ক্রিকেট ডেস্ক : ড্র’তেই শেষ হলো বাংলাদেশ-শ্রীলংকার মধ্যকার দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট। ৬৮ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে পঞ্চম ও শেষ দিন পর্যন্ত ৯১ দশমিক ১ ওভারে ৬ উইকেটে ২৬০ রান করে শ্রীলংকা। শেষ পর্যন্ত দ্ইু দলই ম্যাচটি ড্র মেনে নেয়। প্রথম ইনিংসে শ্রীলংকা ৩৯৭ ও বাংলাদেশ ৪৬৫ রান করেছিলো। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে ১৩১তম ম্যাচে ১৮তম ড্রর স্বাদ পেলো বাংলাদেশ। আর শ্রীলংকার বিপক্ষে পঞ্চম ড্র এটি।

এই ড্রতে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ৪ পয়েন্ট পেল বাংলাদেশ। ৭ ম্যাচে ১ জয়, ৫ হার ও ১ ড্রতে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের অষ্টম স্থানে বাংলাদেশ। আর ৫ ম্যাচে ২টি করে জয়-হার ও ১টি ড্রতে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চম স্থানে শ্রীলংকা।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে চতুর্থ দিন বিকেলে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে শ্রীলংকা। দিন শেষে ২ উইকেটে ৩৯ রান সংগ্রহ করে সফরকারীরা। ফলে ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ২৯ রানে পিছিয়ে ছিলো লংকানরা। অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে ১৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। আগের দিন ১৮তম ওভারের প্রথম বলে প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন লাসিথ এম্বুলদেনিয়া।

তাই নতুন ব্যাটার কুশল মেন্ডিসকে নিয়ে আজ, পঞ্চম ও শেষ দিন সকালে খেলতে নামেন করুনারত্নে। ১৮তম ওভারের শেষ পাঁচ বলে স্পিনার তাইজুল ইসলামকে দু’টি চার মারেন কুশল।

আর ২১তম ওভারে পেসার খালেদের বলে প্রথম তিন বলে বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করেন কুশল। ২২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তাইজুলকে চার মেরে শ্রীলংকাকে লিড এনে দেন কুশল। এরপর ২৫তম ওভারে প্রথম ইনিংসের সফল বোলার নাইম হাসানকে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন কুশল।

২৬তম ওভারে তাইজুলের বল ঠিক মত খেলতে পারেননি কুশল। তাইজুলের ডেলিভারি কুশলের ব্যাটে লেগে উইকেটরক্ষক ও স্লিপে থাকা ইয়াসির আলির মাঝ দিয়ে বল সীমানা ছাড়া করে। ক্যাচের জন্য কেউই চেষ্টা করেননি।
নিজের ইনিংসের শুরু থেকেই মারমুখী মেজাজে ছিলেন কুশল। হাফ-সেঞ্চুরির দিকেই ছুটছিলেন তিনি। তবে কুশলকে দারুন এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন তাইজুল। গুড লেংথের বলে পা নিয়ে খেলতে গিয়েছিলেন কুশল। কিন্তু বল টার্ন করলে, ব্যাট মিস করেন কুশল। তাতে বল গিয়ে কুশলের অফ-স্টাম্প ভেঙ্গে দেয়। ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৩ বলে ৪৮ রান করেন কুশল। অধিনায়কের সাথে ৮৮ বলে ৬৭ রান যোগ করেন কুশল।

এরপর ক্রিজে আসেন প্রথম ইনিংসে ১৯৯ রান করা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। প্রথম ১৪ বলে রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। নিজের ১৫তম বলে তাইজুলকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ম্যাথুজ।
তাইজুলের জোড়া আঘাতে প্রথম সেশনে কুশল ও মেন্ডিসকে হারায় শ্রীলংকা। এ সময় লংকানদের রান ছিলো, ৪ উইকেটে ১২৮।

বিরতির পর ফিরে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৮তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন করুনারত্নে। এজন্য ১৩২ খেলেন তিনি। তবে হাফ-সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি করুনারত্নে।

ইনিংসের ৪৮তম ও তাইজুলের ১৭তম ওভারের প্রথম বলে উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়েছিলেন করুনারতেœ। ব্যাট-বলের সংযোগটা যুৎসই হয়নি করুনারত্নের। মিড-উইকেটে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ ক্যাচ নেন অধিনায়ক মোমিনুল হক। ২টি চারে ১৩৮ বলে ৫২ রান করেন লংকান অধিনায়ক।

করুনারত্নেকে শিকার করে নিজের চতুর্থ উইকেট নেন তাইজুল। তবে পরের ওভারেই পাঁচ উইকেট পূর্ণ করতে পারতেন তাইজুল। ওভারের পঞ্চম ডেলিভারিটি লেগ সাইডে খেলেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। বল কিছুটা শুন্যে মিড উইকেটের দিকে যাচ্ছিলো। সেখানে ছিলেন মুশফিক। কিন্তু বল মাটিতে পড়ার আগে হাতে নিতে ব্যর্থ হন মুশফিক। তখন ২২ রানে ছিলেন ধনাঞ্জয়া।

শেষ পর্যন্ত সেই মুশফিকের হাতেই শেষ হয় ধনাঞ্জয়ার ইনিংস। সাকিব আল হাসানের ২১তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি ছিলো শট ডেলিভারি। সেটি পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে মুশফিককে ক্যাচ দেন ধনাঞ্জয়া। ৬০ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৩ রান করেন তিনি। ধনাঞ্জয়া যখন ফিরেন তখন শ্রীলংকার রান ৬ উইকেটে ১৬১।

ক্রিজে নতুন ব্যাটার নিরোশান ডিকবেলাকে প্রথম বলেই ফেরাতে পারতেন সাকিব। সাকিবের ডেলিভারিটি লেগ সাইডে সুইপ করেন ডিকবেলা। স্কয়ার লেগ দিয়ে বল যাবার সময়, সেটি থামানোর চেষ্টা করেছিলেন তাইজুল। কিন্তু তার আঙ্গুলে লেগে বল চলে যায় বাউন্ডারিতে।

জীবন পেয়ে চান্ডিমালকে নিয়ে প্রতিরোধের দেয়াল গড়ে তুলেন ডিকবেলা। বাংলাদেশ বোলারদের সামনে দারুন লড়াই করতে থাকেন তারা। ফলে ৭০ ওভারে ২০০ রানে পৌঁছে শ্রীলংকা। এসময় লিডও হয়ে যায় ১৩২ রান।
৮৪তম ওভারে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৯তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন ডিকবেলা। ৯০তম ওভার পর্যন্ত চান্ডিমাল ও ডিকবেলার জুটি ভাঙ্গতে না পারার কারনে, ৯১ তম ওভারের প্রথম বলের পর ম্যাচটি ড্র মেনে নেয় দু’দল।

সেসময় শ্রীলংকার সংগ্রহ ছিলো ৬ উইকেটে ২৬০ রান। ডিকবেলা ৬১ ও চান্ডিমাল ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। বাংলাদেশের তাইজুল ৮২ রানে ৪টি ও সাকিব ৫৮ রানে ১ উইকেট নেন। প্রথম ইনিংসে ১৯৯ রান করায় ম্যাচ সেরা হয়েছেন শ্রীলংকার ম্যাথুজ।

আগামী ২৩ জুন মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।
স্কোর কার্ড (টস-শ্রীলংকা) :

শ্রীলংকা প্রথম ইনিংস : ৩৯৭/১০, ১৫৩ ওভার (ম্যাথুজ ১৯৯, চান্ডিমাল ৬৬, নাইম ৬/১০৫)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৪৬৫/১০, ১৭০.১ ওভার (তামিম ১৩৩, মুশফিক ১০৫)
শ্রীলংকা দ্বিতীয় ইনিংস (আগের দিন ৩৯/২, ১৭.১ ওভার, করুনারতেœ ১৮*) :
ওশাদা রান আউট (তাইজুল) ১৯
করুনারত্নে ক মোমিনুল ব তাইজুল ৫২
এম্বুলদেনিয়া বোল্ড ব তাইজুল ২
কুশল বোল্ড ব তাইজুল ৪৮
ম্যাথুজ ক এন্ড ব তাইজুল ০
ধনাঞ্জয়া ক মুশফিক ব সাকিব ৩৩
চান্ডিমাল অপরাজিত ৩৯
ডিকবেলা অপরাজিত ৬১
অতিরিক্ত (লে বা-২, নো-৪) ৫
মোট (৬ উইকেট, ৯০.১ ওভার) ২৬০
উইকেট পতন : ১/৩৬ (ওশাদা), ২/৩৯ (এম্বুলদেনিয়া), ৩/১০৬ (কুশল), ৪/১১০ (ম্যাথুজ), ৫/১৪৩ (করুনারতেœ), ৬/১৬১ (ধনাঞ্জয়া)।
বাংলাদেশ বোলিং :
নাইম : ২৩-৫-৭১-০,
খালেদ : ৭-০-৬-০ (ও-১),
সাকিব : ২৫-৩-১২-০,
তাইজুল : ৩৪-১-০-১,
শান্ত : ১-১-০-১,
জয় : ০.১-০-০-০।
ফল : ড্র।
ম্যাচ সেরা : অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ (শ্রীলংকা)।
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজে ০-০ সমতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *