ডেস্ক রিপোর্ট : ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশন নির্বাচন একেবারেই সমাগত। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর এই কমিটির সর্বশেষ সাধারণ সভা। এই সভা থেকেই নির্বাচন কমিশন গঠনসহ সার্বিক প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বরাবরের মত এবারও এই নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতার গোপে তেল মাখানো শুরু হয়েছে।
সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদকের চেয়ার পেতে কে কত লাখ দেবে, আর কে কত লাখ নেবে! গত এক সপ্তাহ ধরে ভোমরার ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে শহরের ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মধ্যে এনিয়ে আলোচনা আর সমালোচনার যেন শেষ নেই। তবে এবার আওয়ামী লীগের শীর্ষ থেকে অংঙ্গ সংগঠনের নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। ভাবছেন দলের ভবিষ্যাত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা বলেছেন, গতবারের কমিটি করতে প্রায় কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আবার আরেক নেতা বলেছেন, কোটি টাকা পেরিয়ে গেছে।
গতবারই যদি কোটি টাকা পেরিয়ে যায় তবে এবার এই কমিটির দাম কত হবে, তা নিয়ে দর কষাকষি শুরু হয়েছে। দর কষাকষিতে যার দর যত বৃদ্ধি পাবে, এবং দিতে পারবে তাদের ভাগ্যে জুটবে বড় বড় চেয়ার।
সেক্ষেত্রে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ কতটা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তো রয়েছেই! তবে একাধিক নেতারা বলেছেন, দরদামের কমিটি হওয়ায় স্বাধীনতার স্বপক্ষের সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ কমই হয়।
বন্দরের নেতাদের সুবিধা গ্রহণ এতটাই সামনে আসে যে, ব্যবসায়ীরা সুযোগ সুবিধা পায়না বললেই চলে। ফলে এবার দরদামের কমিটি না করে হয় সরাসরি নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচিত কমিটি করা হোক।
আর যদি নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি না হয় তাহলে দরদামের কমিটি জেলা আওয়ামী লীগ নির্ধারণ পূর্বক সংগৃহীত অর্থ দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নামে জমি ক্রয় পূর্বক অফিস নির্মাণ করার পক্ষে মত দিয়েছেন অনেকেই। তবে কোন ভাবে ভোমরা বন্দরের নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতাদের পকেট গরম যেন না হয় সে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখার তাগিদ তৃণমুলের।
সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের তিনবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন বলেছেন, প্রতিবার ভোমরা স্থল বন্দরের কমিটি গঠন নিয়ে নানান অভিযোগ শুনি। আর্থিক সুবিধা গ্রহণের বিষয়টিও কম বেশি অনেকে বলে। তবে তিনি মতামতের ক্ষেত্রে বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে হোক আর নির্বাচনের বাইরে হোক জেলা আওয়ামী লীগের সমার্থনে স্বাধীনতার স্বপক্ষে সুন্দর একটি কমিটি হোক এমন প্রত্যাশা তার।
পাশাপাশি ব্যক্তি বিশেষের সুবিধায় যেন স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির কোন কমিটি না হয় সে বিষয়টি মাথায় রাখার জন্য উচচ পর্যায়ের নেতাদের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ.হ.ম তারেখ উদ্দীন বলেন, ভোমরা বন্দরের কমিটি গঠনের নামে অর্থ সংগ্রহ করে জেলা আওয়ামী লীগের অফিস করতে হবে দলের এমন দৈন্যতা আসেনি। অফিস করতে শুধু দলীয় নেতাদের মানুষিকতার প্রয়োজন। তাহলেই জেলা আওয়ামী লীগের অফিস হয়ে যাবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ সাঈদ উদ্দীন জানান, আওয়ামী লীগের দলীয় ব্যবসায়ীদের নিয়েই সুন্দর একটি কমিটি হোক এমনটাই প্রত্যাশা তার।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু রাতে টেলিফোনে জানান, ভোমরা বন্দরের সিএন্ডএফ কমিটি গঠন নিয়ে প্রতিবারই নয় ছয় হয়। আর ব্যক্তি বিশেষ লাভবান হয়।
আমি ইতোমধ্যে বিভিন্ন ফোরামে বলেছি, ভোমরা বন্দরে এবার জেলা আওয়ামী লীগের সরাসরি হস্তক্ষেপে দলীয় ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি কমিটি করে তাদের নিকট থেকে জেলা আওয়ামী লীগের একটি অফিস নির্মাণ করার ব্যবস্থা করা হোক। যেন ব্যক্তি বিশেষের পকেট ভারী না হয়, সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়ার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের প্রতি জোর দাবী জানান ।
তবে এসব বিষয় নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রেসিডেন্ট সাহেব মারা যাওয়ার কারণে অনেকেই আমার কাছে আসছেন। যারা আসছেন তাদের বলেছি, এবার কমিটি গঠনে আপনারা টেন্ডার বাণিজ্যে যাবেন না।
যদি টাকা দিয়ে পদ কেনা হয় তাহলে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ হয়না। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তিনি আরও বলেন, এখানে কমিটি গঠন নিয়ে সমন্বয়ের ব্যাপার আছে। জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, এমপি সাহেবসহ সকলে মিলে একত্রিত হয়ে একটি কমিটি করার চেষ্টা করা হবে।
তবে প্রপার নির্বাচনে গেলে বেনাপোলের ভোটার বেশি হওয়ার কারণে নির্বাচনে যাওয়াটাও সম্ভব হয়না।
এদিকে ভোমরা স্থল বন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে সভাপতি পদে আব্দুস সবুর, কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু ও এজাজ আহমেদ স্বপনের নাম শোনা যাচ্ছে। পাশাপাশি সাধারণ সম্পাদক পদে মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম, অহিদুল ইসলাম, মাকসুদ খান, আমীর হামজা ও আবু মুসার নামও প্রচার রয়েছে।
এবিষয়ে সভাপতি প্রার্থী কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু জানান, ভোমরা স্থল বন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণেরর চেষ্টা করেছি।
যদি সরাসরি ভোট হয় তাহলে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিচ্ছি। তাতে একটা ভোট পেলেও মাঠে থাকবো। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৫ সালে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের কমিটি গঠণকে কেন্দ্র করে অর্থ বাণিজ্য শুরু হয়। একজন যুবদল নেতার মধ্যস্থতায় তৎকালিন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার সমন্বয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া পেছনে ফেলে কমিটি গঠন করা হয়।
একই প্রক্রিয়ায় ২০১৮ সালে নির্বাচন ছাড়াই কমিটি গঠন করা হয়। সেই পথেই হাটছে ২১ সালের কমিটিও। কিন্তু এবারের কমিটি গঠনে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা এবার গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
একটা গ্রুপ বিএনপি জামায়াত পন্থী। তারা তাদের পছন্দের লোকজন নিয়ে কমিটি করতে দৌড় ঝাপ শুরু করেছে। অপরদিকে, আওয়ামী পন্থী সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা জোটবদ্ধ হয়ে তাদের পছন্দের কমিটি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর বাইরে নব্য আওয়ামী লীগের কেউ কেউ এ্যাসোসিয়েশনের গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নেয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
কিন্ত নব্য আওয়ামী লীগারদের দর বেশি থাকায় এক নেতার কাছে গুরুত্ব বেশি পাচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। অপরদিকে জামায়াত বিএনপি পন্থী গ্রুপ যথেষ্ট অর্থশালী হয়ে টেন্ডারে এগিয়ে থাকলেও ঝুকি নিতে চাইছেনা কেউ।
আর প্রকৃত আওয়ামী লীগ পন্থী সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব ও প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের মুখ চেয়ে বসে আছে। এছাড়াও দুইজন নব্য আ’লীগ প্রার্থী (হাইব্রিড) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে মরিয়া। তবে এই গ্রুপের কেউ কেউ পছন্দের পদ পাওয়ার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে বিভিন্ন জায়গায় দৌড় ঝাপ করছে বলে জানা যায়।