সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব নিয়ে যুগান্তকারী রায় প্রদান করলেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান।
ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দিয়ে আগামী ৪০ দিনের মধ্যে নির্বাচিত কার্যকরী কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। যুগান্তকারী এই রায়ে অবসান হলো সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব নিয়ে ৩১/২০২০ নং মিস আপীল ১/২ নং রেসপনডেন্ট এর বিরুদ্ধে দোতরফা সূত্রে এবং অন্যান্য রেসপনডেন্ট এর বিরুদ্ধে এক তরফা ২৩/২০২০ নং মামলার প্রদত্ত ০৭/০৯/২০২০ইং তারিখের তর্কিত আদেশ পরিবর্তিত আকারে বহাল ও বলবৎ রাখা হলো এবং আদেশের গর্ভের নির্দেশনা অনুযায়ী “ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি” আদেশ প্রাপ্তির ৪০ দিনের মধ্যে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের জন্য একটি নব নির্বাচিত কার্যকরী কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন সম্পন্ন করবেন উল্লেখিত আদেশ সহ প্রেসক্লাবকে গতিশীল করা এবং কোন অবস্থাতেই প্রেসক্লাবের গতি রুদ্ধ করা সমীচিন নয়, যুগান্তকারী সময়োপযোগী এবং গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষন সম্বলিত আদেশ প্রদান করেছেন বিজ্ঞ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান।
আদালত পর্যবেক্ষনে উক্ত আদেশে বলেছেন সংবাদপত্র রাষ্ট্রের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এবং প্রেসক্লাব একটি সম্মানজনক প্রতিষ্ঠান। কোন ভাবেই এটির গতিরুদ্ধ করা সমীচীন নয়। প্রেসক্লাবের ভোটার তালিকা বিষয়ে যেহেতু উভয় পক্ষের অবস্থান পরস্পর বিরোধী এবং যেহেতু ইতোপূর্বেকার ভোটার তালিকানুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি সেহেতু একটি গ্রহনযোগ্য ভোটার তালিকা প্রস্তুত হওয়া এবং তদঅনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়নি। তারই প্রেক্ষিতে একটি গ্রহনযোগ্য ভোটার তালিকা প্রস্তুত হওয়া এবং তদনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়া জনস্বার্থেই জরুরী।
এক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন আবশ্যক। নতুবা নির্বাচনে সকল পক্ষের উৎসাহ বাঁধাগ্রস্থ হবে। উক্ত কমিটির প্রধান থাকবেন সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার এবং সদস্য হিসাবে জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরার একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি, এনএসআই সাতক্ষীরার একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি, ডিজিএফআই সাতক্ষীরার একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাতক্ষীরা এবং সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ মমতাজ আহমেদ।
উক্ত কমিটি নতুন করে প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সদস্য পদ প্রাপ্তির আবেদন এবং সে সংক্রান্ত আপত্তি (যদি থাকে) গ্রহন পূর্বক যাচাই বাছাই সাপেক্ষে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সদস্যপদ পুনঃনির্ধারন করবেন এবং তদঅনুযায়ী নির্বাচন পরিচালার ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। অত্র কমিটি নিশ্চিত করবেন যে, সাংবাদিকতার সাথে প্রকৃতপক্ষে জড়িত ব্যক্তিরাই যেন প্রেসক্লাবের সদস্য পদ প্রাপ্ত হয়।
তবে অত্র কমিটির কোন সদস্য পরবর্তি নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে ভোটার তালিকা প্রণয়ন কাজে অংশ গ্রহন করলেও নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে অংশ গ্রহন করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে তাদের (সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব) মনোনীত বাকী সদস্য নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে অন্তুর্ভূক্ত হবেন। পর্যবেক্ষনে আদালত আরও বলেছেন এই মামলার সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে রেসপনডেন্ট পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীর আরগুমেন্ট এর ফোর্সকে উপেক্ষা করা সমীচীন নয়, বিজ্ঞ বিচারিক আদালত প্রয়োগ যোগ্য ও বস্তুনিষ্ঠ অভিমতের উপর নির্ভর করে আদেশ প্রদান করে নীতিগত ভাবে তথ্য ও আইনগত কোন ভুল করেননি। ফলশ্রুতিতে এই মিস আপীল নামঞ্জুরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।
বিজ্ঞ আদালতের রায়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সদস্যদের মাঝে বিশেষ উচ্ছাস এবং প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। সদস্যদের অভিমত বিজ্ঞ আদালতের আদেশে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সত্যিকার অর্থে গতিশীল হওয়ার ক্ষেত্র বিস্তৃত হয়েছে। রায়ে প্রেসক্লাবের বর্তমান গঠনতন্ত্র মোতাবেক সদস্যপদ পুনঃনির্ধারন এবং নির্বাচন পরিচালনার বিষয়টি উল্লেখ থাকায় বিবাদমান উভয় পক্ষই প্রকৃতপক্ষে যুগান্তকারী, গ্রহনযোগ্য এবং প্রেসক্লাবের বর্তমান গঠনতন্ত্রের সাথে রায় সঙ্গতিপুর্ন বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
প্রেসক্লাবের সদস্যরা বিজ্ঞ আদালতের আদেশে ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করার আদেশ সহ প্রেসক্লাবকে গতিশীল এবং কোন ভাবেই গতিরুদ্ধ করা সমীচিন নয়- এমন পর্যবেক্ষন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবকে জেলার বিশ লক্ষাধিক মানুষের আস্থা, বিশ্বাস এবং নির্ভরতার সাথে একাত্বতার বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছে। প্রেসক্লাবের উভয়পক্ষের পরস্পর বিরোধী অবস্থান, কমিটি পাল্টা কমিটি সহ এক ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
আদালতের রায়ে উক্ত অচলাবস্থার অবসান সহ প্রেসক্লাব প্রকৃত সাংবাদিকদের সম্পৃক্ততায় প্রকৃত সম্মানজনক প্রতিষ্ঠানে ও সাধারণ মানুষের অস্থায় পরিনত হবে এমন মন্তব্য কেবল প্রেসক্লাবের সদস্যদের নয় সাতক্ষীরার জনগোষ্ঠীর।