নাজমুল হক : দেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় জেকে বসেছে সিন্ডিকেট। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই মুদ্রা স্ফিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও বাংলাদেশ এর থেকে বের হতে পারছেনা। ডিম, লবন, আলু, ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্য ইসিন্ডিকেটের দখলে। সরকারও ভাঙ্গতে পারছেনা সিন্ডিকেট।
ফলে দ্রব্যমূল্যের যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা মানুষের প্রধান মৌলিক বিষয়। মানুষ অন্ন ছাড়া একটি দিনও চলতে পারেনা। বস্ত্র-বাসস্থান প্রতিদিনই প্রয়োজন কিন্তু সেটা এককালীন ক্রয় করলেও চলে। চিকিৎসা ছাড়াও মানুষ স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকতে পারেনা। আমাদের দেশের মানুষের প্রধান সমস্যা হচ্ছে খাদ্য নিয়ে।
সিন্ডিকেট, কালোবাজারী, মজুদদারী কারণে খাদ্য দ্রব্য এখন মানুষের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে বাজারে গেলেও ব্যাগভর্তি পন্য ঘরে আসছেনা। কিছু মুনাফা ভোগী মজুদদারীর কারণে নিত্য পন্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, বাজার থেকে রাতারাতি গায়েব হচ্ছে পন্যদ্রব্য। অথচ বিভিন্ন সংস্থার অভিযানে পাওয়া যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ পন্য দ্রব্য।
অসাধু সিন্ডিকেট, ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফায় বিভিন্ন সময়ের মতো এবার মানুষ আস্তা হারিয়েছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু কেন বারবার এমনটি হচ্ছে? সরকার-সাধারণ মানুষ কি সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়? দোকানে দোকানে অভিযান চালানো হলেও কেন গুদামে গুদামে অভিযান চালানো হচ্ছেনা?
পন্যদ্রব্য সঙ্গে সম্পর্কিত তিন শ্রেণি; আমদানীকারক বা কৃষক, ভোক্তা ও ব্যবসায়ী। কৃষক-ভোক্তাদের নেই কোনো জোটবদ্ধতা। কিন্তু ব্যবসায়ী মধ্যস্বত্ব ভোগীরা জোটবদ্ধ এবং তাঁরা শক্তিশালী। বিরাজমান অর্থনৈতিক এ অবস্থায় দেশের কৃষক এবং নিম্ন আয়ের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল থেকে।
উৎপাদকের বিক্রয়মূল্য এবং ভোক্তা পর্যায়ের ক্রয়মূল্যের মধ্যে এই বিশাল পার্থক্যের কারণ মজুদদারি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি। এর ফলে সুযোগ নিচ্ছেন পাইকারি বিক্রেতা, আড়তদার, খুচরা বিক্রেতা। অথচ যে কৃষক রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে উৎপাদন করছেন, সেই কৃষক পাচ্ছেননা দাম।
পক্ষান্তরে শুধু কারসাজি করে, মানুষকে জিম্মি করে, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অস্বাভাবিক মুনাফা করছেন মধ্যস্বত্ব ভোগীরা। সরকারও অনেক সময় অসহায়ত্ব দেখাচ্ছে কিন্তু কেন? তাহলে এদের রুখবে কে?
বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবি তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য বিক্রি করছে। টিসিবি তো জেলা ও উপজেলা শহরে দু’একটি নির্ধারিত স্থানে বিক্রি হয় স্বল্প সময়ের জন্য। কিন্তু গ্রামের নিম্নবিত্ত, মধ্য বিত্ততাদের কিহবে? নাকি নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা গ্রামে বাস করে বলে তাদের কম দামে টিসিবি’র পন্য পাওয়ার অধিকার নেই? দীর্ঘ লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে তেল- চাল কিনতেপারছে ১৬ কোটি মানুষের কত জন?
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(১)-এ ধারায় বলা হয়েছে, ‘মজুদদারি অথবা কালোবাজারের কারবারের অপরাধে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা ১৪ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন।
কিন্তু আইনে কত জনকে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে কাজ করছে, কিন্তু দেশের সব সিন্ডিকেট কি ঢাকা কেন্দ্রিক? টিসিবিকে কার্যকর করে একটি প্যারালাল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রেখে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা যায়।
খুঁজে দেখতে হবে পন্যের দাম অস্বাভাবিক হল করণীয় কী? এক্ষেত্রে কারকি দায়-দায়িত্ব? ভোক্তা অধিকার আইন প্রয়োগ করতে হবে কঠোর ভাবে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনে আইনের পরিবর্তন করতে হবে। ভোক্তাদের পকেটকাটা হবে আর সংস্থা গুলোর কর্তাব্যক্তিরা টিভির সামনে মুচকি হেসে চেহারা দেখাবে এটাহতে পারেনা।
বাজারে নজরদারি বাড়ানো এবং সিন্ডিকেট ধারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। দ্রব্যমূল্য আর কতটা উর্ধ্বগতি হলে সরকার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাবে?
লেখক: নাজমুলহক, সাধারণসম্পাদক, স্বপ্নসিঁড়ি, সাতক্ষীরা ০১৭৭২-৮৭৬৭৪৪