বিশেষ প্রতিনিধি : ৯ বছর ধরে সরকারি খাস জমিতে বসবাসকারী বিধবা রোকেয়া খাতুনের খুপড়ি ঘরটি ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হলো। রোববার সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ইসমাইলপুর গ্রামে কোভিড কালীন এই অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে।

১০ থেকে ১২ জন লোক নিয়ে স্থানীয় ভুমি অফিসার মোহাম্মাদ আলীর নেতৃত্বে রোকেয়ার কোন কথা না শুনেই সন্ত্রাসী কায়দায় তার বাড়িটি ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে।

ইসমাইলপুর গ্রামের সাবুর আলীর বিধবা স্ত্রী রোকেয়া খাতুন তার ঘর গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুজার গিফারীকে দায়ী করেছেন।

তিনি বলেন, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে ইউএনও তার ঘরটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ তার আশপাশে আরও অনেক দরিদ্র পরিবার খাস জমিতে বসবাস করলেও তারা নির্বিঘ্নে রয়েছেন।

রোকেয়া জানান, আমি ইউএনও’র সরকারি বাসভবনে গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করতাম। কিছুদিন আগে আমার করোনা উপসর্গ দেখা দিলে তিনি আমাকে বাড়ি থেকে চিকিৎসা নিতে বলেন। এই কারনে আমি বাড়িতেই ছিলাম এবং চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছি। এরই মধ্যে ইউএনও নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন।

তাকে সেবা দেওয়ার জন্য আমাকে সেখানে যেতে বলা হয়। কিন্তু আমি করোনার আতংকে এবং আমার একটিমাত্র মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে ইউএনওকে সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। এতেই তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ছিলেন। রোকেয়া আরও জানান, দুদিন আগে আমি কাজের জন্য ইউএনও’র বাসায় ঢুকতে চেষ্টা করলে আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

রোকেয়া জানান, কোনকিছু বুঝে ওঠার আগে আজ রোববার সকালে ভুমি অফিসার মোহাম্মাদ আলীর নেতৃত্বে একদল লোক দা, কোদাল, শাবল নিয়ে আমার ঘরটি ভেঙেচুরে দিয়ে যায়। আমার কোন অনুরোধও তারা শোনেনি। ওই ঘরে আমার দিনমজুর মেয়ে ও জামাই থাকতো। তারা এখন আশ্রয়হীন হয়ে পড়লো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুমি অফিসার মোহাম্মাদ আলী বলেন, রোকেয়ার নামে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি গৃহ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারপরও তিনি সরকারি খাস জমির একাংশ দখল করে ছিলেন। এজন্য তাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর আগে তাকে কোন নোটিশ দেওয়া হয়নি স্বীকার করে তিনি বলেন, রোকেয়ার ঘর থেকেই উচ্ছেদ শুরু করা হলো।

শ্যামনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান এ্যডভোকেট জহুরুল হায়দার বাবু বলেন, কোভিড চলাকালে তার ঘরবাড়ি ভেঙে উচ্ছেদ করা একটি অমানবিক বিষয়। তিনি এর প্রতিবাদ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুজার গিফারী বলেন, রোকেয়ার প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশের কোন সুযোগ নেই। করোনাকালে কোন বাড়িতে গৃহকর্মীর থাকাটা নিরাপদ নয়। তাছাড়া সরকারি জমি উদ্ধার একটি চলমান প্রক্রিয়া।

রোকেয়াকে তার বসবাসের জন্য আগেই একটি গৃহ দেওয়া হয়েছে। তিনি বাড়তি জমিতে থাকার কারনে তার ঘরটি সরিয়ে না নেওয়ায় আমরা ভেঙে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আশপাশের আরও খাস জমি দখলকারীদের পর্যায়ক্রমে সরিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের নতুন নতুন ঘর তৈরী করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *