আলতাফ হোসেন বাবু : সাতক্ষীরা জেলা ব্যাপী গত ছয় মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ও ২৩ জন আহত হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারী থেকে জুন মাস পর্যন্ত জেলার সাতটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জনের মৃত্যু হয়।

বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে ট্রাফিক আইন অমান্য করা, অতিরিক্ত গতিতে বা বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো, ফিটনেস বিহীন গাড়ি চালানো, ঘুম চোখে গাড়ি চালানো, সড়কের বেহাল দশা, অসচেতনায় গাড়ি চালানো, অসেচতন ভাবে রাস্তা পারাপার সহ বিভিন্ন কারণে প্রতিনিয়ত সাতক্ষীরার বিভিন্ন জনপদে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। আর এই দুর্ঘটনার কারনে মানুষের প্রাণহানী ঘটছে।

পাশাপাশি অনেকে আহত হয়ে সারা জীবনের মতো পঙ্গুত্ব বরণ করে জীবন কাটাচ্ছেন। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা এর চেয়ে বেশিও হতে পারে। গত ছয় মাসের তথ্য অনুযায়ি দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ২১ জানুয়ারি রোববার সকাল ৯টার দিকে সদরের আলীপুর চেকপোস্ট এলাকায় দুটি মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ওষুধ কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার রিপন উদ্দীন নিহত হয়।

৩০ জানুয়ারী মঙ্গলবার সকাল ১১ টার দিকে তালা উপজেলার আঠারোমাইল-পাইকগাছা সড়কের তালা উপজেলার গোনালী বাজার এলাকায় মোটর সাইকেল-ট্রাকের সংঘর্ষে নলতা গ্রামের কামরুল শেখের ছেলে জামিরুল ইসলাম (১৫) নিহত হয়।

৮ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে কালিগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল ইউনিয়নের বাধাকুল এলাকায় মাটিবাহী ডাম্পারের নিচে চাপা পড়ে আসাদুল ইসলাম (৭) নিহত হয়। এতে ওই শিশুর পিতা শাহীন গাজী (৪০) আহত হন। একই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের আতাপুর ছোট মিয়ার দরগা শরীফ সড়কে ইঞ্জিন ভ্যান ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী শ্যামনগর উপজেলার আজাদ নগর এলাকার শিব চন্দ্রপুর গ্রামের জাহুর আলী গাজীর ছেলে মোঃ সাইফুল গাজী (২৯) নিহত হয়।

১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের উত্তর রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় দ্রুতগতির পিকআপের ধাক্কায় উত্তর রঘুনাথপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম সরদারের ছেলে লুৎফর রহমান (২৮) নিহত হয়।

২৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় সাতক্ষীরা থেকে হজ এজেন্সির মাধ্যমে ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে ইজিবাইকযোগে রওনা হয়ে বুধহাটা ইউনিয়নের নওয়াপাড়া ঢালী বাড়ি মসজিদ মোড়ে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আশা মাছ বহনকারী পিকআপ (ঢাকা মেট্রো-ন ১৯৫৫৬০) এর সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গজালিয়া গ্রামের মৃত আরশাদ আলীর স্ত্রী ফজিলা খাতুন (৬০), একই উপজেলার লক্ষ্মীখোলা গ্রামের কাশেম গাজীর স্ত্রী আছিয়া খাতুন (৫৫) নিহত হয়।

দুর্ঘটনা কবলিত ইজিবাইকে থাকা অপরযাত্রী পাইকগাছার আলমতলা-গজালিয়া এলাকার আসাদ গাজীর ছেলে মিজানুর রহমান, মুজিবুর রহমানের স্ত্রী রেশমা খাতুন, আব্দুস সামাদ গাজীর ছেলে হুমায়ুন কবির ও ইজিবাইক চালক ফজর আলী আহত হন।

২৭ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা মাদ্রাসা মোড়ে মাড়িয়ালা গ্রামের মাওলানা রুহুল আমিন (৪০) মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। তাকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন বুধবার বেলা ১১.৫০ টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

২মার্চ শনিবার বিকালে দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া নতুন বাজার এলাকায় একটি মোটরভ্যানকে ওভারটেক করতে গিয়ে ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়ে দেবহাটা উপজেলা সদরের মোস্তফার ছেলে বেলাল হোসেন (২৫) নিহত হয়। মোটরসাইকেলে থাকা শিক্ষক ওলিউল্লাহর ছেলে ইমন হোসেন আহত হয়।

৬ মার্চ বুধবার কালিগঞ্জ থেকে মোটরসাইকেলেযোগে তালা উপজেলার জেঠুয়া জালালপুর জগন্নাথ গুরুদেবের মন্দিরে যোজ্ঞ অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে আশাশুনি উপজেলার দরগাহপুর কাদাকাটি সড়কে ধাপুয়া ব্রিজের কাছে পৌঁছালে নির্মাণাধীন ব্রিজের ওয়ালে ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলে নয়ন ঘোষ (১৯) ও উইলিয়াম ঘোষ (১৮) নিহত হয়। এতে কর্নেল ঘোষ নামের অপর যুবক আহত হয়।

২২ এপ্রিল সোমবার দুপুরে সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের সুপারীঘাটায় দ্রুতগামী মোটরসাইকেলের ধাক্কায় সুপারীঘাটার রফিকুল ইসলামের পুত্র ওসমান (৫) গুরুত্বর আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শিশুটির অবস্থা আশংকা জনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতাল থেকে খুলনা আড়াই’শ শয্যা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়।

২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিলারের সাথে ধাক্কা লেগে পাটকেলঘাটা থানার রাজেন্দ্রপুর গ্রামের প্রভাত কুমার দাসের ছেলে রাজমোহন দাস (৩৫) নিহত হয়। ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সদর উপজেলার আগরদাড়ী মহিলা মাদ্রাসা ও কামিল মাদ্রাসার মধ্যবর্তী স্থানে কাঠবোঝাই ট্রলির সামনের চাকা ব্লাস্ট হলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি মোটর সাইকেলে ধাক্কা লাগে। মোটরসাইকেলে থাকা হাফিজুর রহমান ব্লু (৫৫) ও তার ছেলে আজিজুর রহমান(২৬) ঘটনাস্থলে নিহত হয়।

১৭ মে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বিনেরপোতা গ্রামের মৃত রূপচাঁদ গাজীর ছেলে ভ্যান চালক মোঃ কুদ্দুস গাজী (৭১) সদর উপজেলার সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের বিনেরপোতা বাজারে ভ্যানের উপর বসে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় সাতক্ষীরা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী দ্রুতগতির একটি ট্রাক তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় কুদ্দুস গাজীকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

১৮ মে শনিবার ভোর ৬টার দিকে তালা উপজেলার হরিশ্চন্দ্রকাটী সরদারবাড়ি বটতলা এলাকায় খুলনা-পাইকগাছা সড়কে ট্রাক উল্টে খাদে পড়ে খুলনার কয়রা উপজেলার বগা গ্রামের তালেব গাজির ছেলে ধানকাটা শ্রমিক সাইদুল গাজি (৩৮) ও মন্দারবাড়িয়া গ্রামের তোফাজ্জেল সরদারের ছেলে মনিরুল ইসলাম (৩০) নিহত হয়। এতে ওই ট্রাকে থাকা ১১জন শ্রমিক আহত হয়।

২৩ মে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে শ্যামনগর উপজেলার হায়বাতপুর বিদ্যালয়ের সামনে মোটর সাইকেল ও ডাম্পার গাড়ি মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটর সাইকেল চালক শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের দাঁতপুর গ্রামের মৃত গফফর শেখের ছেলে আব্দুল করিম (৩২) নিহত হয়।

২৫ মে শনিবার সকাল ৯ টার দিকে কলারোয়া পৌরসভার পল্লী বিদ্যুৎ এর পাওয়ারহাউজের কাছে যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের গোপীনাথপুর এলাকায় দ্রুত গতির একটি ট্রাক (নং-যশোর-ট-১১-০৮০৯) পেছন দিক থেকে একটি ট্রলি কে ধাক্কা দিয়ে মহাসড়ক থেকে পাশের ডোবায় ফেলে দেয়।

এসময় ট্রলি চালক ও ট্রলির হেলপার গুরুতর আহত হয়। সাথে সাথে পথচারীদের সহাতায় তাদের দুজনকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ট্রলিচালক শাওন মারা যায়। আর ট্রলির হেলপার আহত রাজুকে সাতক্ষীরা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। একই দিনে সকাল ৯টর দিকে মোটরসাইকেলে করে কলেজে যাওয়া পথে শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের নওয়াবেকী- আড়পাঙ্গাশিয়া সড়কের বড়কুপট এলাকার মেসার্স জামান ব্রিকসের সামনে মাটিবাহী হল্যাগাড়ী মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের জেলেখালি এলাকার ভোলানাথ আউলিয়ার ছেলে ও নওয়াবেকী ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণীর মানবিক বিভাগের ছাত্র পলাশ আউলিয়া (১৮) নিহত হয়।

২৫ জুন মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কালিগঞ্জ উপজেলার জাহাজঘাটা নামক এলাকায় পালসার মটর সাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মুড়াগাছা গ্রামের আব্দুল আজিজ গাজীর ছেলে এবাদুল ইসলাম (২২) নিহত হয়। এতে মোটরসাইকেলে থাকা অপর আরোহী একই গ্রামের নুর ইসলাম গাজীর ছেলে নাজমুল ইসলাম গাজী (২১) গুরুতর আহত হয়।

২৫জুন মঙ্গলবার যশোর-সাতক্ষীরা মহা সড়কে কলারোয়া উপজেলা পৌর সদরের ইউরেকা তেল পাম্পের সামনে চলন্ত একটি ইজিবাইকের পিছনে যাত্রীবাহি বাস (যশোর-জ-১১-০১০২) জোরে ধাক্কা দেয় এতে ঝাপাঘাট এলাকার কামরুল ইসলামের স্ত্রী মিনু (৩৫), তার শিশু ছেলে রোহান (২বছর), বোয়ালিয়া গ্রামের মুজিবার সরদারের ছেলে ইজিবাইক চালক রাজ্জাক (২৩), পূর্ব ভাদিয়ালী গ্রামের গড়াল গাজীর স্ত্রী ফাতেমা খাতুন (৫০), কেরালকাতা গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে ইসমাইল হোসেন (৫০) সহ পাঁচ জন আহত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *