মাহমুদুল হাসান শাওন, দেবহাটা : সাতক্ষীরার দেবহাটায় সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়ে বসতবাড়ি ভাংচুরসহ শিশু সন্তানের সামনে ফেলে শিল্পী খাতুন (৩০) নামের এক যুবতী ও তার বৃদ্ধা মাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার উত্তর সখিপুরে এ সংঘবদ্ধ হামলা ও মারপিটের ঘটনাটি ঘটে।
এঘটনায় গুরুতর আহত শিল্পী খাতুন বর্তমানে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি উত্তর সখিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে একটি সরকারি জমিতে বৃদ্ধা মা ও শিশুকন্যাসহ পরিবার পরিজন নিয়ে কুঁড়ে ঘর বেঁেধ বসবাস করতেন।
মারপিটে আহত শিল্পী খাতুন রক্তাক্ত জখম হয়েছে। তার মাথায় অন্তত পাঁচটি সেলাই সহ সারা শরীরে নির্মমভাবে মারপিটের চিহ্ন রয়েছে রয়েছে বলে জানিয়েছে দায়িত্বরত চিকিৎসক। মারপিট পরবর্তী খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিল্পী খাতুনের জবানবন্দি নিয়েছে দেবহাটা থানা পুলিশ।
এলাকাবাসী জানায়, কয়েক যুগ ধরে উত্তর সখিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে একখন্ড সরকারি জমিতে কুঁড়ে ঘর বেঁধে বসবাস করে আসছিল শিল্পীর পরিবার। বাবা না থাকায় স্বামী পরিত্যাক্তা শিল্পী খাতুন তার বৃদ্ধ মা ও শিশুকন্যাকে নিয়ে ওই কুঁড়ে ঘরটিতে বসবাস করতেন।
গত ৬মাস আগে শিল্পীকে বিয়ে করে স্থানীয় মৃত আদর আলীর ছেলে চাউল ব্যবসায়ী হারান গাজী। হারান গাজীর পূর্বের স্ত্রী-সন্তান থাকা স্বত্ত্বেও বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে শিল্পীকে বিয়ে করে সে। বিয়ের পর শিল্পীকে তার বাড়িতে না তুলে, বরং শিল্পীর বাবার বাড়িতেই যাতায়াত ও রাত্রিযাপন করতো হারান।
কিছুদিন আগে পরিবারের চাপে পড়ে হারান গাজী শিল্পী খাতুনকে ডিভোর্স দেয়। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে হারান তার সদ্য ডিভোর্সী স্ত্রী শিল্পী খাতুনের ঘরে প্রবেশ করলে শিল্পীর মা বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও চেয়ারম্যান-মেম্বারকে খবর দেন।
কিন্তু চেয়ারম্যান-মেম্বাররা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই হারান গাজীকে ছিনিয়ে নিতে লাঠিশোটা নিয়ে শিল্পীর বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায় হারানের প্রথম স্ত্রী রেশমা খাতুন, ছেলে রিপন হোসেন, বাবু’র ছেলে মনিরুল ও শহিদুল ইসলাম, মনিরুলের স্ত্রী, জহুর আলীর স্ত্রী, আনারুলের স্ত্রীসহ কমপক্ষে ২০ জন নারী-পুরুষ।
হামলাকারীরা শিল্পী খাতুনের ঘরের দরজা ও জানালা ভেঙে ঘরে ভিতরে প্রবেশ করে ভিকটিম শিল্পীকে তার শিশু সন্তানের সামনে ফেলে সংঘবদ্ধভাবে লাঠিশোটা কমপক্ষে ১০ মিনিট ধরে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে এবং শিল্পীর ঘরে আটক থাকা হারান গাজীকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। মারপিটে শিল্পী খাতুনের সারা শরীরে জখমসহ মাথা ফেঁটে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। একপর্যায়ে স্থানীয়রা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিসহ থানা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং আহত শিল্পী ও তার মায়ের জবানবন্দি নেন।
দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ বলেন, আহত শিল্পী খাতুন বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।