সাতক্ষীরার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের কৃতি সন্তান ডিবি গার্লস হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা সাবেক সিনিয়র সহকারি সচিব ক্যানাডা প্রবাসী এবিএম মিজানুর রহমান মধু (৭৩) এর স্মরণ ও তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিবি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের উদ্যোগে মঙ্গলবার বাদ এশা ব্রহ্মরাজপুর বাজার জামে মসজিদে এ স্মরণ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন ডিবি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছোবহান সরদার। বক্তব্য রাখেন মসজিদের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল ওহাব আজাদ, প্রধান শিক্ষক মো: এমাদুল ইসলাম দুলু, শিক্ষক এসএম শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন সাবেক মেম্বর খোরশেদ আলম, শ্রমিক নেতা আব্দুল হামিদ বাবু, জাপা নেতা জাহাঙ্গীর কবির, মসজিদের সভাপতি আব্দুর রশিদ, ডা: জিয়াউর রহমান, শিক্ষক হাফিজুল ইসলাম, সাংবাদিক সেলিম হোসেন প্রমুখ। দোয়া ও আলোচনা সভা পরিচালনা করেন মসজিদের খতিব মাও: মোজাম্মেল হক।
প্রসঙ্গত: এবিএম মিজানুর রহমান মধু ২৯ জুলাই ২০২১ তারিখ বাংলাদেশ সময় রাত ৮ টা ২৫ মিনিটে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুনগ্রাহীদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে ক্যানাডার টরেন্টোতে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসারত ছিলেন।
মরহুম এবিএম মিজানুর রহমান সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের সরদারবাড়ির মো: নজরুল ইসলাম হারু সরদারের জ্যেষ্ঠ পুত্র। তিনি ডিবি ইউনাইটেড হাইস্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করে পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইডি করাকালীন ৮৪ ব্যাচে সিভিল সার্ভিসে (প্রশাসন ক্যাডার) যোগদান করেন।
চাকরিকালীন তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিসিএস প্রশাসন একাডেমির গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। লন্ডন থেকে তিনি দেড় বছরের উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেন। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরর সিনিয়র সহকারি সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিশ্বের উন্নত দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মডেল হিসেবে বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করেন।
কম্পিউটার শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য মডেল হিসেবে তৎকালীন সারা দেশে দুটি স্কুল বেছে নেওয়া হয়। তারমধ্যে ডিবি ইউনাইটেড হাইস্কুল ছিল একটি। এটি এবিএম মিজানুর রহমানের অবদান ছিল। পরবর্তীতে তৎকালীন সরকার শিক্ষায় নৈর্ব্যক্তিক ব্যবস্থা চালু করে।
এখানেও এবিএম মিজানুর রহমান মধুর অবদান স্মরনীয়। সাতক্ষীরার শিক্ষার উন্নয়নে মিজানুর রহমান মধুর অবদান চিরকাল স্মরনীয়। সাতক্ষীরার শিক্ষা আন্দোলনের প্রতিক পুরুষ মরহুম আব্দুল মোতালেব ও মিজানুর রহমানের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
কুমিরা মহিলা কলেজ, সফুরুন্নেছা মহিলা কলেজ, ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠায় মিজানুর রহমানের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি সাতক্ষীরার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি বাইরাইনে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দায়িত্ব পালন শেষে দেশে এসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। কিন্তু মেধাবী এই কমকর্তা চারদলীয় জোট সরকারের রোষানলে পড়ে তিনি চাকরি থেকে অগ্রিম অবসর নিয়ে তিনি আমেরিকাতে উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য পাড়ি দেন। তারপর তিনি ক্যানাডার টরেন্টোতে পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে সম্মানের সাথে বসবাস করছিলেন।
মূলত ক্যানাডা থেকে তিনি সিপিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। সেখানেই চাকরি নেন। ব্রহ্মরাজপুর ডিবি গার্লস হাইস্কুল তার হাতেই প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তিনি এলাকার বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। তিনি এক পুত্র সন্তানের জনক। তার স্ত্রীও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করেন।