মাহমুদুল হাসান শাওন, দেবহাটা: সাতক্ষীরার দেবহাটায় ৪৩৯.২০ একর (১৩’শ ২০ বিঘা) বিলান জমি ও মৎস্য ঘের বিস্তৃত খলিশাখালি নামক গোটা এলাকা রাতের আঁধারে সন্ত্রাসী কায়দায় জবরদখল এবং লুটপাটের ঘটনায় ভূমিহীন নামধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফায় দ্রুত বিচার আইনে আরেকটি মামলা দায়ের হয়েছে।
সাতক্ষীরার দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক ও চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ূন কবিরের নির্দেশে বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) দেবহাটা থানায় মামলাটি রূজু করা হয়। মামলা নং-১০।
খলিশাখালির বিস্তৃর্ন ওই ১৩’শ ২০ বিঘা জমি ও মৎস্য ঘেরে বোমাবাজি ও অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দিয়ে জোরপূর্বক দখল ও লুটপাটের ঘটনায় সেখানকার ৩ শত বিঘা জমির মালিক শিমুলিয়া গ্রামের মৃত কাজী আব্দুল মালেকের পুত্র কাজী গোলাম ওয়ারেশ বাদী হয়ে সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরার বিজ্ঞ আমলী আদালত (৭)-এ দ্রুত বিচার আইনের ৪ ও ৫ ধারায় ওই মামলার এজাহার দাখিল করলে বিচারক মো. হুমায়ূন কবির দেবহাটা থানায় মামলাটি এফআইআর হিসেবে গন্য করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ওসিকে নির্দেশ দেন।
দ্রুত বিচার আইনে দায়েরকৃত ওই মামলার আসামীরা হলেন, উপজেলার ঢেপুখালী গ্রামের মৃত বক্কার গাজীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৯), একই গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে ডাকাতি সহ বহু মামলার পলাতক আসামী আকরাম হোসেন ওরফে আকরাম ডাকাত (৪২), খলিশাখালির শাহজানের ছেলে চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলার আসামী রবিউল ইসলাম (৩৪), নোড়ারচকের
মৃত মোহর আলীর ছেলে চাঁদাবাজি সহ একাধিক মামলার আসামী ইশাদ আলী (৪৫), কালীগঞ্জের পশ্চিম পাইকাড়া গ্রামের মৃত আহম্মদ পাড়ের ছেলে অহিদুল ইসলাম, খলিশাখালির দেরাজতুল্যাহর ছেলে বাবুল ওরফে বাবলু (৩৩), একই গ্রামের মৃত মফেজ ঢালীর ছেলে পৃথক দুটি চাঁদাবাজি মামলার আসামী গোলাপ ঢালী (৪৫), চালতেতলা গ্রামের জিয়াদ ঢালীর ছেলে সাইফুল ইসলাম, একই গ্রামের নওশেদ হালদারের ছেলে নূর আলী ও চাঁদপুর গ্রামের মৃত বিজয় স্বর্ণকারের ছেলে সুনীল স্বর্ণকার।
খলিশাখালির ওই বিস্তৃর্ন জমি ও মৎস্যঘেরের মধ্যে ৩শত বিঘা পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে উল্লেখ করে বাদী গেলাম ওয়ারেশ লিখিত এজাহারে বলেছেন, ১৯৫৩ সাল থেকে তার পরিবার খলিশাখালির ওই জমি ভোগদখল করে আসছেন তার পরিবার। পিতা আব্দুল মালেক এর মৃত্যুর পর গোলাম ওয়ারেশ ও তার অপরাপর ভাই-বোনেরা সেখানে শান্তিপূর্ন ভাবে নানা প্রজাতির মাছ চাষ করতেন।
মৎস্য ঘেরের জন্য সেখানে কংক্রিটের নির্মিত একটি পাকা বাসা, গরু-ছাগল ও কবুতরের খামার এবং ঘেরের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২৫টি বাসা নির্মান করেন তারা। এসব বাসায় রাত্রিকালীন সময়ে পৃথক পৃথক কর্মচারী মৎস্য ঘেরের পাহারার কাজে নিয়োজিত ছিল।
এজাহারে তিনি আরো বলেছেন, গত ১১ সেপ্টেম্বর ভোররাতে মামলার আসামীরা বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র, রাম দা, চাইনিজ কুড়াল সহ বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মাছ ধরার বেড়জাল (নেটের তৈরী টানা জাল) নিয়ে তাদের মালিকানাধীন খলিশাখালির ওই ৩ শত বিঘার মৎস্য ঘেরটিতে অনধিকার প্রবেশ করে।
এসময় দখলকারীরা মুহুমুহু বোমা বিষ্ফরন ও গুলি ছুড়ে গোটা খলিশাখালি এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে জোরপূর্বক তাদের মৎস্য ঘেরটি বেআইনীভাবে দখলে নেয়। একপর্যায়ে সেখানকার কর্মচারীরা বাঁধা দিতে গেলে তাদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি এবং মারপিট করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়ে এসব ভূমিহীন নামধারী সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বে তাদের অনূসারীরা গোটা মৎস্য ঘেরে জাল টেনে মাছ লুট করে বলেও তিনি এজাহারে উল্লেখ করেছেন।
মামলার বাদী কাজী গোলাম ওয়ারেশ আদালতের কাছে উপরোক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারিসহ সুবিচার প্রার্থনা করেছেন।
কাজী গোলাম ওয়ারেশের পুত্র সুরুজ ওয়ারেশ বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষের বৈধ মালিকানাধীন ওই ৩ শত বিঘা জমির মৎস্য ঘের জবরদখলের পর অন্যান্য মালিকদের মিলিয়ে সেখানকার গোটা ১৩,শ ২০ বিঘা এলাকায় সন্ত্রাসের রামরাজত্ব কায়েম করে চলেছে দখলদাররা।
মামলার উল্লেখিত আসামীরা জেলা ও জেলার বাইরের একাধিক লাঠিয়াল ও ঢালী বাহিনী এবং হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বহু মামলার আসামী, কুখ্যাত ও পলাতক সন্ত্রাসীদের নিয়ে বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছে।
উল্লেখ্য, খলিশাখালি দখলের ঘটনায় ইতোপূর্বে সেখানকার জমির আরেক মালিক সখিপুরের আলহাজ্ব আনছার আলী আদালতে পৃথক একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। যেটি বর্তমানে জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে।