মাহমুদুল হাসান শাওন, দেবহাটা : সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্তের ইছামতি নদী থেকে উদ্ধার হওয়া হাত-পা ও মাথাকাটা সেই লাশটি সদর উপজেলার আলীপুর গ্রামের জমির উদ্দীনের প্রবাসী কন্যা মোসলেমা খাতুনের বলে শনাক্ত হয়েছে।

সোমবার দুপুরে নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় ক্ষত-বিক্ষত লাশটি উদ্ধারের পর ময়না তদন্ত শেষে লাশটি শনাক্ত করেন নিহতের মা সাহিদা খাতুন। নির্যাতন চালিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার পরিচয় লুকাতে পর হাত-পা ও মাথা কেটে ইছামতি নদীতে ভাসিয়ে দিলেও, সাহিদা খাতুন তার মেয়ের পেটে থাকা ছোটবেলার পোড়াদাগ ও পরিহিত পোশাক দেখে মোসলেমার লাশটি শনাক্ত করেন।

সোমবার রাতে দেবহাটা থানায় গিয়ে শনাক্তের পর মেয়ের ক্ষত-বিক্ষত লাশটি বুকে জড়িয়ে সাহিদা খাতুন বলেন, মোসলেমার প্রথম বিয়ে হয় সদর উপজেলার লক্ষীদাড়ী গ্রামে। কিন্তু অকালে তার স্বামী মারা গেলে ভারত থেকে কসমেটিকস জাতীয় ছোটখাটো মালামাল চোরাইভাবে বাংলাদেশে এনে সীমিত ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতো মোসলেমা।

চোরাচালানী কাজের সূত্রে তার পরিচয় ঘটে সদর উপজেলার হাড়দ্দাহ গ্রামের বাবুর আলীর ছেলে রফিকুল ইসলামের সাথে। দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে দুবছর আগে প্রথম স্ত্রী থাকা স্বত্ত্বেও রফিকুল মোসলেমাকে বিয়ে করে। তাদের দেড় বছর বয়সের একটি শিশুপুত্রও আছে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে রফিকুল মোসলেমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করতে থাকে।

একপর্যায়ে রফিকুলকে ডিভোর্স দিয়ে তিনমাস আগে মোসলেমা বিদেশে কাজ করতে যায়। সম্প্রতি এজেন্সীর কাছ থেকে মোসলেমার ফোন নম্বর ম্যানেজ করে রফিকুল মোবাইলে তাকে দেশে ফিরে আসতে চাপপ্রয়োগ করতে থাকে।

এমনকি দেশে ফিরে না আসলে মোসলেমার শিশুপুত্রকে হত্যা করবে বলেও হুমকি দিতে থাকে রফিকুল। এতে ভয় পেয়ে মোসলেমা দেশে ফিরে আসতে সম্মতি দেয়। ৩/৪ দিন মোসলেমা বিদেশ থেকে ঢাকায় পৌঁছায় । মোসলেমার আগমনের কয়েকদিন আগে থেকেই ঢাকায় অবস্থান করছিল রফিকুল। বিমানবন্দর থেকে মোসলেমাকে নিয়ে শনিবার (২৬ জুন) রফিকুল হাড়দ্দাহ গ্রামে তার বাড়ীতে নিয়ে যায়।

দীর্ঘদিন পর মেয়ের দেশে ফেরার খবর পেয়ে রবিবার মোসলেমার সাথে দেখা করতে তার মা সাহিদা খাতুনসহ পরিবারের সদস্যরা হাড়দ্দাহ গ্রামে রফিকুলে ওই বাড়িতে যান। কিন্তু মোসলেমার সাথে তার পরিবারের লোকজনের দেখাও করতে দেয়নি রফিকুল। তবে বাড়ি ফেরার পর রফিকুল পুনরায় মোসলেমার ওপর শারিরীক নির্যাতন চালিয়েছে বলে স্থানীয়রা সেসময় তার পরিবারকে জানায়। এরপর মেয়েকে না দেখেই রফিকুলের বাড়ি থেকে চলে ফিরে যায় মোসলেমার স্বজনরা।

পরে রাতের যেকোন সময়ে রফিকুল মোসলেমাকে হত্যা করে নৃশংসভাবে তার হাত-পা ও মাথা কেটে লাশটি নদীতে ফেলে দেয় বলে ধারনা নিহতের পরিবারের।

এব্যাপারে দেবহাটা থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, লাশটি উদ্ধারের পর ময়না তদন্ত শেষে সদর উপজেলার আলিপুর গ্রামের জমিরউদ্দীনের স্ত্রী সাহিদা খাতুন তার প্রবাসী মেয়ে মোসলেমার লাশ বলে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছেন। পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাদের মেয়ের ছবি, পরিচয়পত্র বা অন্যান্য ডকুমেন্টস বাড়ি থেকে আনতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদসহ সুক্ষভাবে ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান ওসি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *