বিশেষ প্রতিনিধি : সারা দেশের ন্যায় সাতক্ষীরায়ও উৎসবমূখর পরিবেশে খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুয়ার। সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলার স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। শিক্ষকরা ফুল দিয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয়।
শিক্ষার্থীরাও তাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরতে পেরে আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করে। রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরার প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়।
৫৪৩ দিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলাকে স্বাগত জানায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
দীর্ঘ ১৮ মাস পর চলমান করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ অনাকাঙ্ক্ষিত বিরতির অবসান ঘটেছে। অপেক্ষার পালা শেষে প্রাণহীন শিক্ষাঙ্গনে আবার প্রাণের ছোঁয়া লেগেছে।
দীর্ঘদিন পর সশরীরে ক্লাসে বসার আনন্দ দেখা যায় শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে। কর্তৃপক্ষও সমউচ্ছ্বাসে তাদের বরণ করেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে একে একে সবাইকে ঢোকানো হয়েছে শ্রেণিকক্ষে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তবে দীর্ঘদিন পর স্কুল খুললেও সহপাঠীদের সঙ্গে আগের সেই হইহুল্লোড় নেই। সামনের বেঞ্চ ধরা নিয়ে নেই হুড়োহুড়িও। শিক্ষকদের নির্দেশনা মেনে ছাত্রীরা দূরত্ব বজায় রেখে তারা স্কুলে প্রবেশ করেছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ডিবি গার্লস হাইস্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসছে সারিবদ্ধভাবে। স্কুলের প্রধান গেট পার হয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, বেলুন, জরি কাগজ দিয়ে আরো একটি সুসজ্জিত গেট। সেখানে দাঁড়িয়ে একজন শিক্ষককে তাপ মাপক যন্ত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায়।
প্রধান গেটের গায়ে সাঁটানো হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি সম্বলিত ব্যানার। বেলুনের গেট পেরিয়ে ভিতরে দেখা যায়, স্কুলের শিক্ষার্থীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নিচ্ছেন শিক্ষকরা। আরও একটু সামনে অগ্রসর হলে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের হাত ধৌত করার প্রয়োজনীয় উপকরণ।
সেখান থেকে হাত ধুয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে প্রবেশ করতে দেখা যায়। ১৮ মাস পর ক্লাসরুমে এদিন শিক্ষকরা বিনোদনমূলক কার্যক্রম ও পাঠ্যসূচি নিয়ে আলোচনা করেন। দেড় বছর আপন ক্লাসে বসতে পেরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসে ঢেউ বয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের বসানো হয়ে নিরাপদ সামাজিক দূরত্বে। বাড়ানো হয় ক্লাসরুমের সংখ্যাও।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ এমাদুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রথম দিনেই কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী হাজির হয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অভিভাবকের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করা হয়। সরকারের দেওয়া শর্ত পূর্ণভাবে মেনেই শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নেওয়া হয়েছে। প্রথম দিনটি অত্যন্ত আনন্দময় পরিবেশে উপভোগ করেছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষক ও অভিভাবকদের মাঝেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তবে একই সঙ্গে করোনার সংক্রমণ ফের বাড়ার শঙ্কায় তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও রয়েছে।
এদিকে শহরের বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে সকাল থেকেই ভিড় করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পর ক্লাস শুরু হওয়ার প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর সঙ্গেই এসেছেন অভিভাবকরাও।
মূলত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে উদ্বিগ্নতার কথা জানান তারা। তবে সংশ্লিষ্ট স্কুল ও কলেজ প্রশাসন বলছে, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনেই ক্লাস শুরু করা হচ্ছে। আগে যে সব শ্রেণিকক্ষে একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থী বসে ক্লাস করত সেখানে এখন ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
শ্রেণিকক্ষের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখেই ছিল স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি। মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিশ্চিত করে এবং বডি থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপার পরই প্রবেশ করতে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের।
অন্যদিকে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে কি-না, তা পরিদর্শন করতে শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাগণ গত তিনদিন ধরে মাঠে তদারকি করছেন বলে জানান সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার এসএম আব্দুল্লাহ আল মামুন।