নিউইয়র্ক, ১৬ জুন : “রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে আমরা সবসময়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানিয়েছি; সমস্যার মূল কারণগুলো খুঁজে বের করে তা সমাধানের কথা বলেছি; বিশেষ করে তাদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিরাপদে, নিরাপত্তার সাথে এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছি” -গতকাল বাংলাদেশ মিশন আয়োজিত ‘মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি: সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের অবস্থা’ শীর্ষক এক উচ্চ পর্যায়ের ভার্চুয়াল আলোচনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ কথা বলেন।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ, কানাডা, সৌদি আরব ও তুরস্ক স্থায়ী মিশন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’ যৌথভাবে ভার্চুয়াল এই ইভেন্টটির আয়োজন করে। বাংলাদেশ আয়োজিত ইভেন্টটির সহ-আয়োজক ছিল জাতিসংঘে নিযুক্ত কানাডা, সৌদি আরব ও তুরস্ক স্থায়ী মিশন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’। ইভেন্টটিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভলকান বজকির তাঁর সাম্প্রতিক কক্সবাজার সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
প্রদত্ত বক্তব্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ও মানবীয় উদারতার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই নীতি-আদর্শ ও উদারতাই আমাদেরকে সহিংসতার শিকার, বাস্তচ্যুত এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গাদেরকে মানবিক আশ্রয় দানে উদ্বুদ্ধ করেছে। আমাদের সম্পদ ও স্থানের তীব্র সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছি।
ভাষাণচরে রোহিঙ্গাদের জন্য নব্যসৃষ্ট আবাসন সুবিধার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সৃষ্ট নতুন এই আবাসন ব্যবস্থা জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সহযোগীরা যথাযথভাবে পরিদর্শন ও মূল্যায়ন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এবং এখানে তাদের রোহিঙ্গা বিষয়ক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কাজ শুরু করেছে।
প্যানেলিস্টগণ রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে তাদের সমর্থন পূনর্ব্যক্ত করেন এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের মানবীয় উদারতার ভুয়সী প্রশংসা করেন। তাঁরা সকলেই এই সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করে তা সমাধানের কথা বলেন যার শিকড় মিয়ামারেই নিহিত। প্যানেলিস্টগণ মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে দায়বদ্ধতা নিরুপণের চলমান প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানান।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা আলোচনা অনুষ্ঠানটির সূচনা করেন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন। ইভেন্টটির সমৃদ্ধ প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি বব রে, তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি ফেরিদূন হাদি সিনির লইয়োগ্লু, জাতিসংঘের জেনোসাইড প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা অ্যালিস ওয়াইরিমু নেডিরিটু, মিয়ামারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার টম অ্যানড্রিউজ্, জাতিসংঘে নিযুক্ত সৌদি আরবের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি এবং রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্ট ও উইমেন পিস নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক ওয়াই ওয়াই নু প্যানেল।
আলোচনা পর্বটির সঞ্চালনা করেন গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট এর নির্বাহী পরিচালক
ড. সায়মন অ্যাডাম। জাতিসংঘ সদস্যরাষ্ট্র, সিভিল সোসাইটি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অংশীজনসহ বিপুল সংখ্যক অংশগ্রহণকারী ভার্চুয়াল এ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে বিকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি (পিজিএ) ভলকান বজকির এর সাথে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ আলোচনায় রোহিঙ্গা সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ এর টিকা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো উঠে আসে।
মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ সেশন আহ্বান করার জন্য পিজিএ-কে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনকে গ্লোবাল পাবলিক গুড হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক্ষেত্রে সকলের অধিকার নিশ্চিতে তাঁর অফিসকে ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানান।
রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য পিজিএ-কে আমন্ত্রণ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সাধারণ পরিষদের সভাপতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের মানবিক ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান। এছাড়া জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর অফিসকে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
এছাড়া জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ, ভূ-বেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ এবং উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের উচ্চ প্রতিনিধি ও আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফেকিতা মোইলোয়া কাটোয়া উতয়কামানু এর সাথে সাক্ষাত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে তাঁরা স্বল্পোন্নত দেশসমূহের টেকসই ও অপ্রত্যাবর্তনযোগ্য উত্তরণ বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত এলডিসি-৫ কনফারেন্সের প্রস্তুতিমূলক কমিটির কো-চেয়ার হিসেবে একটি সাহসী ও উচাকাঙ্ক্ষী ফলাফল অজনার্থে বাংলাদেশ সকল অংশীজনদের সাথে কাজ করে যাবে মর্মে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।