শ্যামনগর প্রতিনিধি : বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষ্যে দেশের সকল নাগরিকের জন্য জীবিকার নিশ্চয়তা, খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এবং খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নের দাবিতে সর্বস্তরের জনগণের সম্পৃক্ততায় বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি উৎযাপিত করেছে লিডার্স এবং খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি), বাংলাদেশ। ২৫অক্টোবর (সোমবার) ১১:৩০ টায় নীলডুমুরে আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে ছিল নদীর উপর ভাসমান নৌ-বন্ধন ও আলোচনা সভা।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ‘খাদ্য অধিকার প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার। ক্ষুধা, দারিদ্রতা, পুস্টি হীনতার সাথে খাদ্য অধিকার ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। খাদ্য অধিকার কোন দাতব্য বিষয় নয়, বরং প্রত্যেক মানুষ নিজেদের খাদ্যের সংস্থান করবে সেটাই খাদ্য অধিকারের লক্ষ্য। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে খাদ্যকে জীবন ধারণের মৌলিক চাহিদা হিসাবে চিহ্নিত করা হলেও ২০২০ সালের বিশ্বখাদ্য নিরাপত্তা সূচকে ১১৩টি দেশের মধ্যে ৮৪তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্মে অবস্থান করছে’।

দেশের সংবিধানে সব মানুষের জন্য অন্ন, বন্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষার ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও অপুষ্টির শিকার ২ কোটি ৫৫ লাখ মানুষতা পাচ্ছেনা। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা (এসডিজি) পূরণে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী দেশের আড়াই কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। ৪৪শতাংশনারী ভুগছে রক্ত স্বল্পতায়।

প্রকৃত উন্নয়নশীল দেশ হতে হলে এ পরিস্থিতি বদলাতে হবে। সেজন্য খাদ্য অধিকার আইন প্রনয়ণের উদ্যোগ অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। শুধুমাত্র সঠিক পুষ্টির অভাবে দেশের ৩১ শতাংশ শিশুর শারীরিক বিকাশ হয়না।

বিশ্বের ৮১১ মিলিয়ন মানুষ প্রতিরাতে ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যায়, তারপরও উৎপাদিত খাবারের তিনভাগের একভাগ খাবার নষ্ট হচ্ছে। তাই দেশের সকল মানুষের জীবিকা, সংস্কৃতিভেদে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য এখনই জাতিসংঘ কৃষি ও খাদ্যসংস্থার ভলেন্টারি নির্দেশিকার আলোকে দেশে খাদ্য অধিকার আইনপ্রণয়ন করা জরুরি।

এই আইনপ্রণীত হলে সকল মানুষের খাদ্য ক্রয়ের জন্য আয়, খাদ্যের যোগান এবং সংস্কৃতিভেদে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের আইনী বাধ্যবাধকতা তৈরি হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০২৬ সালে খাদ্য অধিকার বিষয়ক আইনপ্রণয়নের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেও সংশ্লিষ্টমন্ত্রনালয় গুলো থেকে এখন পর্যন্ত কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি।

সবিশেষে জাতিসংঘ ফুড সিস্টেমসসামিট ২০২১’-এভার্চুয়ালি যোগদান করে তিনি একই সঙ্গে একটি বৈশ্বিকজোট ও অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশ গুলোর মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে খাদ্যের অপচয় হ্রাসের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত খাবার পাওয়ার অধিকার একটি মৌলিক অধিকার, যা সকল নাগরিকের কল্যাণ ও স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আফাজউদ্দিন তরফদারের সভাপতিত্তে উক্তকর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন লিডার্স এর প্রোগ্রামম্যানেজার এস.এম.মনোয়ার হোসেন, মনিটরিং অফিসার রনজিৎকুমার মন্ডল, ভুক্তভোগী মাছুদুলতরফদার, বাঘবিধবা রিজিয়াখাতুন, ভুক্তভোগী ইলিয়াস সানা, বাঘবিধবা শাহিদা খাতুন, সাংবাদিকবৃন্দ প্রমূখ।

বক্তারা আরো বলেন, আমাদের দেশে পুষ্টি অধিকারের লিঙ্গভিত্তিক বিবেচনায় নারী ও শিশুরা সব চেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ নারীই কোন না কোন অপুষ্টি জনিত জটিলতায় ভুগছেন। ১৯৯৭ সালে দেশের ৬০শতাংশ শিশু খর্বাকৃতির ছিল, ২০১৮ সালে তা নেমে আসে ৩১শতাংশে। তারপরও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে খর্বাকৃতির শিশু জন্মেরহার এখনও বাংলাদেশে বেশি। এর মূলকারণ শিশুর মায়ের জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছেনা। তাই সকল মানুষের খাদ্য এবং পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, সরকার বনজীবিদের বনে প্রবেশের উপর বিধিনিশেধ আরোপকরায় জীবিকার সংকট তৈরি হয়েছে। উপকূলে বারবার বেড়ি বাঁধ ভাঙনের কারনে খাদ্য নিরাপত্তা ভেঙেপ ড়েছে।এজন্য ভুক্তভোগীরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *