ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, নিউমোনিয়া হলো মশা বাহিত রোগ। এসব রোগের টিকা আবিষ্কার হয়নি। এডিস মশা থেকেই ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগ ছড়ায়, কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রনেই আসছে না। নির্মানাধীন ভবনে, টবে দীর্ঘ দিন জমে থাকা পানিতেই বংশ বিস্তার করছে এডিস মশা। বর্তমানে মশাটি ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক হলেও সিটি কর্পোরেশন দায়সারা কাজ করছে। করোনার সঙ্গে আমরা ২০২০ সালের মার্চের আগে পরিচিত ছিলাম না, যার কারণে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গু সম্পর্কে তো আরো আগে থেকে জানতাম, জানতাম বর্ষার প্রকোপে ডেঙ্গু বৃদ্ধি পায়। তাহলে কেন নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকা? করোনাকালে কেন ডেঙ্গু প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা নেয়া হয়নি?
করোনা মহামারীতে থেমে নেই ডেঙ্গুর প্রকোপ। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ধ্বংসলীলা চালানো করোনা ভাইরাসে মানুষের জীবন যখন বিপর্যস্থ ঠিক তখনই ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। ফলে মানুষের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা যেমন বেড়েছে, তেমনি আতঙ্ক গ্রস্থও হচ্ছে। ডেঙ্গুর বেশি বিস্তার ঘটেছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে। ২১ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৭ হাজার ৭৫০ জন ডেঙ্গু রেগী, আর মারা গেছে ৩৫ জন। তবে যারা বাড়িতে বা বেসরকারি হাসাপাতালে ভর্তি তাদের খবর পাওয়া গেছে অল্প। সেই হিসেব করলে সংখ্যা আরো বাড়বে। ফলে ডেঙ্গু নিয়ে নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ (সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ)। প্রতি বছর মশা মারতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, বাজেটও বাড়ে কিন্তু মশা তো মরে না, বরং বাড়ে। ঢাকার আনাচে-কানাচে ডেঙ্গুর প্রজনন ক্ষেত্র সবচেয়ে বেশি; তাই রোগের প্রকোপও ঢাকাতেই বেশি। এতদিন মানুষ জানত মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া হয়; এখন শরীরে ভাইরাস সংক্রমিত হলে ডেঙ্গু হয়। পানি দুষণের কারণেই জন্মাচ্ছে মশা। তাই ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে ঢাকাকে রক্ষা করতেই হবে? বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য নগরী থেকে ঢাকাকে বের করে আনতেই হবে।
বর্তমান সময়ে মশাই আমাদের শত্রু। মশা কোথায় জন্মায়, কীভাবে এর বংশ বিস্তার ঘটে- এসব আমরা অনেকেই জানি। মশার প্রজনন জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে পানি সমৃদ্ধ ড্রাম, মাটির ভাঙা হাঁড়ি-পাতিল বা তার ভগ্নাবশেষ, বিভিন্ন ছোট-বড় পাত্র, বালতি, ফুলের টব, ফুলদানি, পরিত্যক্ত বোতল, টায়ার, পলিথিন ব্যাগ, ছোট-বড় গর্ত, নালা বা পুকুর ইত্যাদি। এ জন্য প্রয়োজন মতো মশার ওষুধ ছিটাতে হবে। পরিবেশ দূষণ থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রত্যেকের বাড়ির আশে-পাশে পরিষ্কার রাখতে হবে। বাস্তবে ঔষুধ ছিটানো হচ্ছে, মশা মরছে, ডেঙ্গু কমছে এক সময়, আবার বাড়ছে পরবর্তী বছর এভাবেই চলে আসছে। কিন্তু এটা কোন স্থায়ী সমাধান না। ঢাকাকে নিরাপদ বসাবাসযোগ্য করতে প্রয়োজন দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা। এই ঢাকা শহরসহ পুরো দেশটাকে নোংরা, আবর্জনাময় ও অস্বাস্থ্যকর করার পেছনে আমাদের সবার কমবেশি অবদান রয়েছে। হাজার চেষ্টা করেও মশামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা যাবে না। কিন্তু আমরা সচেষ্ট হলে, যুক্তিসংগত আচরণ করলে, বিবেক-বুদ্ধি খাটালে, পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সচেতন হলে পরিস্থিতি অনেক নিয়ন্ত্রণে থাকত। পরিবেশ সংরক্ষণ দুই এক দিনের কাজ নয়; দীর্ঘ মেয়াদী কাজ। মানুষকে সচেতনার পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ করতে হবে কঠোর ভাবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম দুষণমুক্ত হলেই দেশ ডেঙ্গু মুক্ত হবে।