অনলাইন ডেস্ক : তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আজ আশা প্রকাশ করেছেন যে, প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া (পিসিআই)-তে ‘বঙ্গবন্ধু মিডিয়া সেন্টার’ স্থাপন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক জোরদার ও জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে, এই মিডিয়া সেন্টারটি দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জানা এবং দু:স্থ মানবতার কল্যাণে তাঁর সংগ্রামের কথা জানতে সাহায্য করবে।’ মন্ত্রী আজ বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া (পিসিআই) তে বহু-কাক্সিক্ষত ‘বঙ্গবন্ধু মিডিয়া সেন্টার’ উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে নয়াদিল্লীস্থ বাংলাদেশ মিশনের সহায়তায় ক্লাব ভবনের দ্বিতীয় তলায় এই মিডিয়া সেন্টারটি স্থাপন করা হয়েছে।
এ সময় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান, ইন্ডিয়ান মিনিস্ট্রি অব এক্সটার্নাল এ্যাফেয়ার্স (এমইএ)’র যুগ্ম সচিব (বাংলাদেশ-মিয়ানমার) স্মিতা পান্ত, পিসিআই সভাপতি উমাকান্ত লাখেরা, বাংলাদেশের জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এবং পিসিআই’র সাবেক সভাপতি গৌতম লাহিড়ী। পিসিআই’র মহাসচিব বিনয় কুমার অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
তথ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদান এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের খবর বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে ভারতীয় সাংবাদিকদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন যা বিশ্বের সমর্থন লাভে অনেক সহায়ক হয়েছিল।
মন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসন আমলে দুটি দেশের মধ্যেকার বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। তিনি আরো বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেলেও, দুটি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জনগণের সঙ্গে জনগণের এবং সাংবাদিকদের সাথে সাংবাদিকদের যোগাযোগ বাড়াতে আমাদের এখনও অনেক কাজ করতে হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে তাঁর জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। তাই বঙ্গবন্ধুকে জানার মাধ্যমে আপনারা বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রামের কথা জানতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বঙ্গবন্ধুর সকল গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে তাঁর আত্মত্যাগ এবং পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর কবল থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর আন্দোলনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতের সহায়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ভারত ও এর জনগণের সহায়তা ছাড়া নয় মাসের যুদ্ধে পাকিস্তানের কাছ থেকে দেশকে (বাংলাদেশ) মুক্ত করা কখনোই সম্ভব ছিল না।’ তিনি আরো বলেন, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাহায্য ছাড়া বঙ্গবন্ধুর মুক্তি সম্ভব হতো না। ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার পক্ষে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সমর্থন লাভের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ভারত সরকারের পাশাপাশি দেশটির সাধারণ জনগণও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনত যুদ্ধে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এ সময় তিনি গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা ১০ মিলিয়ন বাংলাদেশী শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত সরকার ও দেশটির জনগণের আন্তরিক সমর্থন ও সহায়তার কথা গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে উল্লেখ করেন।
এ সময় তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি বিশেষ করে জীবন উৎসর্গকারী ভারতীয় সেনা সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি আরো বলেন, ‘১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও ‘মুক্তিবাহিনীর’ সাথে রক্তদানকারী ভারতীয় সেনা সদস্য ও জনগণের প্রতি আমার আন্তরিক ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় সাংবাদিকদের ভূমিকার উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিদেশী সাংবাদিক সহ প্রায় ২০০ সাংবাদিক মেহেরপুরে বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের সংবাদ কাভার করার জন্য গেয়েছিলেন এবং তারা এ সংবাদ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় সাংবাদিকদের ভূমিকা বিশাল।
এ উপলক্ষে বক্তৃতাকালে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় সাংবাদিকদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত যুদ্ধের বিষয়ে বহির্বিশ্বকে অবহিত করার জন্য তাদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ভিসা প্রক্রিয়ায় নমনীয়তার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু’দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেশ কিছু ভারতীয় বাংলাদেশের উৎপাদন ও সেবা খাতে কাজ করছেন এবং দেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় অনেক অবদান রেখে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এছাড়াও পর্যটন ও চিকিৎসার উদ্দেশ্যে প্রতিবছর ২০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী মানুষ ভারতে ভ্রমন করেন।
তিনি বলেন, তাই হাইকমিশন সারা ভারতের বিভিন্ন স্থানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এ ধরনের আরও কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করছে, যা তথ্য কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ায় (পিসিআই) ‘বঙ্গবন্ধু মিডিয়া সেন্টার’ খোলার বিষয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই কেন্দ্রটিকে তথ্য কেন্দ্র এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মজীবন ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন সম্পর্কে জানার জন্য ব্যবহার করা হবে।
হাইকমিশনার আরও বলেন, এটি (বঙ্গবন্ধু মিডিয়া সেন্টার) ভারতীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আমাদের দৃঢ় সম্পর্কের লক্ষ্যে আমাদের যাত্রায় একটি মাইলফলক হিসাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। পরে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার (পিসিআই) মধ্যে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
ক্লাবের সেক্রেটারি জেনারেল বিনয় কুমার এবং মিনিস্টার (প্রেস) শাবান মাহমুদ তাদের নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এর আগে, মন্ত্রী রাজ ঘাটে উপমহাদেশের কিংবদন্তি নেতা ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। তিনি রাজ ঘাটে রাষ্ট্রীয় স্বচ্ছতা কেন্দ্রও পরিদর্শন করেন।
প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া (পিসিআই)-তে স্থাপিত ‘বঙ্গবন্ধু মিডিয়া সেন্টার’-এ একটি প্রদর্শনী হল ও গ্রন্থাগারসহ আধুনিক ডিজিটাল সুবিধা থাকবে। এ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।