মাহমুদুল হাসান শাওন, দেবহাটা : মাস শেষে নিয়ম করে তুলছেন বেতনের টাকা, গুনে গুনে তা খরচ করছেন আরাম আয়েশ ও পরিবারের পিছনে; অথচ নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বা ছুটি ব্যাতীত অন্যান্য কর্মদিবস গুলোতে নিয়মিত অফিসে আসছেননা দেবহাটা উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের অফিসাররা।
এতে করে দিনদিন দূর্ভোগ বাড়ছে বিভিন্ন দপ্তরের সেবাগ্রহীতা মানুষের। তবে সব দপ্তরের অবস্থা এক নয়। কিছু কিছু দপ্তরের অফিসাররা আবার নির্ধারিতের চেয়েও বেশি কাজ করছেন সরকারের উন্নয়ন মুলোক নানা প্রকল্প বাস্তবায়ণ ও সেবাপ্রার্থীদের চাহিদা পূরণে।
সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঘড়ির কাটায় তখন বেলা ১১টা ছাড়িয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে প্রয়োজনীয় কাজে এসেছেন সেবাগ্রহীতারা। কিন্তু এসব দপ্তরের অফিসাররা স্ব-স্ব কার্যালয়ে না থাকায় দীর্ঘক্ষণ অফিসের সামনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছেন দপ্তর প্রধানের আসার।
কোন কোন দপ্তরের অফিস প্রধানের দরজায় ঝুলছে তালা, আবার কারো কারো অফিস খোলা থাকলেও অনুপস্থিত সেসব অফিসাররা। কেবলমাত্র চেয়ার টেবিল ছাড়া ওইসব দপ্তরে নেই অফিসার বা কর্মচারীরা। ফলে খা-খা করছে দপ্তরগুলো, আর বাইরে দাড়িয়ে বিরক্ত হচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা।
ভুক্তভোগী সেবাগ্রহীতারা বিষয়টি দেবহাটা প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দদের জানিয়ে চলমান দূর্ভোগের প্রতিকার চাইলে, কয়েকজন গনমাধ্যমকর্মী সেখানে যান সত্যতা অনুসন্ধানে।
এসময় সরেজমিনে দেখা যায়, তাছলিমা আক্তার সম্প্রতি অন্যত্র বদলি জনিত বিদায় নেয়ায় এবং নতুন পদায়িত এ.বি.এম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী এখনও পাইকগাছা থেকে দেবহাটাতে কর্মস্থলে যোগদান না করায় শুধু চেয়ার টেবিল পড়ে আছে নির্বাহী অফিসারের অফিসে।
তালা ঝুলছে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জিএম র্স্পশ, কৃষি অফিসার শরীফ মোহাম্মদ তিতুমীর, জনস্বাস্থ্য প্রোকৌশলী জুয়েল হাসান ও আনসার ভিডিপির নার্গিস পারভীনের অফিসের দরজায়।
আর দরজা খোলা থাকলেও অফিসে আসেননি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সবুজ, সমবায় অফিসার আকরাম হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার শওকত ওসমান, একাডেমিক সুপার ভাইজার মিজানুর রহমান, এবং অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম আব্দুল্যাহ আল মামুন।
তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সহকারী কমিশনার (ভুমি) পদে কোন ম্যাজিস্ট্রেটের পদায়ণ না থাকায় এবং সদ্য বিদায়ী নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার দায়িত্বরত কালীন সময়ে মিউটেশন না করে অধিকাংশ নামজারি কেস গুলো ঝুলিয়ে রেখে যাওয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত কর্মযজ্ঞে জটলা বেঁধেছে উপজেলা ভূমি অফিসে।
অফিসের কর্মচারীদের দেয়া তথ্য ও মুঠোফোনে তাদের কয়েকজনের কাছে অনুপস্থিতির কারন জানতে চাইলে জবাবে অধিকাংশরাই দিচ্ছেন নানা অজুহাত। কারো দাবী তিনি মিটিংয়ে গেছেন তো কেউ বলছেন জেলা অফিসে। কেউবা আবার যুক্তি খাড়া করে বলছেন, ইউএনও নেই তাই কাজের চাপও কম সেজন্য সময়মতো অফিসে আসেননি।
তবে ভুক্তভোগী সেবাগ্রহীতাদের দাবী, মাঝেমধ্যেই প্রয়োজনীয় কাজে অফিসে আসলে তারা দেখা পাননা সংশ্লিস্ট অনেক অফিসারকেই। ফলে অকারনে টাকা খরচ করে যাতায়াত ও ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে ফিরে যেতে হয় এসব সেবাগ্রহীতাদের।
ভুক্তভোগীরা সরকারি অফিসারদের স্ব-স্ব কর্মস্থলে নিয়মিত উপস্থিতির ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
এদিকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত অফিসে উপস্থিতি সংক্রান্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের বিধিমালা ২০১৯ মতে, বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত, বিনা অনুমতিতে কর্মস্থল ত্যাগ ও দেরিতে কর্মস্থলে উপস্থিতির দ্বন্ডের বিধান রয়েছে।
এমনকি এধরনের অপরাধের জন্য আলাদা আলাদা আইনে কারন দর্শানোর নোটিশ থেকে শুরু করে কার্যদিবস হিসেবে একদিন থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত দৈনিক হারে মুল বেতনের সমপরিমান অর্থ কর্তনের সুস্পষ্ট বিধানও রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের জারিকৃত ওই বিধিমালায়।