মাহমুদুল হাসান শাওন : সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদের আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে চেয়ারম্যান-মেম্বর পদে প্রার্থীতার হিড়িক ফেলেছেন উপজেলার শীর্ষ চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী ও একাধিক মাদক মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামী, দূর্নীতিবাজ ও বিতর্কিত ব্যাক্তিসহ কয়েক’শ নতুন ও পুরাতন প্রার্থীরা।
জনপ্রতিনিধিত্ব করার মতো গ্রহনযোগ্যতা, জনসমর্থন কিংবা নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও, বছরের পর বছর ধরে চোরাচালান ও মাদক ব্যবসা করে টাকার পাহাড় গড়া এসব বিতর্কিত ব্যাক্তিরা তাদের অবৈধ কারবার ও প্রশাসনিক ঝামেলা সামলাতে জনপ্রতিনিধি হওয়ার মিশনে নেমেছেন।
দেবহাটার কুলিয়া, পারুলিয়া, সখিপুর, নওয়াপাড়া ও সদর ইউনিয়ন মিলিয়ে এধরনের অন্তত অর্ধশত ব্যাক্তি এবারের ইউপি নির্বাচনে মেম্বর ও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দীতা করার জন্য ইতোমধ্যেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন এবং তাদের মধ্যে অনেকেই মনোনয়ন পত্র দাখিল করে প্রতিক পাওয়ার দিনক্ষণ গুনছেন।
প্রতিদিনই স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকার পাড়া-মহল্লায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোটারদের সমর্থন আর মূল্যবান ভোট চাইছেন এসকল প্রার্থীরা। গাছে গাছে ঝুলিয়েছেন ব্যানার, প্যানাসাইনবোর্ড; দেয়ালে দেয়ালে সাঁটিয়েছেন পোস্টারও।
চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হাট বাজার; অফিস পাড়া থেকে প্রত্যেকটি ভোটারের ঘরে ঘরে বর্তমানে এসব বিতর্কিত, দূর্নীতিবাজ, চোরাকারবারি ও মাদক ব্যবসায় জড়িত প্রার্থীদের নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা ও চুলচেরা বিশ্লেষন।
জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করে এবং আকাশচুম্বী উন্নয়নের মিথ্যা প্রলোভনে ফেলে এসব অন্ধকার জগতের মানুষেরা কোনভাবে নির্বাচিত হলে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা কতটুকু পূরন হবে ও বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়নের সুফল আদৌ জনগন সঠিকভাবে পাবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত উপজেলার সচেতন নাগরিকরা।
সেজন্য এসব চোরাকারবারি, দূর্নীতিবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও বিতর্কিত প্রার্থীদের মিথ্যা আশ্বাসকে বিশ্বাস না করে বরং সময় থাকতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার পরামর্শ দিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি জনসম্মুখে এসব প্রর্থীদের মুখোশ উন্মোচনেরও দাবী সচেতন নাগরিকদের।
প্রথমেই কুলিয়া ইউনিয়নের এমন প্রার্থীর তালিকায় নজর রাখতেই সামনে আসে ৯ নং ওয়ার্ডের ভেন্নাপোতা গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে একাধিকবার ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার হওয়া চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী জাহিদুর রহমান জুয়েলের নাম।
তিনি এবার কুলিয়ার ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বর পদে প্রতিদ্বন্দীতায় অংশ নিয়েছেন। মঙ্গলবার মাদক ব্যবসায়ী জুয়েল দেবহাটা উপজেলা নির্বাচন অফিসে নিজের মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা রয়েছে।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারী সাতক্ষীরা থেকে পিকআপ ভ্যানে মাদকের এক বড় চালান খুলনাতে সরবরাহকালে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার পাশ থেকে ৩৪৪ বোতল ফেনসিডিল ও পিকআপ ভ্যানসহ মাদক ব্যবসায়ী জাহিদুর রহমান জুয়েল এবং তার ড্রাইভার আব্দুল মাজেদকে গ্রেফতার করে কেএমপির গোয়েন্দা পুলিশ।
এঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা (নং-১১/২১) দায়ের শেষে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে জুয়েলকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তী চলতি বছরের ৮মার্চ ওই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কেএমপির গোয়েন্দা শাখার এসআই দেলোয়ার হোসেন মাদক ব্যবসায়ী জুয়েলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এছাড়াও মাদক ব্যবসায়ী জাহিদুর রহমান জুয়েলের বিরুদ্ধে পটুয়াখালী সদর থানায় আরেকটি মাদক মামলা রয়েছে (নং-৫৩/১৮) বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে দায়েরকৃত ওই অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে। সেই মামলাটিতেও চার্জশিটভুক্ত আসামী জুয়েল। সম্প্রতি মেম্বর পদে প্রার্থী হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ি জুয়েলকে নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় চলছে তীব্র সমালোচনা।
যদিও এসংক্রান্ত আইনে বলা আছে, দন্ডপ্রাপ্তির আগ পর্যন্ত অর্থাৎ চার্জশিট ভুক্ত হলেও যেকোন ব্যাক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন; তবুও এধরনের অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িতদের প্রতিনিধিত্বে আগামীর ইউনিয়ন পরিষদ কতোটা আলোকিত হবে তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন সাধারণ ভোটাররা।
মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ততা, একাধিক মাদকের মামলা ও চার্জশিটভুক্ত আসামী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে, মেম্বর প্রার্থী জাহিদুর রহমান জুয়েল বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে মাদকের মামলা রয়েছে তা আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষেরা জানে। জেনেশুনে তারা যদি আমাকে ভোট দেয় তাহলে আমি জিতবো, না হয় পরাজিত হবো।