মো: আজিজুল ইসলাম(ইমরান) : সাতক্ষীরার উপকূল এলাকায় ফ্রেন্ডশিপ এনজিও সাড়ে চার লক্ষ ম্যানগ্রোভ চারা রোপন কর্মসূচী সফল ভাবে সম্পন্ন করেছে। বিশ্বপরিবেশ দিবস কে সামনে রেখে এনজিওর টেকনিক্যাল ম্যানেজার মাইদুল ইসলাম সাংবাদিককে বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় আঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ফলে দারুণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলের জনগন অধিকাংশই হতদরিদ্র ও বননির্ভর।
তারা সাধারণত কৃষিকাজ, মাছশিকার, চিংড়ীচাষ ও দিনমজুর করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে সুন্দরবন সংলগ্ন লোকজন সুন্দরবন থেকে মাছ, কাঁকড়া, মধু সংগ্রহ করে থাকে। আর এই শ্রেনীর মানুষ জলবায়ু আপদ দ্বারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত।
১৯৯১সালের ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়, ২০০৭ সালের সিডর, ২০০৮ সালের নার্গিস, ২০০৯ সালের আইলার মত ঘূণিঝড় উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে। যার ফলে লক্ষ লক্ষ লোক প্রাণ হারায়। অনেকে তাদের শেষ সম্বল বসতবাড়িটুকু হারিয়ে এখন এলাকা ছাড়া। উপকূলীয় এলাকায় ম্যানগ্রোভ ও অন্যান্য বনায়নের মাধ্যমেই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্টি ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাসের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব।
আর এই লক্ষ্যে ফ্রেন্ডশিপ সাতক্ষীরা জেলায় ২০১৮ সাল থেকে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় ১৫০ হেক্টর চর বনায়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যে ৫০ হেক্টর চর জমিতে ১,৫০,০০০ টি বিভিন্ন প্রজাতির ম্যানগ্রোভ চারা রোপন করেছে এবং আরো ১০০ হেক্ট জমিতে চারা রোপনের কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন আছে।
শ্যামনগর উপজেলায় মুন্সিগঞ্জ ও রমজাননগর ইউনিয়নের মাদার ও মরাগাং নদীর তীরবর্তী ২২ হেক্টর চরে এবং আশাশুনি উপজেলার প্রাতাপনগর ও আনুলিয়া ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর তীরবর্তী চরে ২৮ হেক্টর জমিতে বনায়নের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ফ্রেন্ডশিপ ৪টি নার্সারীতে চারা উৎপাদন করে বনায়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে উক্ত নার্সারীতে ১,১০,০০০ টি চারা মজুদ আছে, যা পরবর্তীতে বনায়ন কর্মসূচীতে ব্যবহার করা হবে।
ম্যানগ্রোভ বনায়নের ফলে নতুন ভাবে জীববৈচিত্র সৃষ্টি হয়েছে যা পরিবেশের জন্য উপকারী। ম্যানগ্রোভ বনায়নের ফলে স্থানীয় জনগণ মাছ, কাঁকড়া সংগ্রহ, মধু আহরন করতে পারবে ফলে সুন্দরবনের উপর চাপ কমবে বলে আমরা মনে করি। স্থানীয় জনগনকে সম্পৃক্ত করে উপজেলা বন কর্মকর্তার মাধ্যমে তাদেরকে ও প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে নার্সারীতে চারা উৎপাদন, বৃক্ষরোপন ও পরিচর্যায় সকলের অংশ গ্রহন নিশ্চিত করা হচ্ছে ।
এছাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসারের মাধ্যমে বসতভিটায় সবজীচাষ, জৈব সার প্রস্তুত, হাঁসমুরগী পালনের উপর সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর ফলে স্থানীয় জনগনের বিকল্প জীবিকায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে তাদের জীবন যাত্রারমান উন্নয়ন হচ্ছে।
শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মীরগাং কমিউনিটির সদস্য রেশমা বেগম বলেন, “সুন্দরবন আমাদের মা”। সুন্দরবন আমাদের ঝড়, জলোচ্ছাস থেকে রক্ষা করে। এখান থেকে আমরা কেওড়া, জ্বানালীকাঠ ও গোলপাতা পাই যা আমাদের অনেক উপকারে লাগে।
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সনাতনকাঠি গ্রামের বাসিন্দা মজিবর সানা বলেন, আপনারা যে গাছ লাগিয়েছেন তা আমাদের অনেক উপকার করেছে। দুটি ঝড়ে আমরা রাস্তায় ছিলাম। এই বনায়নের কারনে রাস্তা গুলো ভাল আছে। যেসব জায়গায় গাছ নেই সেখানে বেঁড়িবাঁধ ভেঙ্গে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট, ফসলিজমি, মাছের ঘের, বেঁড়িবাঁধ, ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এজন্য বেশি করে গাছ লাগানো উচিত বলে তিনি মনে করেন।