স্টাফ রিপোর্টার : সাতক্ষীরার দেবহাটায় রাতের আঁধারে একাধিক নাশকতা মামলার আসামীসহ দলবল নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ওয়ার্ড কার্যালয়ের কথিত ব্যানার টানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি জমি জবরদখলে নিয়েছে সখিপুরের বহুল বিতর্কিত দালাল জুটি হিসেবে পরিচিত লাফনা শহিদুল ও কাঁকড়া সালাম।
সরকারি জমি জবরদখলকারি শহিদুল ইসলাম ওরফে লাফনা শহিদুল উত্তর সখিপুর গ্রামের মৃত কেরামত আলী সরদারের ছেলে এবং আব্দুস সালাম গাজী ওরফে কাঁকড়া সালাম একই গ্রামের মৃত বাদল গাজীর ছেলে। সখিপুর ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষের কাছে অন্যতম ঘৃন্য দালাল ও বাটপার জুটি হিসেবে সুপরিচিত ওই শহিদুল এবং সালাম।
একসময়ের দিনমজুর ও মাটি কাটা লাফনা দলের সর্দার এবং ক্ষুদ্র কাঁকড়া ব্যবসায়ী থেকে রাতারাতি নেতা বনে লাফনা শহিদুল এবং কাঁকড়া সালামের বিরুদ্ধে এলাকায় আ.লীগের নাম ভাঙিয়ে সরকারি জমি দখল, জামায়ত-শিবিরের নেতাকর্মীদের পুলিশ দিয়ে ধরানো; আবার টাকার বিনিময়ে ছাড়ানো,
তাহাজ্জুদের নামাজ পড়াবস্থায় গর্ভবতী-বৃদ্ধাসহ বহু নারীকে জামায়তের নারী কর্মী সাজিয়ে গ্রেফতার করানো, শালিস বিচারের নামে অসহায় মানুষের অর্থ হাতিয়ে নেয়া, নাশকতা মামলার আসামী ও নাশকতাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বানিয়ে তাদের দিয়ে নানা অপকর্ম এবং এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি, বিনা পুজিতে প্রভাব খাটিয়ে সখিপুর বাজারের ইজারাদারদের থেকে
প্রতিমাসে অর্থ আদায়, সরকারি জমি দখল বা বেদখল হলে মোটা টাকা চাঁদা আদায়, সরকারি ঘর বরাদ্দ বা বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা পাইয়ে দেয়ার নামে অসহায় মানুষদের থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সীমাহীন অভিযোগ রয়েছে।
তাছাড়া সখিপুর বাজারের নাইট গার্ড এবং আন্ত: জেলা চোর চক্রের সাথে গোপনে সম্পৃক্ত থেকে বিভিন্ন সময়ে সখিপুর বাজারে দূর্ধর্ষ চুরি সংঘটিতের সাথেও ওই দালাল চক্রের সম্পৃক্ততার অভিযোগ সেখানকার মানুষের মুখে মুখে। সম্প্রতি দালাল শহিদুল ও সালামের এসব কূ-কৃর্তি তুলে ধরে এলাকায় পোস্টারিং করেন ভুক্তভোগীরা।
দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের সাইনবোর্ডকে ঢাল বানিয়ে এসব অপকর্ম চালিয়ে আসায় ওই লাফনা শহিদুল ও কাঁকড়া সালাম বর্তমানে স্থানীয় আওয়ামী লীগের গলায় কাটা হয়ে উঠেছে। দলের শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ তাদের দুজনকে আ.লীগের ‘বিষফোঁড়া’ বলেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
দেবহাটা উপজেলার সখিপুর বাজার সাব রেজিস্ট্রি অফিসের পাশে সোহাগ ভ্যারাইটি স্টোরের বিপরীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই জমিটি সম্প্রতি রাতের আঁধারে আ.লীগের ওয়ার্ড কার্যালয়ের কথিত ব্যানার টানিয়ে দখলে নেয়ার পর মঙ্গলবার ভোররাত থেকে সেখানে একাধিক নির্মান শ্রমিক দিয়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মানের কাজ শুরু করান লাফনা শহিদুল ও কাঁকড়া সালাম।
পরে বেলা ১১টার দিকে জমি দখলের বিষয়টি জানতে পেরে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর দায়িত্বরত জাহাঙ্গীর হোসেন ঘটনাস্থলে পৌছে অবৈধ স্থাপনা নির্মানের কাজ বন্ধ করে দেন।
দেবহাটা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সখিপুরের বাসিন্দা মোমিনুর রহমান জানান, একসময় পানি উন্নয়ন বোর্ডে ওই যায়গাটিতে পোস্ট অফিস ছিল। পরে আধুনিকায়নের জন্য পোস্ট অফিসটি বাজারের মধ্যে পুন:নির্মান করা হলে সরকারি নিয়ম মোতাবেক ওই যায়গাটি বরাদ্দ পেতে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে লিখিত আবেদন করেন তিনি। একইসাথে ওই জমিটির ভোগদখলেও ছিলেন তিনি।
মোমিনুর রহমান বলেন, ওই যায়গাটিতে আমার ভোগদখলীয় পূর্বের ঘরটি ২১ অক্টোবর মেরামত করছিলাম। এসময় লাফনা শহিদুল ও কাঁকড়া সালাম সেখানে এসে আমার কাছে লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা চেয়ে আমার সাথে তাদের একাধিকবার কথা বলার সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে।
আমি মোবাইলে বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি ঢাকায় থাকায় আমাকেই শহিদুলের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করতে বলেন। বিপদে পড়ে কোন উপায় না পেয়ে সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে শহিদুলকে নিয়ে সখিপুর বাজারের রবীন্দ্র নাথের হোটেলে গিয়ে ভুড়িভোজ করিয়ে ৫০ হাজার টাকা দিই।
যা আমার কয়েকজন সহকর্মীও দেখেছেন। এরপর সন্ধ্যা হতে না হতেই আবারো দলবল নিয়ে আমার কাছে এসে বাকি ৫০ হাজার টাকা দাবি করে শহিদুল এবং তাৎক্ষনিক টাকা না দিলে সে আমার ওই ভোগদখলীয় যায়গাটি দখল করে নিবে বলেও হুমকি দেয়।
আমি বাকি টাকা দেয়ার জন্য সময় চাইলে তারা আমার ওপর রাগ করে ওই রাতেই দলবল নিয়ে ওয়ার্ড আ.লীগের ব্যানার টানিয়ে জমিটি দখল করে নেয়। এব্যাপারে আদালতে একটি চাঁদাবাজি মামলা করেছেন বলেও জানান মোমিনুর রহমান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও সাইদুর রহমান বলেন, শহিদুল, সালাম সহ তাদের লোকজন পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি জবরদখল করে যে অবৈধ স্থাপনা নির্মান করছিলেন তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একইসাথে তাদের বিরুদ্ধে নোটিশ প্রদানসহ অন্যান্য আইনী পদক্ষেপ গ্রহনের প্রক্রিয়া চলছে।