স্টাফ রিপোর্টার : সাতক্ষীরার দেবহাটায় সহস্রাধিক বিঘা মৎস্য ঘের বেষ্টিত খলিশাখালি নামক জনপদ দখলের পর সেখানে গড়ে ওঠা ভূমিহীন পল্লীতে রাতের আঁধারে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদ ও নীরিহ ভূমিহীনদের নামে একের পর এক দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন করেছেন ভূমিহীনেরা। বৃহষ্পতিবার বিকাল ৪টায় খলিশাখালি জনপদে উক্ত মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়।
মানববন্ধনে ভূমিহীন পল্লীতে বসবাসরত অন্তত দুই হাজার নারী-পুরুষ স্বতষ্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহন করেন। এসময় ভূমিহীনদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সেখানকার তৎকালীন প্রজার উত্তরসূরী হরিপদ স্বর্ণকারের ছেলে সুনিল স্বর্ণকার, ভূমিহীন নেতা আনিছুর রহমান, গোলাপ ঢালী, বাবলু রহমান, শরিফুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, ভূমিহীন নেত্রী মমতাজ বেগম, আমেনা খাতুন, লাইলী খাতুন, জোহরা বেগম, তাছলিমা খাতুন প্রমূখ।
মানববন্ধনকালে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত দখলচ্যুত প্রভাবশালীদের ধিক্কার জানিয়ে ভূমিহীনদের দেয়া স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা ভূমিহীন জনপদ।
ভূমিহীন নেতারা তাদের বক্তব্যে বলেন, দেশ বিভাগের আগে গাতীদার চন্ডিচরণ ঘোষের প্রজা ছিলেন তাদের পূর্ব পুরুষেরা। চন্ডীচরণ ঘোষ স্থায়ীভাবে ভারতে চলে যাওয়ার সময় খলিশাখালির ওই সম্পত্তি তার প্রজাদের নামে ডিএস কোবলা, পাট্টা দলিল করে দেন। পরে সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস শুরু করেন তৎকালীন প্রজারা।
১৯৫২ সালে সুরেন চৌধুরী নামের এক ব্যাক্তির কাছ থেকে শিমুলিয়া গ্রামের কাজী আব্দুল মালেক কিছু জমি বিনিময় করেন। তাছাড়া আরোও কিছু জমি লীজ নিয়েছেন দাবী করে ভারতে পাড়ি জমানো চন্ডীচরণ ঘোষের ফেলে যাওয়া ওই সম্পত্তি দখলে নিয়ে প্রজাদের উচ্ছেদ করেন মালেক কাজী ও তার লোকজন।
পরে ডিএস ও সিএস রেকর্ডের বুনিয়াদ কাগজপত্র জালিয়াতি এবং তৎকালীন ভূমি জরিপ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মালেক কাজী সহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা নিজেদের নামে ওই জমির এস এ রেকর্ড করিয়ে নেয়।
এছাড়া এক যুগেরও বেশি সময় খলিশাখালির জমির খাজনা গ্রহন বন্ধ থাকলেও, দখলচ্যুত প্রভাবশালীরা তাদের দখল বজায় রাখতে স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে গোপনে দু’একটি জমির খাজনা প্রদান সহ তাদের নামে প্রিন্ট পর্চায় গেজেট প্রকাশ করিয়ে নেয়।
ভূমিহীনেরা আরো বলেন, দলিলপ্রাপ্ত তৎকালীন প্রজাদের উত্তরসূরী হওয়া স্বত্ত্বেও ন্যায্য অধিকার থেকে যুগ যুগ ধরে আমরা বঞ্চিত হয়ে এসেছি এবং আমাদের প্রাপ্য জমি ওইসব প্রভাবশালীরা জাল জালিয়াতি ও ভোগদখল করে কোটিপতি বনে গিয়েছে।
সর্বশেষ আমরা উচ্চ আদালত ও নিন্ম আদালতে এসংক্রান্তে মামলা দায়ের করলে শুনানীতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে ওই সম্পত্তি আইনানুযায়ী কন্ট্রোল ও ম্যানেজমেন্টের নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। এরপর গত ১১ সেপ্টেম্বর আমরা তৎকালীন প্রজাদের উত্তরসূরীসহ শত শত ভূমিহীন পরিবার ঐক্যবদ্ধ ভাবে ওই সম্পত্তির দখল নিয়েছি।
ভূমিহীনেরা অভিযোগ করে বলেন, খলিশাখালি দখলে নেয়ার পর থেকে আমাদের নীরিহ পরিবার গুলোকে উচ্ছেদ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দখলচ্যুত প্রভাবশালীরা। তারা মুহুমুহু আমাদের ওপর হামলা ও হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি নীরিহ ভূমিহীনদের নামে একাধিক মিথ্যা মামলা দায়েরসহ ভূমিহীন পল্লীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটিয়েছে দখলচ্যুতরা।
সম্প্রতি রাতের আঁধারে আশাশুনি থানার দু’জন পুলিশ সদস্য সাদা পোশাকে খলিশাখালির ভূমিহীন জনপদে ঢুকে নীরিহ ভূমিহীনদের ওপর চড়াও হলে একপর্যায়ে ভূমিহীনদের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এঘটনার পর দখলচ্যুত প্রভাবশালীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নীরিহ ভূমিহীনদের নামে আরেকটি মামলা দিয়েছে আশাশুনি থানা পুলিশ।
মানববন্ধনে বক্তৃতায় একের পর এক দায়েরকৃত এসব মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ এবং সেগুলো অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবী জানান ভূমিহীনেরা। পাশাপাশি ওই সম্পত্তি সরকারী আইনানুযায়ী খাস খতিয়ানে অর্ন্তভূক্ত করে তা প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত দেয়ার উদ্যোগ গ্রহনের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে দাবী জানান ভূমিহীন পল্লীর বাসিন্দারা।