ডেস্ক রিপোর্ট: সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ২নং বুধহাটা ইউনিয়নের ‘শেখ আব্দুস সোবহান কমিউনিটি ক্লিনিক’ নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী একটি পরিবার।
জানা গেছে, ওই স্থানে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য সাংবাদিক ড. শেখ মেহেদী হাসানের উদ্যোগে ২৮ জুলাই ২০২০ তারিখে ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার সরকারি অনুমোদন পায়।
চলতি বছর ১৬ আগস্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ক্লিনিকের জন্য দানকৃত জমির দাতা চিহ্নিত করার সময় বেউলা গ্রামের প্রভাবশালী কার্তিক মুখার্জির পরিবারের সদস্য সৃষ্টিধর ওরফে সুমন মুখার্জি (বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক) ও পয়াসর মুখার্জি তাতে বাধা দেন।
মি. মুখার্জি তার প্রতিবেশি মৃত বলাই কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে সুকুমার ব্যানার্জির সমস্ত সম্পত্তি নিয়ে সাতক্ষীরা বিজ্ঞ যুগ্ম জজ আদালত-২ এ দেওয়ানি মামলা করেছেন।
সূত্র জানায়, ক্লিনিকের জন্য দানকৃত জমি ওই প্রতিবেশির কাছ থেকে ১৯৯৬ সালে কেনা। জমির দলিল, এসএ রেকর্ড, বিএস রেকর্ড, খাজনা পরিশোধের সব বৈধ কাগজপত্র আছে। মোট ৩৩শতাংশ জমির পশ্চিম পাশে কিয়ামুদ্দীন শেখ ও তাঁর স্ত্রী ছায়রা বিবির কবর আছে।
কার্তিক মুখার্জি সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদেষ্ণা সরকার বরাবর ‘অবৈধভাবে কমিউিনিটি ক্লিনিক নির্মাণ প্রসঙ্গে’ শিরোনামে একটি লিখিত আবেদন করেছেন। জনস্বার্থবিরোধী এ আবেদনপত্রের তদবির ও তদারকি করেন তার পুত্র সুমন মুখার্জি ও কন্যা চৈতালী মুখার্জি।
এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিভিল সার্জন ২৯ নভেম্বর ২০২০-এ সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সাব-রেজিস্ট্রার, আশাশুনির কাছে সংশ্লিষ্ট জমির বৈধতা যাচাইয়ের জন্য চিঠি দেন। উভয় অফিস দানকৃত জমির বৈধতা নিশ্চিত করে।
সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ৭ ডিসেম্বর ২০২০ (স্মারক নং ৪৫১) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ‘উপরিউক্ত বিষয় ও সূত্রোক্ত স্মারকপত্রের প্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস আশাশুনি, সাতক্ষীরার ক্রমিক নং-১৮৯৯ বহি নং-১ দলিল নং ১৮৯৮ দানপত্র দলিলের গ্রহীতা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে মাননীয় সচিব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বুধহাটা ইউনিয়নের বেউলা গ্রামের শেখপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা আশাশুনি, জেলা সাতক্ষীরা দানপত্র দাতা-১. মো. ছালাম শেখ, ২. আকিমুদ্দীন শেখ, উভয় পিতা মৃতু কিয়ামুদ্দীন শেখ মাতার নাম মৃতঃ ছায়রা বিবি
সর্ব সাং বেউলা, উপজেলা- আশাশুনি, জেলা-সাতক্ষীরা মৌজা-বেউলা, জেএলনং ৫৫, হাল ৩১ নং এসএ ৮৫৫ নং খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক বলাই কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর নিকট হইতে ০৮/০৬/১৯৯৬ খ্রিঃ তারিখ অত্রাফিসের ২৩২৭ নং রেজিস্ট্রিকৃত কোবলা দলিলমূলে দাতাদ্বয়ের পিতা কেয়ামুদ্দীন শেখ ও মাতা ছায়রা বিবি একত্রে ৩৩ শতক জমি খরিদ করিয়া বর্তমান জরিপে চূড়ান্ত প্রকাশিত বিএস ১২৮১নং খতিয়ানে ১৮১৭ দাগে বাড়ি ৮ শতক রেকর্ড সৃষ্টি করিয়া দাখিলা প্রাপ্ত হন।
তৎপর তাহাদের মৃত্যান্তে চেয়ারম্যান কর্তৃক ওয়ারেশান সার্টিফিকেট হিসাবে পৈত্রিক ও মাতৃক ওয়ারেশসূত্রে প্রাপ্ত হইয়া দলিল লেখক কৃষ্ণপদ মন্ডল সনদ নং ১০/২০১৯ কর্তৃক লিখিত ও শেখ মিজানুর রহমান পিতা বদরউদ্দীন দ্বারা শনাক্তকৃত হইয়া গ্রামবাসীর সুচিকিৎসা পাওয়ার সুবিধার্থে দাতাদ্বয় উক্ত শেখপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক বরাবর ৮ শতক জমি দান করেন।’
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত বলেন, কাগজপত্র অনুযায়ী শেখ আব্দুস সোবহান কমিউনিটি ক্লিনিকের নামে প্রকৃত মালিকরাই ৮শতক জমি দান করেছেন। জমিটি বৈধ। অকারণে আদালতে একটি মামলা করায় ক্লিনিক প্রতিষ্ঠায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণে বাধা দেওয়ায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, সিভিল সার্জনের তদন্ত প্রতিবেদনে জমির বৈধতা নিশ্চিত হয়েছে। তাহলে কার প্রশ্রয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উন্নয়ন উদ্যোগের অন্যতম কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণে বাঁধা দেওয়া, তারা এর প্রতিকার চায়। ষড়যন্ত্রমূলক একটি মামলায় জন্য দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মতো উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হতে পারে না। এজন্য আদালতের অনুগ্রহ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
এদিকে, একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, মি. মুখার্জির বাড়িতে ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ গভীর রাতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির এবং নাশকতা মামলার আসামিদের নিয়ে এক সভা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শম্ভুজিৎ মন্ডলসহ জামায়াতের অর্ধশত নেতাকর্মী। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নাম ভাঙিয়ে তারা ধারাবাহিকভাবে এসব অপকর্ম করছেন।
ইতোপূর্বে বেউলা শ্যামা মন্দিরের জমির দলিল জাল করে স্থানীয় জোবায়ের-এর কাছে বিক্রির চেষ্টা করেন। এজন্য মন্দিরের পুরোহিত পদ থেকে তাকে অব্যহতি দেওয়া হয়। এসব নিয়ে জানতে চাইলে কার্তিক মুখার্জি বলেন, উক্ত জমি নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন। মামলার রায় যাদের পক্ষে যাবে নিয়মানুযায়ী তারাই জমির প্রকৃত মালিক। এসব নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেন।