শ্যামনগর থেকে নিজস্ব প্রতিনিধি : শ্যামনগরের সুন্দরবন সংলগ্ন জনপদ কালিঞ্চি গ্রামে পরিকল্পিতভাবে আইন শৃঙ্খলার অবন্নতি ঘটাচ্ছে একদল দুর্বৃত্ত। চাঁদার দাবিতে চিংড়ি ঘের ভাঙচুর ও লুটপাট মামলায় জামিন নিয়ে গতকাল গভীর রাতে শাহাবুদ্দিন বাবুর চিংড়ি ঘেরের বসতঘরটি পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। দুর্বৃত্তদের তাণ্ডবে এলাকার আইন পরিস্থিতির অবন্নতি হচ্ছে।
৩২ বছরের পুরানো একটি চিংড়ি প্রকল্পের পানি নিস্কাশনের কাজে ব্যবহৃত ফ্লাশিং গেট ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষরা। ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার বেলা একটার দিকে শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের কালিঞ্চি পল্লীতে।
দীর্ঘদিন চাঁদার দাবিতে বিরোধের জের ধরে স্থানীয় আব্দুল গফুর ও আব্দুল মাজেদের নেতৃত্বে প্রতিপক্ষের ১৪/১৫ জন একযোগে ঐ মৎস্য প্রকল্পে হামলা চালিয়ে এমন কান্ড ঘটায়। এসময় হামলাকারীরা চিংড়ি প্রকল্পের ফ্লাশিং গেট ভাংচুরের পাশাপাশি ৮০ বিঘা আয়তনের ঐ চিংড়ি ঘেরে লুটপাট চালায়। যদিও অভিযুক্ত পক্ষের দাবি তারা শুধু গেট ভাঙচুর করলেও কোন লুটতরাজ চালায়নি।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, গত তিন দশক ধরে ভেটখালী গ্রামের আলহাজ্ব আবু নুর আলমের ছেলে উচ্চশিক্ষিত সাহাবুদ্দীন আহমেদ বাবু কালিঞ্চি গ্রামের পৈত্রিক জমিতে চিংড়ি চাষ করে আসছে। একতা ফিস নামীয় ঐ চিংড়ি ঘেরের মালিকের সহায়তা নিয়ে প্রকল্পের পাশে প্রায় এক দশক পূর্বে স্থানীয়রা একটি মসজিদ ও কবরস্থান গড়ে তোলে।
সুত্র মতে সম্প্রতি অতিবৃষ্টিতে এলাকার অপরাপর চিংড়ি ঘেরের ন্যায় একতা ফিস নামীয় মৎস্য প্রকল্পটিও তলিয়ে যায়। এসময় অতিবৃষ্টির পানি রাস্তা ছাপিয়ে মসজিদ চত্বর সহ আশপাশের এলাকায় প্রবেশ করলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যার অংশ হিসেবে শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় একটি পক্ষ সংঘবদ্ধ হয়ে ঐ মৎস্য প্রকল্পে হামলা করে ভাংচুরের ঘটনায় ঘটায়।
ক্ষতিগ্রস্থ প্রকল্প মালিক সাহাবুদ্দীন বাবু অভিযোগ করেন, আব্দুল গফুর ও আব্দুল মাজেদ সহ তাদের লোকজন বিভিন্ন সময় নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা দাবি করে আসছিল। সম্প্রতি তাদের কিছু দাবি-দাওয়া মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানানোর জেরে শুক্রবার তারা চার দশক পুরানো মৎস্য প্রকল্পের গেট ভাংচুরের পর তা মাটি চাপা দিয়ে পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
এসময় হামলার সাথে জড়িতরা ৮০ বিঘা আয়তনের ঐ চিংড়ি ঘেরে ব্যাপক লুটপাট করে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন আব্দুল মাজেদ, আব্দুল গফুর, আলম ছাড়াও কেরামত আলী, আলম, মেহেদী বাবু, মিজানুর রহমান মিজান, মহসীন আলী, আব্দুল আলিম বাবু, সিরাজুল ইসলাম, আব্দুস সালাম, মোহাম্মদ আলী, সামছুর রহমান, আব্দুর রহিম, আছাদুর রহমান ও শহীদ গাজী সরাসরি লাঠিশোঠা নিয়ে হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে হামলার নেতৃত্বদানকারী আব্দুল গফুর প্রতিবেদককে জানান, এসি ল্যান্ড সাহেবের নির্দেশে আলমের নেতৃত্বে লোকজন এসব ভাংচুর করেছে। তবে কোন লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি।
যদিও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ শহীদুল্লাহ জানান, চিংড়ি ঘেরে হামলাসহ গেট ভাংচুরের ঘটনা তিনি কিছু জানেন না। তার নির্দেশে কোন কিছু ঘটলে তার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার কথা।এ ঘটনা জানার পরে সন্ধ্যার দিকে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ ওয়াহিদ মুর্শেদ ঘটনাস্থলে শ্যামনগর থানার এসআই হাবিবকে পাঠান।
তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শ্যামনগরে ফেরার জন্য মোটরসাইকেল স্টার্ট দেওয়ার পরেই দুর্বৃত্তরা আবারো চিংড়ি ঘের আক্রমণ করে। এসময় চিংড়িঘেরের কর্মচারী সহ ৪ জন আহত হয়। আহত অবস্থায় তাদেরকে হাসপাতালে আসতে দুর্বৃত্তরা বাধা প্রদান করে।পরে শ্যামনগর থানা পুলিশের সহযোগিতায় আহত আমজাদ (৫০), ফজলু (৩০), ইমরান (২২), ও জাহানারা (৩৫) কে শ্যামনগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরবর্তীতে শ্যামনগর থানায় চাঁদার দাবিতে একটি মামলা দায়ের হয়। এ মামলায় ৭ জন বাদে বাকি ১৭ জনের জামিন হওয়ার পরপরই সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা আজ গভীর রাতে ৮০ বিঘার চিংড়ি ঘেরের বসতঘরটি পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।