চট্টগ্রাম ৯ চৈত্র, (২৩ মার্চ) : টিপু সুলতান, তিতুমীর, ক্ষুদিরাম, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী, আবুল কালাম আজাদ প্রত্যেকে বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে, মুক্তির জন্য লড়ায় করেছে, আত্মাহুতি দিয়েছে, জেল জুলুমের শিকার হয়েছে, বিদ্রোহ করেছে এমন কি ফাঁসির কাষ্টে গিয়েছে এটাও সত্য কথা। তারা কি স্বাধীনতা এনে দিতে পেরেছে?
বঙ্গবন্ধুই একমাত্র ব্যক্তি যিনি তিলে তিলে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিরস্ত্র বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করে, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন স্বাধীনতাকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন।
আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সাতদিন ব্যাপী (১৭ মার্চ থেকে ২৩ মার্চ) মুক্তির উৎসব ও সুবর্ণজয়ন্তী মেলা-২০২২ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে আলোচানা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার কথা বলতে গিয়ে এসব কথা বলেন।
চসিক মেয়র বলেন, শুধু বাঙালির মুক্তির জন্য জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান স্বল্প জীবনের চৌদ্দটা বছর কারাগারে কাটিয়েছিল। তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। কোন লোভ লালসা তাকে স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোষ করাতে পারেনি। ফাঁসির কাষ্টে দাঁড়িয়েও বলেছিলেন আমি বাঙালি। আমার লাশটা বাংলায় পৌঁছে দিও। যার বদৌলতে আমরা আজকে স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত।
মেয়র আরো বলেন, বাঙালি জাতির কোন অস্তিত্ত্ব ছিল না, পরিচয় ছিল না। আমাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি, আমাদের সভ্যতা , ইতিহাস ও ঐতিহ্য সকল কিছুকে পাকিস্তানীরা ধূলিসাৎ করে দিয়েছিল। পৃথিবীর একটা জাতি আমাকে দেখিয়ে দাও যারা শুধু মায়ের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য রক্ত দিয়েছে, অত্মাহুতি দিয়েছে। স্বাধীনতার জন্য মানুষ আত্মাহুতি দিয়েছে, বিদ্রোহ করে আত্মাহুতি দিয়েছে কিন্তু মায়ের ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বাঙালি ছাড়া আর কেউ রক্ত দেয়নি।
মেয়র আরো বলেন, একদিন সরকারি প্রচার যন্ত্রে বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ ছিল। রেডিও, টেলিভিশনে, পত্র-পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর নাম প্রচারিত হতো না। কিন্তু ইতিহাসের গতি অপ্রতিরোধ্য। ইতিহাসকে স্বল্প সময়ের জন্য ভিন্ন পথে চালিত করতে পারেন। স্থায়ীভাবে ইতিহাসকে পরিচালিত করা যায় না।
যাদি তা সম্ভব হতো তবে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলাকে এখনো আমরা বলতাম বেইমান। সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যার পর ইংরেজরা দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর প্রচার করেছিল সে লম্পট ছিলেন, অদক্ষ শাসক ছিলেন। কিন্তু পঞ্চাশ বছর পর প্রমাণিত হয়েছে সিরাজউদ্দৌলা বাংলার স্বাধীনতার জন্য আত্মাহুতি দিয়েছিলেন।
মেয়র বলেন, ইতিহাস বঙ্গবন্ধুকে সৃষ্টি করেনি, বঙ্গবন্ধু ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ইতিহাসের সন্তানরা কোনদিন মরে না। কাগজের লেখা ছিড়ে ফেলা যায় কিন্তু হৃদয়ে খচিত নাম ছেড়াও যায় না মুছাও যায় না।
তেমনি বাঙালির হৃদয়ে খচিত হয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর নাম। যতদিন এই বাঙালি থাকবে, পতাকা থাকবে, এই ভূখন্ড থাকবে ততদিন বাঙালির হৃদয়ে তিনি অমর হয়ে থাকবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছরে বাঙালির ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ সন্তান কারণ তিনি আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, অস্তিত্ত্বকে প্রকাশ করে গিয়েছেন, আমাদের বাঙালিত্বকে টিকিয়ে রেখেছেন, এবং বিশ্বে বাঙালিকে জাতি হিসেবে পরিচয় এনে দিয়েছেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে আলোচানা সভায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন এর সভাপতিত্বে আনোয়ার হোসেন বিপিএম (বার) পিপিএম (বার), ডিআইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শ্যামল কুমার নাথ, এস এম রশিদুল হক, পিপিএম (সেবা) পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম সরোয়ার কামাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।