নিউজ ডেস্ক : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৫ আগস্ট রাতে রাজাকার আলবদর ও পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের সামনে কপোতাক্ষোর পাড়ে বধ্যভুমিতে নাম জানা ১৮জনসহ না জানা আরও অনেকে নীরিহ মানুষকে হত্যা করে। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পরে উক্ত বধ্যভুমিতে নিহতদের স্মরণে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়নি।
তালা উপজেলাসহ জালালপুর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির এই বধ্যভুমিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবী জানিয়ে আসছিলেন। ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির কমিটির দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান সরদার রফিকুল ইসলাম ইউনিয়ন পরিষদে একটি রেজুলেশন করেন। সাথে সাথে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পতাকা ষ্ট্যান্ডার্ডের পাশে একটি স্মৃতি ফলক নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে সরকারিভাবে ২৫ মার্চ এই স্মৃতি ফলক বেদিতে পুস্পস্থাবক অর্পন করা হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারের বধ্যভূমি সূমহ সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ (২য় পর্যায়ে ) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে কপোতাক্ষ পাড়ে দীর্ঘদিন অরক্ষিত গণকবরটি সংরক্ষনে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে।
তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দীর্ঘদিন অরক্ষিত বধ্যভূমিটি স্মৃতিস্তম্ভতে রুপ নেয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আনন্দ ফিরে এসেছে। প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স শফি এন্টারপ্রাইজ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজটি বাস্তবায়ন করছেন। সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর এ বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করনে। বর্তমানে কাজের ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির নেতৃবৃন্দ জানান, ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট রাতে তালা উপজেলার জালালপুর গ্রামে রাজাকার আলবদরের বুলেটে নিহত হন শ্রীমন্তকাটি গ্রামের শহীদ আব্দুল বারী (২৮), কৃষ্ণকাটি গ্রামের বদির শেখ (৩২), জালালপুর গ্রামের অন্নদা সেন (৮৫), আছিয়া বিবি (৪৫), অনিমা দাশ (২৬), দিপংকর দাশ (১), দুলাল চন্দ্র বর্ধন (১৫), হরিপদ ঘোষ (৭৫), অধীর চন্দ্র ঘোষ (৬৫), সাহেব সেন (৩০), উমাপদ দত্ত (৪০), বাদল প্রমানিক (৫০), অশোক প্রমানিক (৩৫), মোবারক মোড়ল (২০)সহ নাম না জানা আরও অনেকেই।
স্থানীয় বাসিন্দা সাতক্ষীরার জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি উপাধ্যক্ষ মহিবুল্লাহ মোড়ল জানান, ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট রাতে তার বাবা আব্দুল বারীসহ ১৮ জন শহীদ হন। কিন্তু স্বাধীনতার পরে জালালপুর ইউনিয়নে বধ্যভূমিতে ঐ গণহত্যার কোন স্মৃতি সংরক্ষণ করা হয়নি। দীর্ঘদিন বধ্যভুমিটি অবহেলিত ছিলো। বর্তমানে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে।
জালালপুর বধ্যভূমি স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির আহবায়ক যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মোড়ল আব্দুর রশিদ জানান, ১৯৭১ সালে ১৮ জন শহীদের মধ্যে অনিমা দাশ নামে একজন গৃহবধূ মারা যান। তার সাথে থাকা এক বছরের শিশু দিপংকর দাশ হানাদারদের গুলিতে নিহত হয়। কিন্তু কোনো বধ্যভূমি ছিলো না এখানে। দীর্ঘদিন অরক্ষিত থাকা বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ রুপ নেওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আনন্দ ফিরেছে। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ নির্মাণাধীন এ-স্মৃতিস্তম্ভ দেখতে আসছেন।
জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যান এম মফিদুল হক লিটু জানান, দীর্ঘদিন ইউনিয়ন পরিষদের সামনে একটি ছোট স্মৃতিস্তম্ভ ছিলো। বর্তমানে সরকার নতুন করে বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করায় এলাকার মানুষ খুবই খুশি হয়েছেন। তবে এখানে সরকারি সম্পত্তি থাকায় একটি দর্শনীয় পার্ক হলে আরও মানুষের সমাগম বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইকবাল হোসেন জানান, কাজটি দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এতে স্থানীয় এলাকাবাসিসহ মুক্তিযোদ্ধারা খুশি হয়েছেন।