আলতাফ হোসেন বাবু : সাতক্ষীরায় বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২২ উদযাপন করা হয়েছে। প্রতিববছরের ন্যায় এবছরও পালিত হয়েছে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য “মৃত্তিকা (মাটি): খাদ্যের সূচনা যেখানে” (“Soils: where food begins”)।
এ উপলক্ষ্যে সোমবার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্তর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কালেক্টরেট চত্ত্বরে এসে র্যালী শেষ হয়। র্যালী শেষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি সাতক্ষীরা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির এর প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী আরিফুর রহমান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “দেশে যেন খাদ্যের অভাব না দেখা দেয় সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সকল অনাবাদী জমি চাষাবাদের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছেন। কোথাও যেন ১ ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদী না থাকে।
তিনি আরো বলেন, অপ্রয়োজনীয় সার কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কারণ অপ্রয়োজনীয় সার কীটনাশক ব্যবহারে দিন দিন মাটি তার উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে। সেকারণে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। অঞ্চল ভিত্তিক দেশের সকল এলাকার মাটি পরীক্ষা করে মাটি উপযোগি ফসল উৎপাদন করতে হবে। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কৃষিবিদ ও কৃষকদের এগিয়ে আসতে হবে।”
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মোঃ জামাল উদ্দীন’র সভাপতিত্বে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস এর উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শামসুন নাহার রত্না ।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আঞ্চলিক কার্যালয় সাতক্ষীরা’র উপরিচালক অলি আহমেদ ফকির, সাতক্ষীরা হটিক্যালচার সেন্টারের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আমজাদ হোসেন, বিনা উপকেন্দ্র সাতক্ষীরা’র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বাবুল আক্তার, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ খালিদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় মৃত্তিকা বিজ্ঞানী শামসুন নাহার রত্না বলেন, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট এর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৮টি জেলার ৯৩টি উপজেলার মাটি ও পানি বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ততায় আক্রান্ত। ১৯৭৩ সালে লবণাক্ত জমির পরিমাণ ছিল ৮ লক্ষ ৩৩ হাজার হেক্টর।
২০০০ সালে বেড়ে গিয়ে ১০ লক্ষ ৩৩ হাজার হেক্টরে দাড়িয়েছে এবং ২০১০ সালে লবণাক্ততায় আক্রান্ত জমির পরিমাণ ১০ লক্ষ ৫৬ হাজার হেক্টর । লবণাক্ততার কারণে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শুকনো মৌসুমে কৃষকরা ফসল আবাদ করতে পারে না। জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষ করার ফলে এলাকায় লবণাক্ততা ক্রমান্ব্যে বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম একটি কারণ। লবনাক্ততার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি জমির উর্বরতার মান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। মুখ্য পুষ্টি উপাদান N, P, K, S এবং গৌণপুষ্টি উপাদান Zn, Bএর ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে ।
এছাড়াও বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৬৮,৭৬০ হেক্টর আবাদি জমি অনাবাদি জমিতে পরিণত হচ্ছে। মাটি হলো খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি। সারা পৃথিবীতে মানুষ যে সকল খাবার খায়, তার অন্তত শতকরা ৯৫ ভাগ আসে মাটি হতে। তাই মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরী। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাটির সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার বিকল্প নেই।
তাই আমাদের উচিত মাটি পরীক্ষা করে জমিতে সুষম মাত্রার জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা যাতে মাটি কাঙ্খতি উর্বরতা ধরে রাখা যায় এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
লবণাক্ততা, নদী ভাঙন ইত্যাদি কারণে প্রতিবছর এক দিকে কৃষি জমি যেমন কমে যাচ্ছে অপরদিকে, ভেজাল সার ও অপরিকল্পিতভাবে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে মাটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ।
লবণাক্ত এলাকায় ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধির জন্য খামার পুকুর প্রযুক্তি, মাল্চ ব্যবহার ও কলস সেচের মাধ্যমে বিভিন্ন মাদা ফসল এর আবাদ বৃদ্ধি করা সম্ভব। তাই আসুন আমরা আমাদের কৃষক ভাইদের সচেতন করি এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুস্থ্য মৃত্তিকা সম্পদ উপহার দেওয়ায় সচেষ্ট হই ।