মাহমুদুল হাসান শাওন, দেবহাটা : সাতক্ষীরার নলতায় ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি’র তৃতীয় বর্ষে পড়–য়া সালমান হোসেন (২৫) নামের এক শিক্ষার্থীকে মধ্যরাতে রুম থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মমভাবে শারিরীক নির্যাতন চালানো হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী সোলায়মান পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার মোহাম্মদ হানিফের ছেলে। বর্তমানে তিনি সখিপুরস্থ দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বেধড়ক মারপিটে তার মাথা ফেঁটে যাওয়াসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

আহতের সহপাঠী রিপনসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তারা নলতায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সাতক্ষীরা-০৩ আসনের সাংসদ অধ্যাপক ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক এমপি’র প্রতিষ্ঠিত ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে পড়াশুনা করতে সাতক্ষীরায় এসেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির হোস্টেলে থেকে সালমানসহ তারা কয়েকজন বন্ধু একসাথে পড়াশুনা করেন।

দীর্ঘদিন ধরে ওই প্রতিষ্ঠানের রেডিওলোজী বিভাগের শিক্ষক ও কালীগঞ্জের দক্ষিন শ্রীপুর গ্রামের সাইদী হাসান সেখানকার শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং জোর করে তার কোচিং সেন্টারে অর্থের বিনিময়ে পড়ান।

কোচিংয়ে পড়ুয়া কয়েকজন উশৃঙ্খল শিক্ষার্থীকে ব্যবহার করে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি কিশোর গ্যাং বানিয়েছেন শিক্ষক সাইদী হাসান। তার ইশারায় আইএইচটি’র বখাটে শিক্ষার্থী নাহিদ, রশিদ এবং ম্যাটস’র শিক্ষার্থী রানা ওই কিশোর গ্যাংয়ের মুল ভূমিকায় থেকে নেতৃত্ব দেন।

পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫-১০ হাজার টাকা হারে অবৈধ অর্থও গ্রহন করেন শিক্ষক সাইদী হাসান। যেসকল শিক্ষার্থীরা সাইদী হাসানের কোচিংয়ে পড়তে বা তার অনৈতিক দাবি মেটাতে অস্বীকৃতি জানায়, তাদেরকে ওই কিশোর গ্যাং দিয়ে তুলে নিয়ে শারিরীক নির্যাতন করান তিনি।

নির্যাতনের শিকার সালমান হোসেন বলেন, ‘সাইদী হাসানের কোচিংয়ে না পড়ার কারনে দীর্ঘদিন ধরে তিনি আমার সাথে বাজে আচরণসহ আমাকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়া এমনকি শায়েস্তা করার ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হোস্টেলের ডায়নিং সংক্রান্ত মিটিংয়ের নাম করে শিক্ষক সাইদী হাসানের কিশোর গ্যাংয়ের মুল নের্তৃত্বে থাকা তৃতীয় বর্ষের বখাটে ছাত্র নাহিদ ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রশিদ আমাকে আমার রুম থেকে ডেকে ভবনের চতুর্থ চলায় ৪০৭ নং কক্ষে নিয়ে যায়।

এরপর তারা কক্ষের দরজা লাগিয়ে লোহার রড ও পাইপ দিয়ে আমাকে উপূর্যপরী পেটাতে থাকে। মারপিটের সময় রশিদ এবং নাহিদ একাধিকবার শিক্ষক সাইদী হাসানের সাথে মোবাইলে কথা বলে এবং আমাকে পেটানোর বিষয়টি তাকে নিশ্চিত করে। তাদের মারপিটে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখমসহ আমার মাথা ফেঁটে রক্ত ঝরতে থাকলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

পরে আমার সহপাঠীরা আমাকে গুরুতর আহতবস্থায় উদ্ধার করে প্রথম নলতা হাসপাতাল এবং পরে সখিপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন। নির্যাতিত শিক্ষার্থী সালমান তার ওপর চালানো অমানবিক নির্যাতনের সুবিচারের দাবি জানিয়েছেন’।

লোমহর্ষক এ নির্যাতনের ঘটনাসহ অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক সাইদী হাসান বলেন, ‘শুক্রবার থেকে আমি পেঁটের অসুখে ভুগছি। বারবার পাতলা পায়খানা হচ্ছে। আমি এসব ব্যাপারে কিছু জানিনা’।
ন্যাক্কারজনক এঘটনার রহস্যভেদসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দিয়েছেন নলতা ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির প্রিন্সিপাল ডা. ফারুকুজ্জামান।

কালীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, শিক্ষার্থীকে মারপিটের ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক। ইতোমধ্যেই পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। নির্যাতিত শিক্ষার্থী বা তা পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে এঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে শনিবার সকালে নির্যাতিত শিক্ষার্থীকে দেখতে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সাতক্ষীরা-০৩ আসনের সাংসদ অধ্যাপক ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক এমপি। এসময় তিনি আহত সালমানের শারিরীক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলোক ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়ে আশ্বস্থ করেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *