মাহমুদুল হাসান শাওন, দেবহাটা : দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। ধর্মীয় ঐতিহ্য ও ভাব-গাম্ভীর্য্যরে মধ্য দিয়ে ২১ জুলাই ঈদুল আযহা উপলক্ষে পশু কোরবানি করবেন সারাদেশের ধর্মপ্রান মুসলিমরা।
প্রতিবছর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মুসলিম উম্মাহর এ বৃহৎ ধর্মীয় উৎসবটি পালিত হলেও, এবছর মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে অনেকটাই ফিঁকে হতে চলেছে ঈদ উৎসবের আনন্দ।
করোনা পরিস্থিতির কারনে দেশের দক্ষিনাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ কোরবানির পশুর হাট পারুলিয়া গরুহাটটিতে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে সেই চিত্র।
প্রতিবছর ঈদুল আযহাকে ঘিরে পারুলিয়া গরু হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বতষ্ফূর্ত উপস্থিতিতে জমজমাট পশু কেনাবেচা হলেও এবার রীতিমতো কোরবানির পশু কেনাবেচায় ভাটা পড়েছে।
একদিকে লকডাউনের কারনে দীর্ঘদিন গরুহাটের কার্যক্রম বন্ধ, অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনলাইন পশুর হাট চালু করায় ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি কমেছে পারুলিয়া গরুহাটে।
দীর্ঘদিন পর বৃহষ্পতিবার সরকারের পক্ষ থেকে কোরবানির পশুর হাটটি বসানোর অনুমতি দেয়া হলেও ক্রেতার সংখ্যা কম থাকায় তীব্র লোকসানের মুখে পড়েছেন খামারীরা। বছর ধরে গরু-ছাগল লালন পালন করেও এতোদিন হাট বন্ধ থাকায় সেগুলো বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ খামারী ও ব্যবসায়ীদের।
তাছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে এবছর অধিকাংশের আর্থিক অবস্থা নাজুক হওয়ায় ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও পশু কোরবানি করতে পারছেননা অনেক মধ্যবিত্তরা। এতে করে অন্যান্য বছরের তুলনায় চাহিদা কম থাকায় বাধ্য হয়ে অনেকটা কম দামেই পশু বিক্রি করতে হচ্ছে খামারীদের।
বৃহষ্পতিবার পারুলিয়া পশুহাটে গরু বিক্রেতা ও খামারী আলমগীর হোসেন বলেন, অনেক আশা নিয়ে দুটি মাঝারী সাইজের গরু বিক্রির জন্য হাটে এসেছিলাম। লালন পালনে যেহারে খরচ হয়েছে, তাতে আশা ছিল নুন্যতম দেড়লাখ টাকায় গরু দুটি বিক্রি করতে পারবো।
কিন্তু ক্রেতার উপস্থিতি কম থাকায় এক লাখ তেইশ হাজার টাকায় গরু দুটি বিক্রি করে দিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।
পারুলিয়া সরদার বাড়ির এক গরু খামারী বলেন, নিজের খামারের দুটি গরু হাটে এনেছি। একটির ওজন আঠারো মন, আরেকটি আট মন। আঠারো মন ওজনের গরুটি সাড়ে তিন লাখ টাকা এবং আট মন ওজনের গরুটি দেড় লাখ টাকা দাম চাইছি।
কিন্তু ক্রেতার উপস্থিতি কম থাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা গরু নিয়ে রোদের মধ্যে হাটে দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। শেষ অবধি গরু দুটি বিক্রি করতে পরবেন কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন ওই খামারী।
অপরদিকে মাঝারি সাইজের খাসি ছাগল ৮ থেকে ১২ হাজার টাকায় এবং প্রায় ৩০ কেজি ওজনের বড় সাইজের খাসি ছাগল ২৫ থেকে ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে পশুহাটে।
পারুলিয়া পশু হাটের ইজারাদার আলহাজ্ব আল ফেরদাউস আলফা বলেন, যদিও পশুহাটে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে বেচাকেনা করা কারোও পক্ষে সম্ভব নয়, তার পরও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।
বারবার জীবানু নাশক স্প্রে করা হচ্ছে, মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা হচ্ছে, হাটের টিউবঅয়েল গুলোতে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। তাছাড়া সার্বক্ষনিক মাইকিংয়ের মাধ্যমে মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে হাটে প্রবেশের জন্য তাগিদ দেয়া হচ্ছে।
আলফা আরো বলেন, এবছর কোটি টাকায় হাটটি ইজারা নিয়েছি। সারা বছরের মধ্যে মুলত ঈদুল আযহার আগের পাঁচটি হাটের ওপর আমাদের লাভ লোকসান নির্ভর করে। এবার একটি হাটও আমাদের কাছে লাভের না।
দীর্ঘদিন প্রশাসনের নির্দেশে হাটটি বন্ধ থাকায় আমরা তীব্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। যদিও শেষ মুহুর্তে সরকার হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা বা পশু কেনাবেচা খুবই কম থাকায় আমরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সেজন্য যে সংখ্যক হাট বন্ধ রাখা হয়েছে, সেগুলোর টাকা ইজারাদারকে ফেরত দেয়ার জন্যও জেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।