ক্রিকেট ডেস্ক : ফরচুন বরিশালের নাগালে থাকা ম্যাচ দারুণ বোলিংয়ে জিতে নিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ১ রানের নাটকীয় জয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) শিরোপা জিতল ইমরুল কায়েসের দল। আর তীরে এসে তরী ডুবল সাকিব আল হাসানের দলের।
৫ উইকেট হাতে রেখে ১৮ বলে ১৮ রানের প্রয়োজন ছিল বরিশালের। প্রথম শিরোপার ঘরে তুলতে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সুনিল নারিনের এক ওভারে বদলে গেল ম্যাচের দৃশ্যপট। মোস্তাফিজ-শহিদুলরাও দারুণ বোলিংয়ে জমিয়ে তুললেন শিরোপার লড়াই।
কুমিল্লা: ১৫১/৯ (২০ ওভার), বরিশাল: ১৫০/৮ (২০ ওভার)
নারিন ১৮তম ওভারের প্রথম বলে ফিরিয়ে দেন ডোয়াইন ব্রাভোকে। ৬ বলে দেন মাত্র ২ রান। ১২ বলে ১৬ রানের সমীকরণ তখন বরিশালের। মোস্তাফিজের প্রথম বলে রান নিতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। কুমিল্লার দিকে হেলতে থাকে ম্যাচ। পরের বলে শান্ত এলবিডব্লিউ হন এ বাঁহাতি পেসারের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে। ওই ওভারে আসে ৬ রান।
শেষ ওভারে ১০ রানের প্রয়োজন পড়ে বরিশালের। শহীদুলের করা ওভারের প্রথম বলে রান নিতে পারেননি তৌহিদ হৃদয়। পরের বলে ১ রান স্ট্রাইক দেন মুজিব উর রহমানকে। আফগান ব্যাটারও ১ রান নিয়ে প্রান্ত বদল করে। ৩ বলে ৮ রান তখন ওয়াইড করেন শহিদুল। চতুর্থ বলে ২ রান নেন হৃদয়। ২ বলে যখন ৫ রান দূরে বরিশাল তখন হৃদয়ের ক্যাচ ছেড়ে দেন তানভির। শেষ বলে দরকার হয় ৩ রান। বল কাভারে ঢেলে ১ রানের বেশি নিতে পারেননি হদয়। ১ রানের হারের আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়ে বরিশাল।
আসরের সেরা দুটি দলই ফাইনালের মঞ্চে। শিরোপার লড়াই হয়েছে রোমাঞ্চকর। বিশেষ করে শেষের তিনটি ওভার। বিফলে গেছে সৈকত আলীর দুর্দান্ত ফিফটি। ১৫২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা মুনিম শাহরিয়ার দ্রুতই ফেরেন সাজঘরে। টুর্নামেন্টে দারুণ ধারাবাহিক হলেও ফাইনালে থাকেন নিষ্প্রভ। ৭ বল খেলেও পাননি রানের দেখা। ইনিসের দ্বিতীয় ওভারে মুনিমকে (০) শহিদুল ইসলাম। তিনে নেমে ক্রিস গেইলকে দর্শক বানিয়ে ঝড় তোলেন সৈকত আলী। পাওয়ার প্লে-তে বরিশাল ৫১ রান তুলে নেয় এক উইকেট খরচায়।।
ফাইনালের আগে মাত্র তিন ম্যাচ খেলা সৈকতকে একাদশে নেয়া জিয়াউর রহমানের জায়গায়। গেইল দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই ফিফটি তুলে নেন সৈকত। জুটিতে ৫০ রানের মধ্যে সৈকতেরই ৪৭। ২৬ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন সৈকত। এ ডানহাতির রান যখন ৫৫, গেইলের তখন ৫। জয়ের পথ সহজ করে দিয়ে থামেন সৈকত। ৩৪ বলে ৫৮ রানের ইনিংসটি সাজান ১১ চার ও একটি ছয়ে।
বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলামের লেস্থ বলে লং অনে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দেন। ৯.৪ ওভারে বরিশালের সংগ্রহ তখন ২ উইকেটে ৭৯। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আসে ৭৪ রান। সৈকত আউট হওয়ার প্রথম বাউন্ডার মারেন গেইল। একাদশতম ওভারে মইল আলীকে ছক্কা মেরে খোলস খোলেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং দানব। দলের রান একশ পেরোনো পর নারিনের বলে এলবিডব্লিউ হন। ৩১ দুই ছক্কা ও এক চারে করেন ৩৩ রান।
বলের সঙ্গে রানের ব্যবধান কমে আসার পরও ম্যাচ জিততে পারেনি বরিশাল। সোহান ১৪, সাকিব ৭, শান্ত ১২ রান করে ফেরেন। শেষটা জুড়েই দেখা যায় নাটকীয়তা। ফাইনাল হয়েছে ফাইনালের মতোই। তীরে এসে তরী না ডোবালে নতুন চ্যাম্পিয়ন পেত বিপিএল। কুমিল্লা তৃতীয়বার জিতল বিপিএল শিরোপা।
বিপিএল রোল অব অনার
২০১২: চ্যাম্পিয়ন-ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স, রানার্সআপ-বরিশাল বার্নার্স
২০১৩: চ্যাম্পিয়ন-ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স, রানার্সআপ-চিটাগং কিংস
২০১৫: চ্যাম্পিয়ন-কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, রানার্সআপ-বরিশাল বুলস
২০১৬: চ্যাম্পিয়ন-ঢাকা ডায়নামাইটস, রানার্সআপ-রাজশাহী কিংস
২০১৭: চ্যাম্পিয়ন-রংপুর রাইডার্স, রানার্সআপ-ঢাকা ডায়নামাইটস
২০১৯: চ্যাম্পিয়ন-কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, রানার্সআপ-ঢাকা ডায়নামাইটস
২০২০: চ্যাম্পিয়ন-রাজশাহী রয়্যালস, রানার্সআপ-খুলনা টাইটানস
২০২২: চ্যাম্পিয়ন-কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, রানার্সআপ-ফরচুন বরিশাল
সুনীল নারিনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত শুরু পেয়েও মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় বড় পুঁজি পায়নি কুমিল্লা। ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রানে থামে ইমরুল কায়েসের দল।
বিকেলে সাড়ে পাঁচটায় শুরু হওয়া ম্যাচে টস জিতে শুরুতে ব্যাটিং নেন ইমরুল। নারিনের ঝড়ো ফিফটিতে স্বপ্নের মতো শুরু পেয়েছিল তার দল। ২.৫ ওভারে ৪০ রান তুলে ফেলেন নারিন ও লিটন দাস। বিশাল সংগ্রহের আশা জাগিয়ে কুমিল্লা থামে দেড়শ পেরিয়ে।
বরিশালের হয়ে প্রথম আঘাত হানেন বরিশাল অধিনায়ক সাকিব। ৪ রানে থাকা লিটনকে বোল্ড করেন। ২১ বলে ফিফটি তুলে নারিন আউট হন মেহেদী হাসান রানার বলে। ৫টি করে চার-ছয়ে ২৩ বলে থামেন ৫৭ করে।
৬৯ রানে ২ উইকেট হারানো কুমিল্লা পরের ১৬ রান তুলতে হারায় ৪ উইকেট। ব্যর্থ হয়েছেন জয়, ফ্যাফ ডু প্লেসিস, ইমরুল কায়েস ও আরিফুল হকরা। চারজনের মধ্যে কেবল ইমরুলই পৌঁছাতে পেরেছেন দুই অঙ্কে।
উইকেটের অন্যপ্রান্তে আসা যাওয়ার মিছিল চললেও একপাশ আগলে রাখেন মঈন আলি। সপ্তম উইকেটে আবু হায়দার রনিকে নিয়ে গড়েন ৬৪ রানের জুটি।
শেষ ওভারে রান আউট হওয়ার আগে মঈন করেছেন ৩৮ রান। ২৭ বলে ১৯ রান করে রনি আউট হন শফিকুল ইসলামের বলে। বরিশালের হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নিয়েছেন শফিকুল ও মুজিব উর রহমান। একটি করে উইকেট পেয়েছেন সাকিব, ব্রাভো ও রানা।