অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের করোনা রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে আর্তমানবতার সেবায় আরো বেশি এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, করোনা টেস্ট নিয়ে গ্রামীণ জনগণের মনে যে ভীতি সেটা দূর করতে এবং টিকা প্রদানে উৎসাহিত করতে কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টেস্ট করলে (করোনা) তার যে চিকিৎসাটা হবে, সে যে ভাল হবে বা সে অন্য কাউকে সংক্রমিত করবে না এবং নিজে বাঁচবে অন্যকেও বাঁচাবে- এই ধারণাটা মানুষের মধ্যে দিতে হবে। এটা আমাদের নেতা-কর্মীরা যে যেখানে আছে তাদের বলে দেয়া যাতে সাধারণ মানুষের কাছে বার্তাটা পৌঁছে যায়।’
প্রধানমন্ত্রী আজ বিকেলে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। সংগঠনের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ স্বাগত বক্তৃতা করেন এবং সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের মধ্যে টিকা নিয়ে অতীতে নানারকম ভীতি ছিল। টিকা নিলে কি না কি হয়ে যাবে। এখন সবাই সে ভীতি কাটালেও একটা সমস্যা এখনও আছে যেটা আমি মাঝে মাঝে খবর পাই, কেউ (করোনা) পরীক্ষা করাতে চায় না। তাদের ধারনা টেস্ট করলে করোনা আছে শুনলে সে অচ্ছুত হয়ে যাবে তার সঙ্গে কেউ মিশবে না, এই ভয়টা করে। কিন্তু এটাতো ঠিক নয়।
প্রধানমন্ত্রী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা যেহেতু মানবতার সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছ। এটা অব্যাহত রাখবে। মনে রাখবে, এটাই আমাদের আদর্শ এটাই আমাদের কাজ। এটাই আমাদের জাতির পিতা শিখিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডব্লুওএইচও’র নির্দেশনা অনুযায়ী শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ যাতে টিকা নিতে পারে তার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। ভ্যাকসিন যেখানে যা পাওয়া যাচ্ছে আমরা ক্রয় করছি। তারজন্য আলাদা টাকাও রাখা আছে। প্রয়োজনে আরো টাকাও আমরা খরচ করবো।
ইতোমধ্যে আমাদের ১ কোটি ৮৭ লাখের মত ভ্যাকসিন দেয়া হয়ে গেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, একেবারে গ্রাম পর্যায়ে ভ্যাকসিন দেয়ার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। আইডি কার্ড দেখিয়ে সরাসরি রেজিস্ট্রেশন করে সেখানেই টিকা নিতে পারবে। সেই ব্যবস্থাও আমরা করছি। তিনি এই ব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের মানুষকে সাহায্য এবং সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই আহ্বান করেছি, আমরা দেখেছি, এই দুঃসময়ে দুর্গত মানুষের পাশে একমাত্র আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাই পাশে আছে। আমাদের প্রতিটি সহযোগী সংগঠন ব্যাপকভাবে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আরো তো দল রয়েছে, দলের তো কোন অভাব নেই। কিন্তু দৃশ্যমান ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদেরকে প্রকৃতভাবে সহযোগিতা করা সেটা আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগ করে যাচ্ছে। যা প্রকৃত অর্থেই জনসেবা, কোন ফটোসেশন নয় বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি বলবো, একটা দেশের মানুষের সেবা করার জন্য যে যে কাজ করা দরকার আমাদের এই সংগঠনটি তা আন্তরিকতার সঙ্গে করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদম রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া থেকে শুরু করে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করা, মানুষের খাদ্য সাহায্য করা, মাস্ক দেয়া, স্যানিটাইজার দেয়াসহ মানুষের পাশে দাঁড়ানো এমনকি মানুষের লাশের দাফন-কাফন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রেই আমি দেখি স্বেচ্ছাসেবক লীগ অত্যন্ত চমৎকার ও সুনির্দিষ্টভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য তিনি সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
শুধু করেনা রোগীদের সেবা নয়, পরিবেশ প্রতিবেশ সুরক্ষায় বৃক্ষরোপনের মত কর্মসূচি বাস্তবায়নেও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা অগ্রণী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী চলতি বর্ষায় সারাদেশে ব্যাপক বৃক্ষরোপন কর্মসূচি অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, সব সঙ্কটে স্বেচ্ছাসেবক লীগ যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, এটা দৃষ্টান্ত। এটা আরও প্রচার হওয়া উচিত। মানবতার যে দৃষ্টান্ত তোমরা উপস্থাপন করেছে, সেটা অব্যাহত রাখতে হবে। এটাই আমাদের আদর্শ, এটাই আমাদের কাজ। আমরা চাই, সারাদেশের মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে। যাতে সে নিজে বাঁচে, অন্যকেও বাঁচাতে সহযোগিতা করতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে দুই ধরনের রাজনীতি আছে। কেউ রাজনীতি করে নিজের ভোগ বিলাস ও অর্থ কামাই করতে। কেউ রাজনীতি করে এর মাধ্যমে মানুষের সেবা করতে। যেটা জাতির পিতা করে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মানুষ এটা অনুধাবন করে সরকার জনগণের সেবক। আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করছি, করে যাব।
দিনটি প্রধানমন্ত্রীর পুত্র এবং তাঁর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫১ তম জন্মদিন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে তাঁর জন্মের সেই কঠিন দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হয়েও কত কষ্ট করে তাকে লেখাপড়ায় উচ্চতর ডিগ্রী নিতে হয়েছে তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিজের কম্পিউটারের হাতে খড়ি এবং এই ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাটিও সজীব ওয়াজেদ জয়ের দেয়া বলেও সবিস্তারে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে বাংলাদেশের কোথাও পাকিস্তানের পতাকা না থেকে জাতির পিতার নির্দেশে বাংলাদেশের পতাকা উড়েছিল।
সেদিন একান্তে জাতির পিতার সঙ্গে কথোপকথনে সন্তান সম্ভাবা এক মাকে তাঁর ছেলে হবে এবং যার জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশে হবে বলেই জাতির পিতা বলেছিলেন। সেই সন্তানের নাম জয়, তিনিই ঠিক করে দেন। আর মুক্তিযুদ্ধকালীন বন্দিদশায় শত কষ্টের মাঝেও জয়ের জন্ম তাঁদের মাঝে সজিবতা এনে দিয়েছিল। তাই, বঙ্গমাতাই জয়ের অপর নাম ‘সজীব’ রাখেন বলেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গত এক বছরের করোনাকালীন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মকান্ড নিয়ে প্রকাশিত একটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন।