ড. কাজী এরতেজা হাসান : শরতের আকাশে মেঘের ভেলা। আজও জানালায় উঁকি দিয়ে তা দেখেছি। গোধুলি করে ঠিক দিনের অন্তিম ক্ষণে কাশবনের প্রান্ত ঘেষে রঙধনু পরখ করা।  অশান্ত মনকে দমন করার ক্ষেত্র, ফলত প্রস্তুত হয় নাই।  বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের মত করে যেন ! উপরন্ত শেখ হাসিনাকে ছাড়া বাংলাদেশ, চিন্তাই করা যায় না। মনের মধ্যে শান্তি নেই। গাছের ছায়াই তো নেই বাংলার রাজ্যের প্রকৃতিতে। আমাদের শ্রেষ্ঠ মানুষটিই যে দেশে নেই। এই মুহূর্তের অবকাশ হল, অহেতুক উপদ্রবের মত করে ! কোন ছুটি নেই, যদিও আগামী তিন দিন বিশ্রাম নেয়ার মতই উপলক্ষ। কিন্তু, একজন শেখ হাসিনাকে ছাড়া দেশটি এতিমের মত। চলা যায় না। প্রিয় জননেত্রী, বাংলাদেশ তোমার অপেক্ষায়! এদিকে আজকের এই বিশেষ দিনে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়, প্রিয় মা তুল্য নেত্রী, আপনাকে দেশের নেতৃত্ব দিয়ে যেতে হবে। অনিশেষ শ্রদ্ধায় বলছি, শুভ জন্মদিন!
এদিকে কোথাও যেন একটা ষড়যন্ত্রের গন্ধ রয়েছে। ওরা নীল আকাশে অন্ধকারের আয়োজনে যেয়ে প্রতীকী রুপ নিয়ে যেন অপেক্ষারত ! ঝড় আনতে চায় ! রাজনৈতিক অপশক্তি হয়ে প্রিয় অন্তরীক্ষে কালোশক্তির মত করে ওরা মেঘ জমিয়েছে। বিশ্বাস আছে, আমাদের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক সত্তা শেখ হাসিনার বিনীত উদ্যোগে ওদের আস্ফালন বন্ধ হবে। আসবে হেমন্ত, আসন্ন শীতে বিজয় উৎসবে মাতবে বাংলাদেশ। যারা মুক্তিযুদ্ধ করে এই দেশকে স্বাধীন করেছিল, তাঁদের মুখে হাসি ফিরবেই।
বাংলাদেশ কথা বলতে জানে। যা একদিন মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর শ্লেষে দেখেছিল তামাম পৃথিবী। আর এখন দেখাছেন একজন শেখ হাসিনা।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডারদের বার্ষিক সভায় শেখ হাসিনা বললেন, নারীদের জীবনে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলতে তাদের অবশ্যই নেতৃত্বের অবস্থানে থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা দীপ্ত উচ্চারণে থেকে বলেন, ‘আমাদের কর্মকাণ্ডকে অংশগ্রহণ থেকে নেতৃত্বে উন্নীত করতে হবে এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে জাতিসংঘকে অবশ্যই উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। এটা দুঃখজনক যে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনও নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সময় এসেছে, আমরা শিগগিরই একজনকে পাবো।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ছদ্দাবরনে সাংস্কৃতিক পরিক্রমার ফলাফল খোঁজার চেষ্টা—— তাঁকে মহান করে। সত্যটা বলার যে সাহস তিনি অর্জন করেছেন, তা শুধুই ধারণ করা যায়। একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষটির সত্য বচনের ধার এতটাই, যা চলার পথে উদাহরণ হয়ে যায়। তিনি একবার বলেছিলেন, মুক্তমত প্রকাশের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় অনুভুতিতে কেহ যেন আঘাত করার অপচেষ্টা না করে। আবার তিনিই সব সময় বলে থাকেন, কাউকে হত্যা করে তথা জঙ্গিবাদকে ধারণ করার মধ্য দিয়ে ইসলামের বিজয় সাধিত হয় না। ইসলাম শান্তির ধর্ম।
এই শান্তির খোঁজেই প্রিয় বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো বিশ্ব তা দেখছে। বৈশ্বিক শান্তি রক্ষায় সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে বাংলাদেশ—- তা কি কেহ অস্বীকার করতে পারে ?
শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক মিরাকল। তিনি কী করেননি? কী পারেননি? আন্দোলন করে স্বৈরাচারী সরকার বিদায় করেছেন। ২৩ বছর পর স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দেশের শাসনভার পায় তার নেতৃত্বে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন, জাতির জনকের হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। এমন অসাধ্য কাজ সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। ২৩ বছর ক্রমাগত নির্যাতন, নিপীড়নের পরেও একটি দল টিকে ছিল এটাই তো এক বড় বিস্ময়। শেখ হাসিনা হাল না ধরলে তা কতটুকু সম্ভব হতো তা ঐতিহাসিক আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে বরাবরই বড় একটি আলোচনার বিষয়।
শেখ হাসিনাকে মিরাকল কেন বলছি? কারণ, তার এমন কিছু রাজনৈতিক গুণের প্রমাণ আমরা দেখেছি যেগুলো বিস্ময়ের উদ্রেক করে। তিনি দলের এমন এক অবস্থানে ছিলেন, যেখান থেকে চাইলেই শুধু নির্দেশ জারি করেও দল চালাতে পারতেন। এতো পরিশ্রম না করলেও পারতেন। কিন্তু এটা যে সাধারণ মানের নেতাদের ভাবনা। শেখ হাসিনার ভাবনা ভিন্ন, তিনি অসাধারণ, তার ভাবনা ও কাজও তাই। দেশের ৬৪টি জেলা, সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নের সাংগঠনিক অবস্থা তার নখদর্পণে। তিনি জানেন কোথায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন, কোথায় তার কোন নেতাকর্মীর ত্যাগ, অবদান কতটুকু, কে বঞ্চিত আর কে আখের গুছিয়েছে। এমন বিচক্ষণ আর পরিশ্রমী না হলে হয়তো তিনি যে অসাধ্য সাধন করেছেন তা হতো না। এমন পরিশ্রমী না হলে হয়ত সাফল্যের চূড়ায় ওঠা যেত না। এজন্যই শেখ হাসিনাকে বাঙালি জাতির জন্য আল্লাহর রহমত বলে থাকি আমি। কেননা, সততা, দেশ প্রেম, এত ত্যাগ, এত পরিশ্রম, এত মেধা সবকিছুর সমান সমন্বয় বঙ্গবন্ধুর পর তার কন্যা শেখ হাসিনার মাঝে রয়েছে। তিনি আমাদের বিস্ময় নেত্রী।
শেখ হাসিনার বহু সিদ্ধান্ত সমকালের বিচারে সমকালীন বোদ্ধাদের বোধের অতীত। তাই সমালোচনাও সইতে হয় তাকে। কিন্তু একটি মহৎ সাহিত্য যেমন কয়েক যুগ না পেরোলে তার প্রকৃত প্রশংসা জোটে না, তেমনই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যত সময় যায় ততো সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়।
শেখ হাসিনার মতো যোগ্য নেতৃত্ব যদি দেশের হাল না ধরতেন, তাহলে দেশ আজ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হতো। স্মরণ করুন ২০০১ সালের পর দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের ভয়াবহ দিনের কথা। অনেক এলাকায় তখন জঙ্গিনেতা লাদেনের ছবি নিয়ে প্রকাশ্যে মিছিল করত উগ্রবাদীরা। বাংলা ভাই, আব্দুর রহমানের মতো পাষণ্ড জঙ্গিরা এদেশকে আফগানিস্তান বানানোর পণ করেছিল। জঙ্গিনেতাদের এসব পরিকল্পনা যেন ঠিক বিএনপি-জামায়াতের আদর্শেরই প্রতিফলন।
কেননা তারা সারাজীবন বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র, আফগানিস্তানের মতো জঙ্গিদের অভয়ারণ্য হিসেবে দেখতে চায়। তাই তৎকালীন সরকার জঙ্গিদের ছিল পৃষ্ঠপোষক। শেখ হাসিনা সরকারে থাকুন বা বিরোধীদলে— তিনি থাকলে উগ্রবাদীদের স্বপ্ন কখনই বাস্তবায়ন হবে না, তা তারা জানত। তাই শেখ হাসিনাকে প্রাণে মারার জন্য হামলা চালায় তারা। জোট সরকারের সহায়তায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা সেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির জনককে হত্যারই ধারাবাহিকতা। সেই একই অপশক্তির একই উদ্দেশ্যে একই অপকর্ম।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর বাংলাদেশের দিশা আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দিকে ঠিক করেন শেখ হাসিনা। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার ও রায় কার্যকর, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর এই দুটি কারণে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এমন এক সুসংহত স্থানে নিয়ে গেছেন, যার সুফল আমাদের পরিবর্তী প্রজন্ম ভোগ করবে। কারণ, তখন আর স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তির এত আস্ফালন থাকবে না। শেখ হাসিনা তাদের নির্মূল করেছেন।
উন্নয়নের এক মহাকাব্য রচনা হয়েছে শেখ হাসিনার হাত ধরে। দেশের অর্থনীতির আকার এত দ্রুত বাড়ছে যে- এখন দাঁড়িয়ে আজ থেকে বারো বছর আগের বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা দেখলে অবিশ্বাস্য মনে হয়। সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানের সাফল্য চোখ ধাঁধানো নয়।
শুধু অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক পর্যায়ে শান্তি নয়, বৈশ্বিক শান্তির জন্যও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত। চলতি বছরের মে মাসে জাতিসংঘ বাংলাদেশের পাঁচ জন শান্তিরক্ষীকে তাদের অসামান্য অবদানের জন্য ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ দিয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন যুদ্ধপ্রবণ দেশে শান্তিরক্ষায় নিজেদের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে তাঁরা এই স্বীকৃতি পেয়েছেন। শান্তির জন্য রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দেয়া, ২০০৯ সালের পর থেকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে হাসিনা সরকারের  জিরো টলারেন্স, শান্তিরক্ষীদের অবদান—- সব মিলিয়ে শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে এবং তাঁকে একজন  উঁচুস্তরের রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ করায়।
শেখ হাসিনার নিজের আর কি হারানোর আছে? তিনি একটা রাষ্ট্রযন্ত্রের চালক, যা ছুটছে। উন্নয়নের কিংবা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানকরত উদ্যোগগুলোর প্রতি সম্মান জানানোর আবারো তাই সময় আসছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনমানুষের রায় বা ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তাঁকেই এই রাষ্ট্রের চালক হিসাবে দায়িত্ব নিতে হবে।
মেঘ তাই কেটে যাবে। ঝড়-সাইক্লোনে যারা ভাসতে চায়, তাঁদেরকে বলতে চাই যে, জনস্বার্থ সংরক্ষণ করে মানুষের জন্য রাজনীতি করুন। এতে করে ফল ভাল হবে। বিরাজনীতিকরণের যে স্বপ্ন একটি শ্রেণি দেখতে চাইছে, তাঁদের কে বলব, আমাদের সরকার প্রধান এখন আর দুর্বল সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন না, তিনি গণমুখী এক অদম্য মানবিক রাজনৈতিক সত্তা, যিনি বৈশ্বিক রাজনীতির যে আভিজাত্যের তাঁবু —-সেখানেও উঁচু আসন পেতে অভ্যস্ত। তিনি শক্তিশালী চরিত্র হয়েই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার প্রধান ও অনন্য পর্যায়ের রাষ্ট্রপ্রধানও বটে।
শেখ হাসিনার ৭৭-তম জন্মদিনে মনের মধ্যে উচ্ছ্বাসও আছে। তাঁর মুখাবয়বের দৃষ্টি সেরে আমরা মুজিব সেনা হয়ে রাজপথে লড়তে যাওয়ার সংকল্পে চলে যেতে পারি। এই পৃথিবীর মধ্যে তিনি সেই নেতৃত্ব, যিনি ঘরের মায়ের মত, সমাজ থেকে রাষ্ট্রেরও মা। মায়ের জন্য সন্তানেরা লড়বে। শুধুমাত্র তাঁর দীর্ঘজীবন কামনা করা ছাড়া পরম করুনাময়ের কাছে আর কিছু চাওয়ার নেই। আজ আলাদা করেই আমার আমাদের মায়ের জন্য হাত ধরে মোনাজাতে যেতে চাই। এক অদম্য সত্তার আয়ু হোক শত বছরের! জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
লেখক:
সম্পাদক ও প্রকাশক
দৈনিক ভোরের পাতা ও দি পিপলস টাইমস
সহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ইরান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি
সহ সভাপতি, ইন্ডিয়ান ইম্পোর্টারস চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি
সাবেক পরিচালক, এফবিসিসিআই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *