সেলিম হায়দার : ‘শিশুরাই রত্ন, করবো যত্ন’ এই শ্লোগান সামনে রেখে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আইসিবিসি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ২০২২ সালে “সমাজ ভিত্তিক সমনি¦ত শিশুযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং সাঁতার সুবিধা-আইসিবিসি প্রকল্পটি তি নবছর মেয়াদে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পটি বাংলাদেশের ১৬টি জেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় কার্যক্রমটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে বেসরকারি সংস্থা উত্তরণ। বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও শরণখোলা এবং সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা ও শ্যামনগর উপজেলায় সর্বমোট ৩৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। উত্তরণ সকল ইউনিয়নে প্রকল্পটির কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রকল্পের আওতায় বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় ৫০০টি করে মোট ১০০০ টি শিশুযত্ন কেন্দ্রে ১ থেকে ৫ বছরের কম বয়সী সর্বমোট ২৫হাজার শিশু রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে রয়েছে ২৫ জন করে শিশু, ১ জন প্রশিক্ষিত যত্নকারী ও ১ জন সহকারী যত্নকারী।
কেন্দ্র পরিচালিত হয় প্রতিদিন সকাল ০৯টা থেকে দুপুর ০২টা পর্যন্ত। মূলত: এই প্রকল্পের প্রধান তিনটি কার্যক্রম হলো-শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ, শিখন ও সুরক্ষা বিষয়ক সমন্বিত সেবা-যত্ন প্রদান, ৬ থেকে ১০ বছর বয়সি শিশুদের জীবন রক্ষাকারী সাঁতার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পানিতে ডুবে মৃত্যু থেকে সুরক্ষা এবং অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অভিভাবক সভার মাধ্যমে শিশুর যত্ন, বিকাশ ও শিশু সুরক্ষার সর্বোত্তম চর্চার বিষয়ে তথ্য প্রদান এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরী করা।
প্রকল্পের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যত্নকারী এবং সহযত্নকারীগণ গাইড লাইন অনুযায়ী শিশুদের খেলা, ছড়া, আবৃত্তি, গান, চারুকারু, নাচ, গল্প ইত্যাদি শিখতে সহায়তা করেন, নিয়মিত উচ্চতা ও ওজ নপরিমাপে ভূমিকা রাখেন। যত্নকারী এবং সহযত্নকারীগণ সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের সাথে যুক্ত হয়ে শিশুদের জন্মনিবন্ধন, টিকা দান, চক্ষু ও কান পরীক্ষা, প্রতিবন্ধিতা নিরূপন ইত্যাদিতে সহায়তা করে থাকেন। আর তাঁদের কাজের মান ঠিক রাখার জন্য উত্তরণ কর্তৃৃক নিয়োগকৃত প্রকল্প সুপার ভাইজারসহ বিভিন্নপ র্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ নিয়মিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে সুপারভিশন করেন।
অন্যদিকে জেলা প্রসাশকের সভাপতিত্বে জেলা মনিটরিং কমিটি এবং উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার সভাপতিত্বে উপজেলা মনিটরিং কমিটি নিয়মিত কর্মসূচী মনিটরিং করেন। প্রতিটি জেলা এবং উপজেলায় মনিটরিং কমিটির সদস্য সংখ্যা ১০ জন। এছাড়াও জেলা শিশু একাডেমির জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা, প্রকল্পের পিএম, এপিএম এবং পিডিগণ ও নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে এসে কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
উত্তরণের ফোকাল পার্সন মনিরুজ্জামান জমাদ্দার বলেন, সাঁতার না জানা থাকার কারণে প্রতিবছর হাজার-হাজার শিশু পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে। আইসিবিসি প্রকল্পের আওতায় উত্তরণ বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় ৬ থেকে ১০ বছর বয়সি ১৫ হাজার শিশুকে প্রকল্পের সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ে জীবনরক্ষাকারী ও ঝুঁকিমুক্ত সাঁতার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এই প্রশিক্ষণ গ্রহণের ফলে শিশুরা সাঁতার ও উদ্ধার প্রক্রিয়া শিখে একদিকে যেমন ডুবে যাওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে পাশাপাশি অন্যকেও পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে উদ্ধার করতে শিখেছে।
তিনি আরও বলেন, আইসিবিসি প্রকল্পের সব থেকে উল্লেখযোগ্য দিক হলো প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলার ২ লক্ষ শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ, শিখন ও সুরক্ষার আওতায় এসে তারা বিকশিত হয়েছে এবং ৩ লক্ষ ৬০ হাজার শিশু সাঁতার বিষয়ক প্রশিক্ষণ পেয়ে তারা পানিতে পড়ে মৃত্যুর হাত থেকে নিজে রক্ষা পাবে পাশাপাশি অন্যকে উদ্ধারে ভূমিকা রাখবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধিনে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৮ হাজার শিশুযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করে ১৬ হাজার গ্রামীণ নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী করে দিয়ে এক যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি ১৬ শত নারী এবং পুরুষ সাঁতার প্রশিক্ষণ তৈরী করে তাঁদেরও কাজের সুযোগ তৈরী করে দিয়েছে। প্রকল্পটি চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। উপকারভোগী অভিভাবকগণ মনে করেন প্রকল্পটি চলমান থাকা দরকার। তাঁরা কার্যক্রমটি চলমান রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে অনুরোধ রেখেছেন।