শেখ আরিফুল ইসলাম আশা : স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসছেন বাংলাদেশে। ২৭ মার্চ তিনি শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালিমন্দির পরিদর্শন করে সেখানে পূজা দেবেন। মোদীর আগমন উপলক্ষে প্রাচীন এই মন্দির নতুন সাজে সেজেছে। তার আগমনে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আনন্দের বন্যা বয়ে চলেছে। তাকে বরন করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তারা।
মন্দিরটি নতুন করে সাজানোর কাজ চলছে পুরোদমে। বিদেশি অতিথির জন্য ঈশ্বরীপুর হাইস্কুলের মাঠে তিনটি হেলি প্যাড তৈরি করা হচ্ছে। রংচঙয়ে পরিপাটি করা হচ্ছে ঈশ্বরীপুর হাইস্কুলের ভবন ও মন্দির সংলগ্ন এলাকা। রাস্তা সংস্কার কাজ করা হচ্ছে । মোদির আগমন উপলক্ষে পুরো ঈশ্বরীপুর এলাকা যেনো নতুন করে সাজতে শুরু করেছে।
মোদির আগমনে শ্যামনগরসহ জেলার রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে চলেছে।
যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরের পূজারীর বক্তব্যে বলেন, হিন্দু ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস মতে এটি একটি শক্তিপীঠ ও তীর্থস্থান। এই মন্দিরে রয়েছে চন্ডভৈরবের কৃষ্ণবর্ণ কষ্টিপাথরের মূর্তির উপরের অংশ। প্রতি বছর এই মন্দিরে মহাধুমধাম করে অনুষ্ঠিত হয় শ্যামাকালিপূজা। এ ছাড়া প্রতি শনি ও মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয় পূজা। হাজার হাজার পূজারীর আগমন ঘটে এই মন্দিরে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বিশ্বাস করেন এখানে মানত করলে সব কামনা পূরন হয়।
শ্যামনগর গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণান্দু মুখার্জি বলেন, মোদী এই মন্দিরে পূজা দেবেন এতে আমরা গর্ববোধ করছি। শ্যামনগর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, এখানকার প্রতিটি মানুষ গর্বিত এই কারনে যে, বন্ধুপ্রতীম দেশের প্রধানমন্ত্রী আমাদের মন্দিরে আসছেন।
সাবেক সাংসদ ও জেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি একে ফজলুল হক বলেন, আমার দল এবং জনগনের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাচ্ছি। ভারত আমাদের নিকটতম বন্ধু রাষ্ট্র। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন বন্ধুত্বেরই প্রমান।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনে আনন্দের উচ্ছাস সৃষ্টি হয়েছে। সাতক্ষীরায় এটি একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সফর কে সফল করতে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছি। আমরা সকল বিভাগ একত্রিত হয়ে কাজ করছি।
মূলত এখানে ব্যক্তিগত ভাবে কোনো ডিপার্টমেন্ট না, এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদার প্রশ্ন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এই অঞ্চলে আসবেন এটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করে আমরা নিশ্চিত করছি মন্দির ও তার আসপাশের সৌন্দর্য বর্ধন করা।
সাতক্ষীরা জেলা কে কিভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়, মুজিব বর্ষ ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর যে থিম সেটা এখানে তুলে ধরবো। বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে সেটিও এখানে তুলে ধরবো। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টি সেটি সম্পূর্ণ ভাবে এসএসএফ সমন্বয় করছে। এবং জেলার ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে আমি কাজ করছি সকল ডিপার্টমেন্ট কে নিয়ে।
সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ঈশ্বরীপুর গ্রামে ১৫৮০ খ্রীষ্টাব্দে যশোরেশ্বরী কালি মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন রাজা লক্ষণ সেন। বাংলার বারো ভুঁইয়ার এক ভুঁইয়া যশোর রাজ্যের রাজা প্রতাপাদিত্য ও তার সেনাপতি খাজা কামালউদ্দিন জঙ্গলে ঢাকা পড়া এই মন্দির থেকে আলোকবর্তিকা দেখতে পান। তিনি ঈশ্বরীপুরের ধুমঘাটে তার রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। রাজা পরিত্যক্ত এই মন্দিরটি সংস্কার করে সেখানে পূজা অর্চনা চালু করেন।
ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় মহাদেবের স্ত্রী সতীবালা তার বাবা দক্ষ রাজার সাথে বাকবিতন্ডা করে দেহত্যাগ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বামী মহাদেব রাজার দক্ষযজ্ঞ লন্ডভন্ড করে দেন। পরে স্ত্রী সতীবালার মরদেহ ত্রিশূলে তুলে শুন্যে উঠিয়ে ব্রম্মান্ডে ঘুরানো হয়। তার দেহের খন্ডিত ৫১ খন্ডের এক খন্ড পতিত হয় যশোরেশ্বরী মন্দির এলাকায়। সেখানেই রাজা লক্ষণ সেন প্রতিষ্ঠা করেন শতদ্বার বিশিষ্ট মন্দিরটি। ভিন্ন মতে আনারি নামের একজন ব্রাম্মণ মন্দিরটি নির্মান করেন। সতীবালার দেহের অপর খন্ডগুলি পতিত হয় ভারত, শ্রীলংকা নেপাল সহ বিভিন্ন দেশে।