বিশেষ প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে উপজেলার মুন্সিগঞ্জে অবস্থিত নাম করা প্রতিষ্ঠান “লির্ডাস” এর পরিচালক মোহন কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে প্রকল্পের টাকা নয় ছয়ের অভিযোগ উঠেছে ৷

সামান্য দিনমজুর, অভাবের সাথে লড়াই করে উপকূলে বেড়ে উঠতে মোহন কুমার মন্ডল ১৯৯৬ সালের পর একটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত উন্নয়নে কাজ করতে একটি এনজিওতে চাকরি করতেন ৷

এনজিওর সকল কার্যক্রম বুঝে ২০০৭ সালে একটি সরকারী বিধি মোতাবেক “লির্ডাস” নাম করণ করে রেজিষ্ট্রেশন করেন মোহন ৷

২০০৯ সালের আয়লায় বিভিন্ন কার্যক্রমের পর থেকে এনজিও “লির্ডাস” ব্যাপকভাবে সুনাম অর্জন করে ৷ “লির্ডাস” বাংলাদেশের জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভূমিহীন, প্রান্তিক কৃষক, শ্রমিক ও নারী প্রধান পরিবার, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে কাজ করে আসছে ৷ কিন্তু বর্তমানে এই সুনাম অর্জনকারী “লির্ডাস” এর পরিচালকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নয় ছয়ের অভিযোগ উঠেছে ৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের ফেইসবুকের পেইজ থেকে এই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের উপর ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে ৷

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের উপকূলবাসীর নাম ভাঙিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বুনে গেছেন ৷ উপকূলকেন্দ্রীক লোকাল এনভায়রনমেন্ট এন্ড এগ্রিকালচার রিসার্চ সোসাইটি “লিডার্স” নামক এনজিওর স্বঘোষিত পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল

এনজিও বিষয়ক ব্যুরো অফিস এবং অনুসন্ধানে জানাগেছে যে, উপকূলবাসীর দুঃখ দূর্দশাকে বিক্রি করে রীতি মতো বিদেশী বিভিন্ন দাতব্য সংস্থাকে ভেলকিবাজি দেখিয়ে এই অর্থ আত্মসাৎ করছেন ৷

মোহন তার তার এনজিও লিডার্সের মাধ্যমে বিদেশী দাতব্য সংস্থা – ব্রীড ফর দ্যা ওয়ার্ল্ড, সুইচ কনটাক্ট, অক্সফার্ম, ওয়াটার কিপার বাংলাদেশ, পিটারসন কন্ট্রোল ইউনিয়ন, জাহেদ সাসটেইনেবিলিটি প্রাইজ-২০২০ দুবাই সহ আরো বিভিন্ন সংস্থা থেকে উপকূলবাসীর সমস্যা সমাধানের নাম ভাঙ্গিয়ে গত ৫ বছরে প্রায় কয়েক কোটি টাকা হাতিয়েছেন ৷

বিপরীতে লোকদেখানো কিছু স্থাপনা, অকেজো যন্ত্রপাতি, বসিয়ে নামে মাত্র অর্থ খরচ করেছেন আর সেসব অর্থের ছিটেফোঁটাও কাজে আসেনি উপকূলীয় বাসিন্দাদের জন্য ।

সরেজমিনে গিয়ে পানখালি গ্রামের আনিছুর রহমান সহ স্থানীয়রা জানান, লিডার্সের পরিচালক মোহন সবচেয়ে বড় ভেলকিবাজি করেছেন উপকূলবাসীর জন্য তৈরিকৃত বিশুদ্ধ পানির প্লান্টের নামে- বিভিন্ন বিদেশী সংস্থা থেকে অন্তত ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেও কেবলমাত্র মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের আইটপাড়ার হরিনগর রোড, গ্যারেজ বাজারের ফুলতলা এলাকা, ও মুন্সিগঞ্জ বাজার সংলগ্ন ধানখালী এলাকায় ৩ টি নামে মাত্র পানির প্ল্যান্ট স্থাপন করেছেন ৷ একটি প্ল্যান্ট থেকেও বিশুদ্ধ পানি দেখা পায়নি এলাকাবাসীরা।

উদ্বোধনের পর থেকেই বিকল হয়ে পড়ে আছে প্ল্যান্টগুলো, একটি পানির প্ল্যান্ট ভবনের মধ্যে পানি সরবরাহের বদলে এক নারীকে সেলাই মেশিন ব্যবহার করতে দেখাগেছে। মোহনের অভিনব প্রতারণার তথ্য- যখন কোন সরকারি বা বিদেশি সংস্থা থেকে প্রতিনিধি দল মোহনের লিডার্স এনজিওর বিভিন্ন প্রজেক্ট পরিদর্শনে আসেন তখন মোহন বাইরে থেকে পানি এনে অকেজো প্ল্যান্টের ট্যাংকি ভর্তি করে স্থানীয় দরিদ্র পরিবারগুলোকে তাৎক্ষণিক কিছু নগদ অর্থ দিয়ে তার প্ল্যান থেকে পানি সংগ্রহ করতে আসার নাটক করে হয় নাটকীয় ফটোসেশন । আর এসব ছবি দেখিয়ে পরবর্তীতে আরো বড় ডোনেশন হাতিয়ে নেন মোহন।

মোহনের প্রতারণার আরেক কৌশল নেভাল এ্যাম্বুলেন্স, মূলত বিদেশী সংস্থার মোটা টাকার অর্থায়নে ক্রয়কৃত নেভাল এ্যাম্বুলেন্স স্পীডবোটটি উপকূলের দূর্গম বা চর এলাকায় অসুস্থ হয়ে পড়া রোগী পরিবহনে ব্যবহার হবার কথা থাকলেও সেটিতে কখনো রোগী পরিবহন করতে দেখেননি কেও। উল্টো স্পীডবোট এ্যাম্বুলেন্সটিতে করে সুন্দরবনে আনন্দ ভ্রমণ করতে দেখা গেছে মোহনের লিডার্স এনজিওতে কর্মরত স্টাফ ও পর্যটকদের ৷

একই ভাবে বাঘবিধবাদের নিয়ে বিদেশি থেকে অর্থ নিয়ে কাজ করলেও সেগুলো ঠিকমত বন্টন করেননি এমন অভিযোগ করেছেন গাবুরা ইউনিয়নের বাঘবিধবা স্বরবানু খাতুন ৷

মুন্সীগঞ্জ গ্রামের শহীদুল ও আহম্মাদ জানান, উপকূলীয় মানুষদের নাম ভাঙ্গিয়ে কারবার চালানো মোহনের লিডার্স এনজিওর বেশ কয়েকটি অফিস ভবন আদৌতে উপকূল বাসীর কোন কাজেই লাগছে না। সাপ্তাহিক বা মাসিক মিটিংয়ে উপস্থিত এলাকাবাসীর জন্য যে পরিমাণ বাজেট থাকে তার ১০০ ভাগের ২০ ভাগও খরচ করা হয়না। কিন্ত ভুয়া ভাউচার বানিয়ে ঠিকই আত্মসাত করা হচ্ছে বিদেশী দাতব্য সংস্থার অর্থ। আর এভাবেই মাত্র ১৪ বছরে উপকূলবাসীর দুঃখ বিক্রি করে খাওয়া মোহন কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেলেও লিডার্সের মাধ্যমে ভাগ্য বদলায়নি কোন উপকূলবাসীর ৷

অন্যদিকে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর উপসচিব ও প্রশাসন শাখার উপপরিচালক মো: মনির হোসেন কর্তৃক সাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত কোন কোন সংস্থা থেকে মোট কতো টাকা ডোনেশন পেয়েছে লিডার্স তার তথ্য দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয় লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহনকে। কিন্ত এ প্রজ্ঞাপন জারির প্রায় ১ মাস পার হয়ে গেলেও কোন সদুত্তর দিতে পারেনি মোহন।

এ বিষয়ে মোহন কুমার মন্ডল বলেন, সবগুলো পানির প্ল্যান্ট সচল রয়েছে ৷ সেখানে কেয়ারটেকারও রয়েছে ৷ নেভাল এ্যাম্বুলেন্স শুধু মাত্র সুন্দরবনে বাঘ বা কুমিরের আক্রমণে শিকার হয়, তাদের জন্য ৷ বনবিভাগ আমাদের অবগত করলে আমরা সেখানে যায় ৷ বাঘ বিধবাদের নিয়ে আলাদা কোন প্রজেক্ট হয়নি, তবে তাদেরকে অনেক কিছু দিয়েছি ৷ অর্থ আত্নসাতের বিষয় তিনি বলেন, আমি প্রতিষ্ঠান পরিচালক হিসাবে আমারও একটা বেতন থাকতে পারে ৷ সেই টাকা জমিয়ে আমি জমি বা ফ্লাট কিনতে পারি ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *