্ত অভিযোগ, প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য টেলিকম সেবাপ্রদানকারী লাইসেদিনের সেরা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ ছিল।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কমিশনের লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক মো: দেলোয়ার হোসাইন, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: এহসানুল কবীর লিগাল এ লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু, স্পেকট্রাম বিভাগের পরিচালক লেঃ কর্ণেল আউয়াল উদ্দীন আহমেদ এবং বিটিআরসির উদ্ধার্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।