চট্টগ্রাম ৫ ফাল্গুন (১৮ ফেব্রুয়ারি) : তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা ঘোষণা দিয়েছেন। ষাটোর্ধ সবাই যেন পেনশনের আওতায় আসেন সে জন্য প্রধানমন্ত্রী একটি আইন প্রনোয়ন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
এমনকি যারা বিদেশে আছেন তারাও এই পেনশনের আওয়াতায় আসবেন।
আজ চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন টেলিভিশনের সংখ্যা ছিল দশটা, আর গত তেরো বছরে টেলিভিশনের সংখ্যা দাড়িয়েছে ছত্রিশটি এবং সরকারি আরো চারটি। সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে এখন সম্প্রচারে আছে প্রায় চল্লিশটি চ্যানেল। গণমাধ্যমের যে ব্যাপক বিকাশ, এটিই তার বহিপ্রকাশ।
ফলে এই সেক্টরে হাজার হাজার শিক্ষিত তরুণের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শুধুমাত্র সাংবাদিক হিসেবে নয়, কলাকৌশলী থেকে শুরু করে আরো নানাভাবে টেলিভিশন সেক্টরে চাকরির সুযোগ পাচ্ছে।
এই সাথে দৈনিক প্রত্রিকার সংখ্যা তের বছর আগে সাড়ে চারশটি ছিল, আর এখন পত্রিকার সংখ্যা সাড়ে বারোশতের উপরে। তবে কিছু পত্রিকা আছে নিউজ একটা পেলে সেটা ছাপায়, কিছু পত্রিকা আছে সরকারি বিজ্ঞাপনের জন্য টেবিলে টেবিলে ঘুরে বেড়ায়। এই সমস্ত পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক, বিল কালেক্টর, ডিস্টিবিউটর এবং হকার তিনি নিজেই ।
আমরা এইরকম পত্রিকা নিহ্নিত করেছি এবং প্রায় একশত পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করেছি। এই প্রকৃয়া চলমান থাকবে। চট্টগ্রাম থেকে অনেকগুলো দৈনিক পত্রিকা বের হয়। চট্টগ্রামের সবগুলো টেলিভিশন চ্যানেলের অফিস আছে। ভবিষ্যতে হয়তো চট্টগ্রাম ভিত্তিক টেলিভিশনের জন্য কেউ এগিয়ে আসতে পারে।
আমাদের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন সবার জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালু করবেন। সেই প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের লক্ষে ষাটোর্ধ সবাই যাতে পেনশনের আওতায় আসেন, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী একটি আইন প্রনোয়ন করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল গণমাধ্যমের কল্যানের লক্ষে এমন একটি ঘোষণা দিয়েছেন যা আগে কোন দল কিংবা যারা রাত বারোটার পর টেলিভিশনের পর্দা গরম করেন তারা কখনো বলেনি। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ নিয়ে প্রতিনিয়ত যারা বিক্ষোপ প্রদর্শন করছেন তারাও বলেনি আর যারা সময়ে অসময়ে, কারণে অকারণে জাতিকে জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করেন তারাও বলেনি। প্রধানমন্ত্রী একমাত্র নিজস্ব চিন্তা থেকে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা ঘোষণা দিয়েছেন।
আপনারা জানেন, আমাদের সরকার বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যমে দেশের তিন কোটি মানুষকে নানাভাবে ভাতা দিচ্ছে। বয়স্কভাতা, বিদবা ভাতা, স্বামীপরিত্যাক্ত ভাতা পেয়ে নানাভাবে উপকৃত হচ্ছেন। এমনকি ইউরোপেও স্বামী পরিত্যাক্ত ভাতা দেওয়া হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে যদি দরিদ্র পরিবারে স্বামীকতৃক কোন স্ত্রী পরিত্যাক্ত হয়, তিনি সরকারের কাছ থেকে ভাতা পাচ্ছেন। এইভাবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে একটি সামাজিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্রে রুপান্তর করতে করতে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।
পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সুজন, এরা কারা? এটি একটি এনজিও। এদের সাড়াদেশে কোন শাখা-প্রশাখা কিছুই নেই। এরা ব্যক্তিবিশেষ নিয়ে একটা এনজিও। বিভিন্ন সংস্থা থেকে তহবিল সংগ্রহ করে চলে। এমকি নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকেও তারা একসময় তহবিল নিয়েছিল , যেটি নিয়ে প্রশ্ন রেখেছিলে বিগত প্রধান নির্বাচন কমিশন।
তারা অতীতে কখনো নির্বাচন করেনি, করবেও না। নির্বাচন কমিশন নিয়ে এভাবে পরামর্শ দিচ্ছে। তাদের এত দাদাগীরি কোন আর গণমাধ্যমেও কেন ফলাওভাবে প্রকাশ করা হয় সেটিও আমার প্রশ্ন।যেভাবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এবং যেভাবে অংশগ্রহণমূলক ভাবে এবার নির্বাচন কমিশন গঠন করা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেটি অভাবনীয়। বহু বছরের পুরোনো গণতন্ত্রের দেশেও এভাবে করা হয় না।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরো বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার থাকবে বর্তমান সরকার, যেটি গত নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিল। নির্বাচন সরকারের অধিনে হয়না।
নির্বাচনকালীন সময়ে কোন মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রীরও একজন কনস্টেবল বদলি করার ক্ষমতা রাখে না। রিজবী সাহেবর প্রশ্নের জবাবে বলেন তিনি তো তাদের নয়া পল্টনের অফিসে আমাদের বিদায়ের ঘন্টা গত বারো বছর ধরে বাজাচ্ছেন। আরো কত বছর ধরে বাজাতে হয় সেটি জনগণ ঠিক করবে। বিদায়ের ঘন্টা তারা বাজিয়েছে সত্য কিন্তু জনগণ গত দুই নির্বাচনে নির্বাচিত আমাদের দেশ পরিচালনার জন্য দিয়েছেন।
আগামী নির্বাচনেও আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করি প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বে যে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে দেশে এবং প্রতিটি মানুষের সে কারনে জনগণ আবারো নৌকায় ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়িত্ব দিবেন।
সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সাবেক মেয়র আজম নিসির, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম, সাংবাদিক নেত্রীবৃন্দ ও গণমাধ্যমকর্মীর এসময় উপস্থিত ছিলেন।