উখিয়া (কক্সবাজার), বৈশাখ (২৬ এপ্রিল) : ধৈর্য্য ধরুন, সামনে নতুন দিন আসছে। ডেনিশ সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সাথে আছে। ডেনিশ সরকার রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে থেকে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। আপনারা অবশ্যই আবার মায়ানমারে নিজ বসত ভিটায় সুন্দর জীবন যাপনের সুযোগ পাবেন।
প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে মায়ানমারে নিজ বসত ভিটায় ফিরে যেতে আগ্রহী অশ্রুসিক্ত রোহিঙ্গা নারী মাহতুদা বেগম (২৫)কে এভাবে শান্তনা দেন ডেনিশ ক্রাউন প্রিন্সেস “মেরি অব ডেনমার্ক (ঈৎড়হি চৎরহপবংং গধৎু ড়ভ উবহসধৎশ)।
ডেনিশ ক্রাউন প্রিন্সেসের তিনদিনের বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ সকালে প্রথমে উখিয়ার রোডিঙ্গা ক্যাম্প-৫ এ পৌঁছালে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত রাজকুমারীকে স্বাগত জানান।
এসময় রাজকুমারীকে ক্যাম্পে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রম এবং ডেনিশ সাহায্য পুষ্ট এনজিওসহ দেশী-বিদেশী এনজিওসমূহের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করা হয়। রাজকুমারী ক্যাম্পসমূহের জনসংখ্যার পরিমাণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সুরক্ষা ব্যবস্থা সুপেয় পানির যোগান প্রভৃতি বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। একই সময় তিনি পাহাড়ের ভাঙ্গন রোধ ও পরিবেশ সুরক্ষায় ডেনিশ রিফিউজি কাউন্সিল (উজঈ) এর উদ্যোগে বাস্তবায়িত বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
পরে রাজকুমারী ক্যাম্প ৬ ও ৮ পরিদর্শনে যান। উভয় ক্যাম্পের রাস্তার দু’পাশের শত শত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তিনি হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। তিনি হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার উভয় পাশের কয়েকজন শরণার্থীর সাথে কথা বলেন। এছাড়া ক্যাম্প ৮ি এর ওয়াচ টাওয়ারে উঠে তিনি বিভিন্ন ক্যাম্পের ভিউ বা সাইট সিং করেন।
পরে তিনি ক্যাম্প ৬ এর শরনার্থী মাহতুদা এর ক্যাম্পে যান এবং মাটিতে বিছানো পাটিতে বসে দো-ভাষীর মাধ্যমে তার সাথে কথা বলেন। কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছে, এখন কেমন আছে, খাবার পানি পয়নিস্কাশন ব্যবস্থা নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে তিনি এসময় জানতে চান।
রোহিঙ্গা মাহতুদা রাজকুমারীকে জানান, বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য সহযোগিতায় তারা এখানে ভালো আছে। স্থায়ী ঘরের পাশাপাশি চলাচলের পাকা রাস্তাসহ শিক্ষা স্বাস্থ্য এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুবিধা পাচ্ছে। তবে সে এবং অন্যান্য রোহিঙ্গারা মায়ানমারে নিজ বসত ভিটায় ফিরে যেতে আগ্রহী। ক্যাম্পের ছোট ঘরে থাকার চেয়ে তারা নিজ দেশে গিয়ে সুন্দর জীবন কাটাতে চায়। মাহতুদা এসময় নিজ দেশে ফেরত যেতে রাজকুমারী ও ডেনিশ সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
রাজকুমারী মাহতুদাকে শান্তনা দিয়ে বলেন, শিগ্রই নতুন দিন আসবে। তবে তাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। আশা করা যায়, রোহিঙ্গারা আবার তাদের বসত ভিটায় গিয়ে সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবে।
পরে রাজকুমারী রোহিঙ্গা কো-অর্ডিনেশন অফিস (জঈঙ) তে গিয়ে কয়েকজন উপকারভোগী রোহিঙ্গার সাথে কথা বলেন। এখানেও রোহিঙ্গার তাদের বিভিন্ন বিষয় রাজকুমারীকে অবহিত করেন এবং নিজ দেশে ফিরে যেতে ডেনমার্ক সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। রাজকুমারী তাদের শান্তনা দেন।
পরে তিনি এখানে একটি চাম্পা গাছের চারা রোপন করেন ও ডেনিশ সোস্যাল মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এসময় তিনি মানবিক কারনে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানান।
বিকেলে রাজকুমারী উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের পাতাবাড়ি গ্রামে স্থানীয় জনসাধারণের সাথে কথা বলেন। রোহিঙ্গা আসার পর স্থানীয়দের জীবন ধারনে কী প্রভাব পড়েছে – এ বিষয়ে তিনি জানতে চান। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে এসময় রাজকুমারীকে বিভিন্ন বিষয় অবহিত করা হয়।
ডেনমার্কের উন্নয়ন ও সহায়তা বিষয়ক মন্ত্রী মি. ফ্লেমিং মোলার মর্টেনসেন (গৎ. ঋষবসসরহম গড়ষষধৎ গড়ৎঃবহংবহ), বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনিশ রাষ্ট্রদূত মিজ উইনি ইস্ট্রপ পিটারসেন (গরং. ডরহহরব ঊংঃৎঁঢ় চবঃবৎংবহ) ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রাজকুমারীর সাথে উপস্থিত ছিলেন।