চট্টগ্রাম, ১৬ পৌষ (৩১ ডিসেম্বর) : আজ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ পুলিশ সুপার এম শামসুল হক চৌধুরীর আত্মত্যাগের বীরত্বগাঁথা অবলম্বনে নির্মিতব্য পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘দামপাড়া’ এর শুভ মহরত অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহামুদ এমপি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের মহামানব, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদদের, ৭৫ এর সেই কালো রাত্রিতে নিহত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবসহ সকল শহিদদের, জাতীয় চার নেতাকে, রাজারবাগ ও চট্টগ্রামসহ সমগ্র বাংলাদেশে পুলিশবাহিনীর যেসব সদস্য জীবন দিয়েছেন।

মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মেট্রোপলিটন পুলিশ ছিল না তখন চট্টগ্রামসহ সমগ্র চট্টগ্রাম জেলার এসপি ছিলেন এম শামসুল হক চৌধুরী। ছাব্বিশে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বাধীনতার ঘোষণা বার্তা দ্রুত চট্টগ্রামে পৌঁছে। ২৭শে মার্চ বৃহত্তর চট্টগ্রামের এসপি শামসুল হক অন্যান্য অফিসার ও তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে নিয়ে স্বসস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এই চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের যে আত্মদান চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশের মানুষ তা জানতে পারবে।

এসময় মন্ত্রী চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতি ধন্যবাদ জানান কারণ তারা সাহস নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথা নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। আমি যেহেতু তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছি তাই কেউ সিনেমা বানালে আমার ভালো লাগে, সিনেমা হল বানালেও আমার ভালো লাগে। তার মধ্যে যদি সেই সিনেমা হয় মুক্তিযুদ্ধের উপর তাহলে আরো ভালো হয় বলে মন্ত্রী অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, আপনার হয়তো অনেকেই জানেন, দামপাড়া একটি ঐতিহাসিক স্থান, ১৯৩০ সালে এখানেই ছিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার, মাস্টারদা সূর্যসেন তার বিপ্লবী বাহিনীকে নিয়ে এই চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করে চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে ১১ দিন স্বাধীন রেখেছিলেন। সেই ইতিহাস কিন্তু সবাই জানে না।

মন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৩০ সালে এখান থেকেই বিপ্লবী নেতা সূর্যসেন তার বিপ্লবী বাহিনী দিয়ে অস্ত্র লুট করেছেন। দামপাড়ায় ১৯৩০ সালের ঘটনা আর ১৯৭১ সালের ঘটনার মধ্যে একটি বৈপরীত্য আছে। সেই বৈপরীত্যটা হচ্ছে, ১৯৩০ সালে এখান থেকে অস্ত্র লুণ্ঠন করতে হয়েছিল, অস্ত্র লুণ্ঠন করে বিপ্লবীরা ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। আর ১৯৭১ সালে লুণ্ঠন করতে হয়নি। বরং অস্ত্রাগারের যিনি রক্ষক ছিলেন পুলিশ সুপার শামসুল হক তিনি অস্ত্রগুলো বিতরণ করে দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রীসহ সকল বক্তা মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর বীরত্ব গাঁথা ও মহান আত্মত্যাগ এবং ইতিহাস সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনের মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভির। উপ-পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাকের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, ‘দামপাড়া’ ছবির নায়ক ফেরদৌস খান, নায়িকা হাসনে হাবীব ভাবনা, চলচ্চিত্রটির রচয়িতা আনন জামান, পরিচালক শুদ্ধমান চৈতন, মুক্তিযুদ্ধে নিহত সাবেক এসপি শামসুল হকের সহধর্মীনি মাহমুদা হক চৌধুরী প্রমূখ।

বিএনপির নেত্রীকে মুক্তির জন্য সরকারের কাছে করা আবেদন নাকচ করায় মির্জা ফখরুল বলেছেন রাজপথে ফয়সালা হবে তাদের নেত্রীর মুক্তির বিষয়ে – এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি যদি রাজপথেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চান, তাহলে সরকারের কাছে কেন তারা আবেদন জানান তাকে বিদেশ পাঠানোর জন্য। এই দ্বি-চারিতা তো পরিহার করা উচিত তাদের।

গাড়ি পোড়ানো এবং মানুষকে জিম্মি করে বোমা নিক্ষেপ করার হুকুমের মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও যে ধরণের রাজনৈতিক স্বাধীনতা তারা ভোগ করছেন, সরকার এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিষোদগার করছেন, অন্য কোন দেশে এতটুকু করতে পারতেন কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া একজন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহানুভবতা দেখিয়ে তার দন্ড স্থগিত রেখে তাকে মুক্ত রেখেছেন এবং তিনি তার মতো করেই অর্থাৎ তার পরিবার এবং দলের তত্তববধানে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। সরকারের অধীনে তিনি চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন না। সুতরাং বেগম খালেদা জিয়ার যদি এখন স্বাস্থ্যের কোন হানি হয়, এটির জন্য দায়ী হবে বিএনপি এবং তার পরিবারের যারা চিকিৎসক এবং যারা তার স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *