ডেস্ক রিপোর্ট : ২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকার কারণে মানুষের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।

এ বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ করে, যা ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়।

স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির বড় একটি স্বীকৃতি। অন্যদিকে এ বছর দেশে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশব্যাপী সংক্রমণ এবং মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ায় বছরের প্রায় অর্ধেক সময় জুড়ে ধারাবাহিক লকডাউনের কারণে জনজীবনে সঙ্কট নেমে আসে। করোনাকালীন এই সঙ্কটের মধ্যেও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটে।

এ ছাড়া ‘ক্রসফায়ার’ বা বন্দুকযুদ্ধসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বছরের বিভিন্ন সময়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ ও গুমের ঘটনাও থেমে থাকেনি ২০২১ সালে।

২০২১-এর অন্যতম উদ্বেগের বিষয় ছিল ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার  ঘটনাসমূহ। শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে এ বছরের ১৩ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে  হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

বিগত বছরের ন্যায় এ বছরও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ধারাসমূহের অপপ্রয়োগসহ নানাভাবে  মতপ্রকাশের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে আটকে রেখে হয়রানি-নির্যাতন এবং পরে ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে
মামলা দিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় দেশে-বিদেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

নারীর প্রতি সহিংসতা ২০২১ সালের আরেকটি উদ্বেগজনক বিষয়। বিশেষ করে ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণ পরবর্তী  হত্যা, যৌন হয়রানি, পারিবারিক নির্যাতনের নানা ঘটনা এবং এর ধরনেও ভয়াবহতা লক্ষ্য করা গেছে। পাশাপাশি শিশু  হত্যা ও নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিকদের গুলি  করে হত্যা এবং নির্যাতনের ঘটনাও ছিল উল্লেখযোগ্য।

২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের উখিয়ায় লাম্বাশিয়া ক্যাম্পে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। বাংলাদেশে  আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মিয়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিয়ে মুহিবুল্লাহ দেশে-বিদেশে সরব ছিলেন।

পত্রপত্রিকায়  প্রকাশিত সংবাদসূত্রে জানা যায়, বেশ কিছু দিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনবিরোধী একটি গোষ্ঠী মুহিবুল্লাহকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গ-ামারা এলাকায় এস. আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিকরা তাদের  মজুরি বৃদ্ধি, ইফতারের সময় কর্মবিরতি রাখাসহ বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত ১৭ এপ্রিল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যান্টিনের সামনে জড়ো হলে পুলিশ অতর্কিত গুলি চালায়।

এতে ঘটনাস্থলে ৪ জন এবং পরবর্তী সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৩ জনসহ মোট ৭ জন শ্রমিক মারা যান। এছাড়া আহত হন কমপক্ষে ২৫ জন শ্রমিক।

এ বছর স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন, বিশেষ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং দেশব্যাপী পৌর ও ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে একের পর এক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।

এর ফলে মানুষের মধ্যে রাজনীতি ও নির্বাচনবিমুখতা তৈরি হচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য অশুভ। সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে বর্তমান নির্বাচন কমিশন মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *